রাইসিনা-রীতি রপ্ত করছেন প্রণব
নিয়মনিষ্ঠ ব্রাহ্মণ প্রণব মুখোপাধ্যায়।
চণ্ডীপাঠ থেকে দুর্গাপুজো প্রতিটি অনুষ্ঠানেই নিয়ম মেনে চলা মানুষ। পাঁচ দিন পর থেকে আর এক নিয়মের জগতে পা রাখছেন তিনি। ব্রিটেন থেকে পাওয়া সাংবিধানিক রীতিনীতি মেনে ৩৪০ কামরার রাইসিনা হিলসে ওই দিন পা ফেলবেন কীর্ণাহারের ব্রাহ্মণ। তখন থেকেই শুরু হবে নিয়মের নতুন ঘেরাটোপ।
প্রোটোকল অনুযায়ী, ২৫ জুলাই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পরে সংসদ ভবন থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনে ফিরে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল তাঁর ‘স্টাডি-রুমে’ (রাষ্ট্রপতির অফিস ঘরকে এই নামেই ডাকা হয়) প্রণববাবুকে নিয়ে যাবেন। তার পর রাষ্ট্রপতির ফিটন গাড়িতে চড়িয়ে প্রতিভা পাটিলকে তাঁর দু’নম্বর তুঘলক রোডের বাসভবন পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে আসবেন প্রণববাবু।
এত নিয়ম? প্রণববাবুর কথায়, “রাষ্ট্রপতি ভবনের বিষয়আশয় আমার সম্পূর্ণ অজানা।” কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি থেকে মন্ত্রিসভার বৈঠক দীর্ঘদিন ধরে যে মানুষটি সতীর্থদের হরেক রকম জটিল জিনিস বুঝিয়েছেন, ৭৭ বছর বয়সে তিনি নিজেই ছাত্র! রাষ্ট্রপতি ভবনের ‘মিনিট-টু-মিনিট’ প্রোটোকল বোঝাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অফিসারেরা নিয়মিত আসছেন প্রণববাবুর কাছে। আর তিনি নিজে অবসর পেলেই বাড়িতে বসে মগ্ন হয়ে পড়ছেন একটি বই। আমন নাথের লেখা ‘ডোম ওভার ইন্ডিয়া-রাষ্ট্রপতি ভবন।’
সব মিলিয়ে এক বিরাট কর্মযজ্ঞের প্রস্তুতি। আজ সকাল থেকেই রাষ্ট্রপতি ভবনে চলছে তার মহড়া। আগামিকাল ফাইনাল রিহার্সাল। ১৭৭৩ সালে ওয়ারেন হেস্টিংসের তৈরি ‘প্রেসিডেন্টস বডিগার্ড’ও প্রস্তুত। এই বাহিনী গঠনের জন্য সে সময় বারাণসীর রাজা চৈত সিংহের কাছ থেকে ৫০টি ঘোড়া আর ৫০ জন সেনা আনানো হয়েছিল। আজ সেই দেহরক্ষীর সংখ্যা ২৩৪। নতুন রাষ্ট্রপতিকে বরণ করতে তারাও প্রস্তুত। ২৫ জুলাই শপথের দিন রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে এক প্রতিনিধি প্রথমে যাবেন ১৩ নম্বর তালকাটোরা রোডে, প্রণববাবুর বাসভবনে। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হবে রাষ্ট্রপতি ভবনে। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে প্রতিভা পাটিল প্রণববাবুকে সঙ্গে নিয়ে যাত্রা শুরু করবেন সংসদ ভবনের দিকে।
রাষ্ট্রপতির ফিটনের ডান দিকে বসবেন প্রণববাবু। প্রতিভা পাটিল বাঁ দিকে। যাওয়ার পথে হাজার ঘোড়সওয়ার সেনা প্রতিভাকে হাজার সেলাম জানাবেন। সংসদ ভবনে তখন অপেক্ষায় থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার এবং উপরাষ্ট্রপতি। সেখানেও গাড়ি থেকে নামতে না নামতেই দেহরক্ষীরা প্রতিভাকে ফের সেলাম জানাবেন। বিদায়ী এবং ভাবী রাষ্ট্রপতি যাবেন সংসদের সেন্ট্রাল হলে। এই সেন্ট্রাল হলের অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহ। তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে অনুমতি চাইবেন শপথগ্রহণের জন্য। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এইচ কপাডিয়া প্রণববাবুকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন। শপথগ্রহণের সময় মঞ্চে কে কোথায় বসবেন, সেটি পূর্বনির্ধারিত। মঞ্চের একদম বাঁ দিকে লোকসভার স্পিকার, তার পর রাজ্যসভার চেয়ারম্যান, বিদায়ী রাষ্ট্রপতি, ভাবী রাষ্ট্রপতি এবং ডান দিকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। দর্শক আসনে থাকবেন মনমোহন সিংহ, সনিয়া গাঁধী, সুষমা স্বরাজরা। শপথের পর প্রতিভা পাটিল এবং প্রণববাবু নিজেদের মধ্যে আসন বদল করবেন।
এই সন্ধিক্ষণেই হবে পালাবদল। সঙ্গে সঙ্গে ২১টি তোপধ্বনি। রাষ্ট্রপতির সচিব ক্রিস্টি ফার্নান্ডেজ শপথের খাতায় স্বাক্ষর করাবেন নতুন রাষ্ট্রপতিকে। স্বরাষ্ট্রসচিব আবার ঘোষণা করবেন নতুন রাষ্ট্রপতির স্থলাভিষিক্ত হওয়ার বিজ্ঞপ্তি। এর পর প্রণববাবু ইংরেজিতে বক্তৃতা দেবেন। সেই বক্তৃতার হিন্দি অনুবাদ পড়ে শোনাবেন উপরাষ্ট্রপতি। সভা শেষ করার ঘোষণা করবেন স্বরাষ্ট্রসচিব। তার পরে জাতীয় সঙ্গীত। আবার মিছিল করে রাষ্ট্রপতি ভবনে ফেরা। এখন দেহরক্ষীরা নতুন রাষ্ট্রপতিকে আগের মতো সেলাম জানাবেন। রাষ্ট্রপতি ভবনে এসে প্রতিভা প্রণববাবুকে তাঁর স্টাডি রুমে নিয়ে যাবেন। সেখানকার অনুষ্ঠান শেষে ফিটনে চেপে বাইরে আসবেন। সেখানে দু’জনে বসবেন একটি জিপে। দেওয়া হবে গার্ড অফ অনার। এই অনুষ্ঠানের জন্য একটি সামিয়ানা খাটানো হচ্ছে। এখান থেকেই নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রণববাবু যাবেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলকে বিদায় জানাতে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.