রাশিকৃত বই, আলমারি, বিছানাপত্তর...। নারায়ণশিলা, ইন্দিরা গাঁধীর ছবি, তারাশঙ্কর গ্রন্থাবলি...।
তালকাটোরা রোডের বাসভবন থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনে পাড়ি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে এরা সকলেই। সব বাঁধাছাঁদা শুরু হয়ে গিয়েছে। দেশের হবু ‘ফার্স্ট লেডি’ বলছেন, “যখন দিল্লি এসেছিলাম কিছুই ছিল না। এখন ভাবছি, এত জিনিস কোথায় রাখব!”
বহু বছর ধরে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে, তাঁর ঘরের চেয়ারের পিছনে থাকে প্রয়াত ইন্দিরা গাঁধীর দু’টি ছবি। একটি পরিণত-বয়স্কা রুদ্রাক্ষ পরা ‘প্রিয়দর্শিনী’। অন্যটি কোনও এক এআইসিসি অধিবেশনের প্রণবের কানে কিছু বলছেন ইন্দিরা, মাইক্রোফোন এক হাতে চেপে ধরে সেই কথা শুনছেন যুবক প্রণব। “দু’টি ছবিই নিয়ে যাব রাষ্ট্রপতি ভবনে,” জানাচ্ছেন প্রণববাবু। সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে তাঁর যে দুর্লভ ছবিটি রয়েছে, যাবে সেটিও।
প্রণব-জায়া শুভ্রা বলছেন, “আজ যদি ইন্দিরাজি বেঁচে থাকতেন, খুবই খুশি হতেন।” এতটাই সখ্য ছিল, ইন্দিরা নিয়মিত বিউটি-টিপস দিতেন শুভ্রাকে। “আমাকে চুল বাঁধা তো উনিই শিখিয়েছেন। আমার ঘাড় ছোট বলে ইন্দিরাজি বলতেন, মাথায় চুড়ো করে খোঁপা বাঁধতে।” ইন্দিরা গাঁধীকে নিয়ে প্রণববাবুর লেখা বই ‘চোখের আলোয়’ সম্প্রতি লাস ভেগাস-এর বঙ্গসংস্কৃতি উৎসবে জায়গা করে নিয়েছে বেস্ট সেলার-এর তালিকায়।
রাষ্ট্রপতি ভবনে মোট ৩৪০টি ঘর। কিন্তু আলাদা
কোনও ঠাকুরঘর নেই! নতুন ব্যবস্থা কী হবে? ২২ তারিখ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হওয়ার আগে রাষ্ট্রপতি ভবন সম্পর্কে ‘খোঁজখবর’ নেওয়া শুরু করতেও চান না প্রণব। তাঁর কথায়, “ওখানে গিয়ে দেখতে হবে কোন
ঘরে পুজোর ব্যবস্থা করা যায়।”
১৩ তালকাটোরা রোডের বাড়িটা এমনিতে মুখোপাধ্যায় পরিবারের খুবই প্রিয়। নিয়ম অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি দিল্লিতে একটি বাড়ি রাখতেও পারেন। তালকাটোরার বাড়িটা শেষ পর্যন্ত রেখে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য মনঃস্থির করতে পারেননি প্রণব-জায়া। তবে বাড়িতে মন্ত্রকের যত জিনিস ছিল, ইতিমধ্যেই সব ফেরত দেওয়া হয়ে গিয়েছে। আপাতত শুভ্রার প্রধান চিন্তা, তাঁর হারমোনিয়াম-তানপুুরাটি যাতে নিরাপদে রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছয়। যে সে তানপুরা-হারমোনিয়াম তো নয়! যন্ত্র দু’টি স্বয়ং দিলীপকুমার রায় উপহার দিয়েছিলেন শুভ্রা দেবীকে।
আর এক জনের কথাও আজ খুব মনে পড়ছে শুভ্রার। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছুটা অভিমান, কিছুটা স্নেহ মেশানো এক অনুভূতি। “ওকে আমি নিজের ননদের মতই দেখে এসেছি। আমাদের বাড়ি এসে কত থেকেছে, খেয়েছে। রাজ্যে ভোটের আগেও তো রাত বারোটা পর্যন্ত এখানে ছিল।” মধ্যবর্তী সময়ে মমতার বিরোধিতার স্বরকে মনে রাখতে চাইছেন না স্বামী বা স্ত্রী কেউই।
দীর্ঘ ৫৫ বছরের দাম্পত্য। এক দিনের জন্যও ঝগড়া হয়নি দু’জনের। বিষয়টি অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি! “আমি তো এক বার রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছিলাম। আমার বক্তব্য ছিল, সব স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেই তো ঝগড়া হয়! আমাদের কেন হবে না!”
এ বার নতুন ইনিংস শুরু করতে চলছেন স্বামী। সেই উপলক্ষে তাঁকে উপহার দেওয়ার কথা ভাবছেন? শুভ্রা বললেন, “ভালবাসা ছাড়া আর কীই বা দেওয়ার আছে!” |