বিদ্যাসাগর হোম
সরকারি হোমের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে পুলিশই
হুগলির গুড়াপের হোমে গুড়িয়া-কাণ্ডের তদন্তে প্রতি দিনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। এরই মধ্যে রাজ্যের সরকারি, বেসরকারি হোমগুলির হাল-হকিকৎ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য বৃহস্পতিবারই রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। কয়েক বছর আগে মেদিনীপুরের ‘বিদ্যাসাগর বালিকা হোম’ (এটি সরকারি, সমাজকল্যাণ দফতর পরিচালিত) থেকে কয়েক জন আবাসিক তরুণীর অন্তর্ধান নিয়ে সিআইডি তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছে বৃহস্পতিবার। একে গুড়িয়া-কাণ্ড, তায় হাইকোর্টের নির্দেশ---এই প্রেক্ষিতে শুক্রবারই বিদ্যাসাগর হোমে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক দেবকুমার ভট্টাচার্য।
হোম পরিদর্শনে সমাজ কল্যাণ আধিকারিক। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
মেদিনীপুরে রাঙামাটির এই হোমের ‘নিরাপত্তা’ নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলছে খোদ পুলিশই। জানা গিয়েছে, গত ৫ জুন হোমের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দু’জন হোমগার্ড হোমের পুলিশ-ক্যাম্পের ইনচার্জ কার্তিককুমার পুততুণ্ডুর কাছে লিখিত ভাবে গুরুতর অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘আমরা আপনার নির্দেশ অনুযায়ী নাইট-ডিউটি করতে (রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা) গার্লস-হোম চত্বরের মধ্যে যাই। কিন্তু, ফটকে রাত ১২টা পর্যন্ত তালা লাগানো থাকায় চত্বরের ভিতরে ঢুকতেই পারিনি। ১২টার সময়ে নাইট-গার্ড (হোমের নিজস্ব রক্ষী) উঠে দরজা খোলেন এবং গালাগালি করেন’। প্রসঙ্গত, এই হোমে একেবারে সামনে রয়েছে প্রধান ফটক। সেই ফটকেই রয়েছে পুলিশ-ক্যাম্প। তার পরেও একটি ফটক রয়েছে। সেটি পেরিয়ে আবাসনের মূল-চত্বরে ঢোকা যায়। এই দ্বিতীয় ফটকেই ডিউটি করেন হোমের নিজস্ব রক্ষী। তাঁদের খেয়ালখুশি মতো আচরণে রাতে চত্বরের ভিতরে ডিউটি দেওয়া নিয়ে প্রায় প্রতি দিনই সমস্যা হয় বলে অভিযোগ পুলিশের। এ নিয়ে হোমের সুপার ভারতী ঘোষকেও নিখিত ভাবে জানিয়েছেন পুলিশ-ক্যাম্পের ইনচার্জ। সেই অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘(দ্বিতীয় ফটকের) রক্ষীরা কখনও রাত ১২টার মধ্যে, কখনও রাত ১টার মধ্যেই পালায়। এর ফলে পুলিশ-কর্মীরা হোম চত্বরের মধ্যে ডিউটি করতে পারেন না। এই ভাবে যদি ডিউটি চলে তা হলে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়িত্ব পুলিশ-কর্মীদের থাকবে না’।
এই যদি হয় পুলিশেরই পর্যবেক্ষণ, তা হলে বলাই-বাহুল্য নিরাপত্তা কোন অবস্থায়! ২০০৯-এর নভেম্বরে নিরাপত্তার ফাঁক গলেই অন্তর্ধান হয় দু’দফায় ৯ জন আবাসিক তরুণীর। ২০১০-এর মার্চেও ফের ১৬ জনের। তাঁদের কয়েকজনকে পরে খুঁজে পাওয়া গেলেও অনেকেরই আর সন্ধান মেলেনি। তাঁদের কী হলসেটাই সিবিআইকে খতিয়ে দেখতে বলেছে হাইকোর্ট। কিন্তু নিরাপত্তার হাল ফেরাতে হোম-কর্তৃপক্ষ এত দিনেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেননি বলেই অভিযোগ। এমনিতে হোমের নিজস্ব ৩ জন নৈশপ্রহরী রয়েছে। আর রয়েছে একটি পুলিশ-ক্যাম্প। ওই ক্যাম্পে সব মিলিয়ে ৮ জন থাকেন। রোটেশনে ডিউটি করেন। নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে পুলিশ-ক্যাম্পের ইনচার্জ প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে নারাজ। আর হোমের সুপার ভারতী ঘোষকে শুক্রবার ফোন করা হলে তিনি বলেন, “আমি বাইরে আছি। কিছু বলতে পারব না।”
পশ্চিম মেদিনীপুরে সব মিলিয়ে ৯টি হোম রয়েছে। এর মধ্যে মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর হোমটিই সরকারি। এখানে ৪২৫ জনের থাকার বন্দোবস্ত রয়েছে। তবে এখন ২১৮ জন রয়েছেন। মূলত, আদালতের নির্দেশেই তরুণীদের এখানে রাখা হয়। যাঁরা অনাথ, তাঁদেরও রাখা হয়। এত জনের হোমে কিন্তু এক জনও স্থায়ী চিকিৎসক নেই! এক জন মাত্র ফার্মাসিস্ট রয়েছেন। খাবারের মান নিয়েও এখানে নানা সময়ে বহু অভিযোগ উঠেছে। জানা গিয়েছে, খাবারের জন্য আবাসিকদের মাথা-পিছু ৭৫০ টাকা বরাদ্দ হয়। অর্থাৎ দৈনিক মাত্র ২৫ টাকায় দুপুর ও রাতের খাবার এবং দু’টো টিফিনের ব্যবস্থা করতে হয়। যা আজকালকার বাজারে কার্যত অসম্ভব বলেই দাবি হোম-পরিচালনায় যুক্ত একাধিক জনের। ফলে, আবাসিকদের আধপেটা খেয়েই থাকতে হয়। হোম-চত্বরে সশস্ত্র মহিলা পুলিশকর্মী মোতায়েন করার জন্য এক সময়ে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছিল সমাজকল্যাণ দফতরের তরফে। কিন্তু এখনও সে ব্যবস্থা হয়নি। বর্তমান পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী অবশ্য মহিলা পুলিশকর্মী মোতায়েনের বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.