পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত
নয়া উদ্যোগ
অভ্যাস বদলের লক্ষ্যে
বর্জনায় উপচে পড়ছে ভ্যাট। জঞ্জাল ছড়িয়ে পড়ছে গলি থেকে রাজপথে। দুর্গন্ধে আশপাশে টেকা দায়। নাকে রুমাল চেপে যাতায়াত করছেন পথচলতি মানুষ। দুর্গন্ধ আর দূষণ নিয়ে নিত্য অভিযোগ জেরবার এলাকাবাসীর। এ ছবি নতুন নয় খাস কলকাতা বা শহরতলি, কোথাওই। সেই ছবিটাই এখন কিছুটা হলেও পাল্টে যাওয়ার আশায় দক্ষিণ দমদম পুর-এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ।
দক্ষিণ দমদম পুর এলাকায় পাড়ার মধ্যে প্রায় সাড়ে তিনশোটি ছোট ছোট ভ্যাট এবং বেশ কিছু সেন্ট্রাল ভ্যাট রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা নিজেদের সুবিধামতো জঞ্জাল ফেলে যেতেন পাড়ার ভ্যাটে। পরে পুরসভার সাফাইকর্মীরা সেই আবর্জনা নিয়ে যেতেন সেন্ট্রাল ভ্যাটে। সেখান থেকে প্রমোদনগর ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। সেন্ট্রাল ভ্যাটে জঞ্জাল নিয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত পাড়ার ভ্যাটে স্তূপীকৃত আবর্জনার দুর্গন্ধ ছিল এলাকাবাসীর মাথাব্যথার কারণ। মাসখানেক হল সেই সমস্যা দূর হয়েছে। কারণ, সম্প্রতি এলাকার বাড়ি বাড়ি থেকে জঞ্জাল সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে দক্ষিণ দমদম পুরসভা। ভেঙে ফেলা হচ্ছে পাড়ার ছোট ভ্যাটগুলি। এতেই আশার আলো দেখছেন এলাকাবাসীরা। স্থানীয় আর এন গুহ রোডের বাসিন্দা তপতী চন্দ যেমন বললেন, “রাস্তায় পড়ে থাকা জঞ্জাল কুকুর-বেড়ালের টানাহ্যাঁচড়ায় আর গাড়ির চাকায় জড়িয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়। বৃষ্টির জল জমলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। কাছাকাছি বাড়িগুলোকে দুর্গন্ধের জন্য দরজা-জানলা বন্ধ করে থাকতে হয়। তবে মাসখানেক ধরে এই পরিস্থিতি খানিকটা বদলেছে।”
নতুন ব্যবস্থায় এই পুর-এলাকার ৩৫টি ওয়ার্ডের প্রতিটি বাড়ি থেকে বাঁশি বাজিয়ে আবর্জনা তুলতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একটি সংস্থাকে। দিনে দু’বার এ ভাবে জঞ্জাল সাফাই করার কথা। পরিকল্পনা-মাফিক সংস্থার নিযুক্ত লোক হাতে-টানা গাড়িতে আবর্জনা তুলে ফেলছেন সেন্ট্রাল ভ্যাটে। সেখান থেকে পুরসভার সাফাইকর্মীদের সাহায্যে সেই আবর্জনা পৌঁছে যাচ্ছে প্রমোদনগর ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। মিষ্টির দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁগুলির যত্রতত্র জঞ্জাল ফেলার প্রবণতা বন্ধ করতে নির্দিষ্ট ডাস্টবিন দিয়েছে পুরসভা। আবর্জনা সাফাইয়ের জন্য তাদের থেকে মাসিক ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা ধার্য করা হচ্ছে। এ দিকে, পাড়ার ভ্যাটের আর কোনও কার্যকারিতা নেই বুঝে পুরসভা থেকে ৩৫০টি ছোট ভ্যাট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই মতো ধীরে ধীরে ভ্যাট ভাঙার কাজও শুরু হয়েছে।
এর পাশাপাশি, দমদম রোডের উপরে দমদম স্টেশন থেকে নাগেরবাজার পর্যন্ত অংশে তিনটি সেন্ট্রাল ভ্যাটের মধ্যে দু’টি তুলে নিয়েছে দক্ষিণ দমদম পুরসভা। একমাত্র সেন্ট্রাল ভ্যাটটি রয়েছে বাগজোলা খালের উপরে। পুরসভার দাবি, বসতি থেকে দূরে খালপাড়ের এই ভ্যাটের জন্য বাসিন্দাদের তেমন সমস্যা হবে না। তা ছাড়া, দেওয়াল উঁচু করে টাইলস্ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে জায়গাটি। পুরসভা সূত্রের খবর, পথচারীদের কথা ভেবে বড় রাস্তা পরিচ্ছন্ন রাখতে সবুজ রঙের লোহার স্ট্যান্ডের উপরে পাঁচশোটি প্লাস্টিকের গারবেজ বক্স বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। এগুলি বসছে দমদম রোড, যশোহর রোড ও লেকটাউন-ভিআইপি এলাকায়। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দমদম রোডে জিটিআরের ভ্যাটটি উঠে গেলেও এখনও আবর্জনা ফেলা হয় সেখানে। তা ছাড়া, বসানোর এক মাসের মধ্যেই প্লাস্টিকের স্ট্যান্ড গারবেজ বক্সের বেশ কয়েকটির বেহাল দশা।
এম সি গার্ডেনের বাসিন্দা শাশ্বত মিত্রের অবশ্য বক্তব্য, “শুধু পুর-সচেতনতা থাকলেই হবে না। বাসিন্দাদেরও সচেতন হতে হবে। বাঁশি বাজিয়ে গাড়ি এলেও এখনও অনেকে সেখানে ময়লা না ফেলে রাস্তায় ফেলেন। ফলে রাস্তা যথারীতি নোংরা হচ্ছে।” এ বিষয়ে আর এক বাসিন্দার দাবি, “জঞ্জালের গাড়ি অনেক সকালে আসে। তখন ঘুম ভাঙে না।” যদিও সংস্থার তরফে বলা হচ্ছে, পরে বেলার দিকেও আর এক বার গাড়ি যায়। বাসিন্দারা অবশ্য অনেকেই বলছেন, পরে যখন গাড়ি আসে, তখন সবাই কাজে বেরিয়ে যান।
পুরসভার জনস্বাস্থ্য বিভাগের চেয়ারম্যান পারিষদ প্রবীর পাল বলেন, “পাড়ার ভ্যাটগুলো ভাঙায় এলাকার কিছু মানুষ অসন্তুষ্ট। অভ্যাস বদলের জন্য কিছু দিন সময় দিয়েছে পুরসভা। এ বার না ভাঙলে ভ্যাটে আবর্জনা ফেলার অভ্যাসটা থেকেই যাবে।” জিটিআরের ভ্যাট সম্পর্কে তিনি বলেন, “ওটা ভ্যাট নয়। দমদম রোডে বসা বাজারের ব্যবসায়ীরাই ময়লা ফেলেন ওখানে। তবে পুরসভার কর্মীরা ওখান থেকে ময়লা তুলে নেন। স্ট্যান্ড গারবেজ বক্স থেকেও প্রতি দিন আবর্জনা খালি করা হয়। সময় লাগলেও ধীরে ধীরে জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজে বাসিন্দাদের সাড়া মিলবে বলে আশা করছি।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.