গুড়াপের হোম-কাণ্ড |
|
ময়না-তদন্ত কোন পর্যায়ে, না জানিয়ে
বিতর্কে জড়ালেন এনআরএস অধ্যক্ষ
নিজস্ব সংবাদদাতা • আলিপুরদুয়ার ও কলকাতা |
|
গুড়াপের হোমের আবাসিক গুড়িয়ার ময়না-তদন্তের রিপোর্ট শুক্রবারেও হাতে পেল না সিআইডি। কলকাতার এনআরএস হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগে ওই ময়না-তদন্ত হওয়ার কথা। কিন্তু ওই বিভাগের অধিকর্তা রবিন কর্মকারের সঙ্গে এ দিন বহু চেষ্টাতেও যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোন
বন্ধ ছিল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল অধ্যক্ষের মন্তব্য উস্কে দিয়েছে বিতর্ক।
এনআরএসের অধ্যক্ষ প্রদীপ ঘোষ বলেন, “আদৌ গুড়িয়ার ময়না-তদন্ত হয়েছে কি না, হলে কবে হয়েছে, রিপোর্ট আদৌ সিআইডি-র কাছে গিয়েছে কি না ও সব আমার জানার দরকার নেই। জানতেও চাই না। এ সব ফরেন্সিক বিভাগের প্রধান বুঝবেন। আপনারা বলছেন, তিনি মোবাইল বন্ধ করে রেখেছেন। যদি তা-ই হয়, তা হলে বলব, তাঁর মোবাইল বন্ধ করে রাখার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।” রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় যা শুনে বলেন, “গুড়িয়া-কাণ্ডের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে এনআরএসের অধ্যক্ষের এমন মন্তব্যে আমি স্তম্ভিত। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।” আর তদন্তকারী অফিসারদের একাংশ বলছেন, “গুড়িয়ার মৃত্যু আত্মহত্যা না খুন সে ব্যাপারেই তো এখনও নিশ্চিত হওয়া গেল না।”
শুক্রবার দক্ষিণ শহরতলির যাদবপুর এবং সোনারপুরের দু’টি হোমে আশ্রয় পাওয়া গুড়াপের হোমের কয়েক জন মূক-বধির এবং মানসিক ভারসাম্যহীন আবাসিককে জিজ্ঞাসাবাদের পরে (ভিডিও রেকর্ডিং-সহ) তদন্তকারীরা এক রকম নিশ্চিত, আবাসিকদের প্রতি যত্ন নেওয়া হত
না। সকালে ভাতের ফেন জুটত তাঁদের। দুপুর-রাতে পাতলা ডাল আর আলুসেদ্ধ। অধিকাংশ রাতেই খাবার চাইলে মার জুটত।
সিআইডি-র অফিসারেরা দাবি করেন, ওই সব আবাসিককে জিজ্ঞাসাবাদের পরে জানা গিয়েছে, উদয়চাঁদ মাঝেমধ্যেই আবাসিকদের লাঠি দিয়ে মারধর করতেন। মহিলাদের যৌন নিপীড়ন করা হত। নিপীড়নে অভিযোগের মূল তির উদয়চাঁদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ধৃত শ্যামল ঘোষের দিকেই। এ দিন শ্যামলের ছবি দেখানো হয় আবাসিকদের। তাঁরা শ্যামলকে চিনতে পেরেই আকার-ইঙ্গিতে সব বোঝান। মানসিক ভারসাম্যহীন আবাসিকেরা যে হেতু নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করতে পারছেন না, তাই জিজ্ঞাসাবাদের ‘ভিডিও রেকর্ডিং’ আদালতে পেশ করা হবে বলে সিআইডি জানিয়েছে।
এ দিকে, আলিপুরদুয়ার থেকে উদ্ধার গুড়াপের হোমের আবাসিক মামণির দেহে স্থায়ী গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা ‘কপার-টি’ পরানোর বিষয়টি সামনে আসায় সিআইডি মনে করছে, সব আবাসিকেরই স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসার প্রয়োজন। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “আবাসিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসার বিষয়ে আদালতে আর্জি জানাব। কয়েকজন আবাসিক মহিলা গুরুতর অসুস্থ।”
মামণির দেহে ‘কপার-টি’ পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের কাছে তদন্ত দাবি করেছেন আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক ল্যারি বসু। এ দিনই মামণিকে হুগলি জেলা পুলিশের হাতে
তুলে দেয় আলিপুরদুয়ার মহকুমা প্রশাসন। মহকুমাশাসক অমলকান্তি রায় জানান, মামণি শারীরিক ভাবে সুস্থ। উত্তরপাড়া সরকারি হোম থেকে তাঁকে নিতে আসা কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মামণিকে বিশেষজ্ঞদের কাছে নিয়ে গিয়ে কাউন্সেলিং
করাতে হবে। মহকুমাশাসকের কাছ থেকে শাড়ি চেয়ে নেন মামণি। তবে মহকুমাশাসকের দফতরে দাঁড়িয়ে মামণি বলেন, “আমি হোমে যেতে চাই না। আমাকে একা থাকার ব্যবস্থা করে দিন। আমি তো চুরি করিনি। তা হলে আমাকে পুলিশ ধরছে কেন?”
মহকুমাশাসক বলেন, “মামণি জানিয়েছেন, তাঁর ভাল নাম দুর্গা দাস। তিনি নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। বাড়ি নদিয়ার বেথুয়াডহরিতে। প্রায় সাত-আট বছর ধরে তিনি হোমে রয়েছেন। তার বেশি তিনি কিছু বলতে চাননি।” আলিপুরদুয়ার থানায় মামণিকে ধৃত শ্যামল ঘোষের ছবি দেখানো হয়। মামণি বলেন, “এ তো শ্যামলদার মতো দেখতে। শ্যামলদা তো আরও রোগা ছিল।” এর পরেই তিনি চুপ করে যান।
|