পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মানেসরের কারখানায় লক আউট-এর পথেও যেতে পারে মারুতি সুজুকি। সংস্থার চিফ অপারেটিং অফিসার এস ওয়াই সিদ্দিকি আজ জানিয়েছেন, লক-আউটের বিষয়টিও তাঁদের ভাবনায় রয়েছে। তবে তা স্বল্প মেয়াদি হবে। মানেসরের কারখানা চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ার কথা তাঁরা একেবারেই ভাবছেন না। তবে এই কারখানায় কবে উৎপাদন শুরু হবে, তা জানাতে পারেননি কেউই।
কারখানায় শ্রমিক অশান্তির জেরে এক ম্যানেজারের পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনাকে যথেষ্টই গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন কর্তৃপক্ষ। গোলমালের জেরে ইতিমধ্যেই তাদের ছোট গাড়ির নতুন মডেল বাজারে আনা পিছিয়ে দিয়েছে মারুতি। দীপাবলিতে এই গাড়ি বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর শিনজো নাকানিশি জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। তাঁর বক্তব্য, সংস্থার অনেক কর্মীই এখনও সন্ত্রস্ত। তাই মানেসরে কবে উৎপাদন শুরু হবে, তা তিনি বলতে পারছেন না। তবে হরিয়ানার এই কারখানা চিরতরে বন্ধ করা হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন নাকানিশিও। |
ঘটনার সুযোগ নিতে ইতিমধ্যেই আসরে নেমেছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী সপ্তাহে নাকানিশি-সহ সুজুকি কর্তাদের সঙ্গে জাপানে বৈঠকে বসার কথা তাঁর। গুজরাত সরকার সূত্রে খবর, মারুতির পুরো কারখানাই তাঁর রাজ্যে সরিয়ে আনার জন্য সুজুকি কর্তাদের অনুরোধ করতে পারেন মোদী। হরিয়ানার মতো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তাঁর রাজ্যে হবে না বলে সুজুকিকে আশ্বাস দিতে চান মোদী। পশ্চিমবঙ্গে জমি-অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জেরে থমকে গিয়েছিল টাটা মোটরসের ন্যানো গাড়ির কারখানা নির্মাণের প্রক্রিয়া। তখন এই প্রকল্প গুজরাতে সরিয়ে নিয়ে যেতে রতন টাটাকে রাজি করিয়েছিলেন মোদী। এ বার মারুতির পুরো কারখানা নিজের রাজ্যে সরিয়ে আনতে পারলে বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবেন তিনি। গুজরাতে নতুন কারখানা গড়তে অবশ্য আগেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছে মারুতি। মেহসানা জেলায় তাদের জন্য ৭০০ একর জমিও বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। প্রকাশ্যে অবশ্য হরিয়ানার অশান্তির সঙ্গে গুজরাতে মারুতির বিনিয়োগের কোনও সম্পর্ক নেই বলেই দাবি করছে মোদী সরকার। রাজ্যের শিল্প দফতরের প্রধান সচিব মহেশ্বর সাহুর বক্তব্য, “আমরা অন্য কারও ক্ষতি করে শিল্প গড়তে চাই না।” তাঁর কথায়, “শিল্প নিয়ে আমাদের নীতি খুব স্পষ্ট। মারুতি গুজরাতে এসে উৎপাদন বাড়াতে চাইলে স্বাগত।”
মারুতির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, কারখানায় উৎপাদন শুরুর আগে সরকারের তদন্ত-রিপোর্ট হাতে চান কর্তৃপক্ষ। যদি প্রমাণিত হয়, পরিকল্পনা মাফিক এই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটানো হয়েছে, দোষীদের ছেড়ে কথা বলা হবে না। আপাতত আহত কর্মীদের চিকিৎসার বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে সংস্থা।
কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের হাতে নিয়েছে হরিয়ানা পুলিশ। সেখানে প্রায় দেড় হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান গুড়গাঁওয়ের পুলিশ কমিশনার কে কে সিন্ধু। তবে তিনি কারখানার পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খোলেননি। গত কাল এক বিবৃতিতে মারুতি জানিয়েছিল, গোলমালের ঘটনায় ঠিক কতটা ক্ষতি হয়েছে তা এখনও হিসেব করা হয়নি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কারখানার পাশের ছ’টি গ্রামের প্রধানরা যৌথ বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছেন, মারুতি কারখানায় গোলমাল কোনও বড় ষড়যন্ত্রের অঙ্গ।
উৎপাদন বন্ধ থাকলেও ডিলারদের কাছে গাড়ি পাঠানো বন্ধ হয়নি। আজও মানেসরের কারখানা থেকে গাড়ি নিয়ে রওনা হয়েছে কয়েকটি ট্রাক। তবে ডিলাররা আশঙ্কা করছেন, মানেসরের কারখানায় গোলমালের জেরে পশ্চিমবঙ্গ-সহ অনেক রাজ্যেই ক্রেতাদের হাতে গাড়ি তুলে দিতে দেরি হবে।
|
পুড়েছে, মানছেন শীর্ষকর্তা
সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি |
শিনজো নাকানিশি |
মারুতি সুজুকি ভারতে উৎপাদন শুরু করার দিনটি থেকেই নানা ভাবে তার দায়িত্ব পালন করে আসছেন শিনজো নাকানিশি। এখন তিনি সংস্থার সিইও তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর। কিন্তু বুধবার মানেসরের কারখানায় শ্রমিক অশান্তির ঘটনাটিকেই তাঁর কর্মজীবনের সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে চিহ্নিত করেছেন নাকানিশি। জানিয়েছেন, এই ঘটনা যে ভাবে সংস্থার মুখ পুড়িয়েছে, অতীতে তা কখনও ঘটেনি। সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মারুতি সংস্থার সর্বোচ্চ কর্তা বলেন, তাঁরা ঘটনার তদন্তের জন্য প্রশাসনকে সব রকম সাহায্য করছেন। প্রশাসনের তদন্তে কী উঠে আসে সেটা-ও তাঁরা দেখতে চান। যদি প্রমাণ হয়, মানেসরের কারখানায় পরিকল্পিত ভাবে এই অশান্তি ছড়ানো হয়েছে, দোষীদের কিছুতেই ছাড়া হবে না। নাকানিশি বলেন, কয়েক মাস আগের ঘটনার পরে কারখানার নতুন ইউনিয়নকে কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নেয়। শ্রমিকরাও মেনে নেন, বাইরের কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইউনিয়নের সংশ্রব থাকবে না। তার পরেও এমন ঘটনা ঘটায় তিনি বিস্মিত। নাকানিশি বলেন, ইউনিয়নের সঙ্গে ‘বাইরের যোগাযোগ’ প্রমাণ হলে কর্তৃপক্ষের কঠোর হওয়া ছাড়া পথ থাকবে না। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে এই ‘বাইরের যোগাযোগ’-এর বিষয়টিই উঠে আসছে। |