হয়ে গেল সমাজবাদী পার্টি নেতা মুলায়ম সিংহের। বৃহস্পতিবার ভুল করে তিনি ব্যালট পেপারে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বদলে বিরোধী প্রার্থী পূর্ণ অ্যাজিটক সাংমার নামের পাশে প্রথম পছন্দের সূচক ‘১’ লিখে ফেলেন। ভুল ধরিয়ে দেন সাংমারই পোলিং এজেন্ট সত্যপাল জৈন! তখন সেটি ছিঁড়ে ফেলে নতুন ব্যালট পেপারে প্রণববাবুকেই ভোট দেন মুলায়ম সিংহ। কিন্তু সাংমার নির্বাচনী এজেন্টই পরে অভিযোগ আনেন, মুলায়মের ভোট অবৈধ। কারণ ভোট কাকে দেওয়া হয়েছে সেই গোপনীয়তা রক্ষা হয়নি। এই অভিযোগের ভিত্তিতে মুলায়মের ভোট বাতিল করে দেয় কমিশন। বিজেপি-র একাংশ দাবি করে গণ্য করা হোক মুলায়মের প্রথম ভোট। সেই দাবি খারিজ করে দিয়েছে কমিশন। এ ক্ষেত্রেও যুক্তি একটাই, গোপনীয়তা রক্ষা হয়নি।
|
দুই বঙ্গসন্তান রয়েছেন রাষ্ট্রপতি ভবনের গুরুত্বপূর্ণ পদে। এক জন রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ে কাজ করছেন গত ১৫ বছর ধরে, যুগ্মসচিব হিসাবে। বরুণ মিত্র নামের এই আমলা পূর্ববর্তী তিন জন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কাজ করেছেন। অন্য জন অর্চনা দত্ত, যিনি গত পাঁচ বছর ছিলেন রাষ্ট্রপতির অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি)। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও বাঙালি রাষ্ট্রপতি হতে চলেছেন। রাইসিনা হিল-এ গুঞ্জন, বাঙালি রাষ্ট্রপতি এলে এই দুই বাঙালি অফিসার কি থেকেই যাবেন? নাকি তাঁদের জায়গায় আসবেন অন্য কেউ?
|
রাইসিনা হিল-এ প্রণবের নতুন ‘টিম’ কী হবে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রণবের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়ার কথা অমিতা পল, প্রদীপ গুপ্ত, রজনিশ-এর মত অফিসারদের। কিন্তু প্রধান প্রশ্ন, কে হবেন রাষ্ট্রপতির সচিব? গুঞ্জন, অমিতা পলই হয়তো পাবেন সেই পদ। রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা বলে কোনও পদ আপাতত নেই। কোনও রাষ্ট্রপতি চাইলে সেই পদ তৈরি করতে পারেন। তবে রাইসিনা হিল-এর সাম্রাজ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদ সচিবেরই। তাই জল্পনা বেশ জোরদার।
|
পরাজয় নিশ্চিত। এখনও আইনি পথে প্রণববাবুকে বেগ দিতে পূর্ণ মাত্রায় সক্রিয় পূর্ণ সাংমা তথা বিজেপি শিবির। শুক্রবার ফের সাংমা শিবির জানিয়েছে, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার চিঠিতে প্রণববাবুর সই জাল। সাংমার নির্বাচনী এজেন্ট সত্যপাল জৈন জানিয়েছেন, ‘ফিঙ্গার প্রিন্ট’-এর বিশেষজ্ঞ ৮টি গবেষণাগার জানিয়েছে, প্রণববাবু সাধারণত যে ধাঁচে সই করেন তার সঙ্গে ওই সইটির কোনও মিল নেই। নির্বাচনের ফল বেরোলেই সর্ব্বোচ্চ আদালতে ভুয়ো সইয়ের অভিযোগ এনে মামলা করার কথাও ভাবছে বিজেপি। এ সব দেখে কংগ্রেসের এক নেতার মন্তব্য, “দেখা যাক প্রণববাবুর বাড়া ভাতে ছাই দিতে আর কী কী চেষ্টা করে বিজেপি শিবির।”
|
এত দিন দল ও সরকারের বিভিন্ন জটিল সমস্যায় সঙ্কটমোচকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে প্রণববাবুকে। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিন কিন্তু কংগ্রেস ম্যানেজারদের মধ্যে সব থেকে সক্রিয় দেখা গেল পি চিদম্বরমকে। সরকারের শরিক সাংসদদের অলিন্দ থেকে মূল কক্ষে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। গত এক মাস ধরে ভোট কৌশল নিয়েও নিয়মিত আলাপ আলোচনা চালিয়েছেন প্রণববাবুর সঙ্গে। এ বার সেই পর্ব শেষ হতে চলল। সরকারের অনেক সমস্যা, বিরোধীদের আক্রমণ সামলাতে হয়েছে দু’জনকেই। রাইসিনা হিল-এ গেলে সেই ঝক্কি আর পোহাতে হবে না প্রণববাবুকে। ভোটদান মিটে যাওয়ার পর চিদম্বরম তাঁকে বললেন, ‘যাচ্ছেন ভাল কথা। কিন্তু আমার আশঙ্কা কিছু দিনের মধ্যেই না আপনি বোর হয়ে যান!”
|
নর্থ ব্লকের অফিসের পালা গোটানোর পর এখন ১৩ তালকাটোরা রোডই অস্থায়ী ক্যাম্প অফিস রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর। বাগানে বিরাট শামিয়ানা খাটানো হয়েছে। সেখানে দর্শনপ্রার্থীদের জন্য রয়েছে দিনভর জলযোগের ব্যবস্থা। আজ সেখান থেকেই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জন্য ‘ফ্রেঞ্চ ফ্রাই’ আনিয়ে দিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর উপদেষ্টা অমিতা পল। প্রণববাবুকে অনুরোধ করলেন খেয়ে নিতে। নিজস্ব ভঙ্গিতে প্রণববাবুর মন্তব্য, ‘এটার নাম আবার ফ্রেঞ্চ ফ্রাই কেন? এ তো আলুভাজা!” |