পলতা থেকে টালায় জল সরবরাহের নতুন সংযোগের কাজ শেষ হচ্ছে পুজোর মরসুমে। ২২.৫ কিলোমিটার অংশে ভূগর্ভে পাইপ বসানোর এই কাজ চলতি বছরের মাঝামাঝি শেষ হওয়ার কথা ছিল। নানা কারণে তা পিছিয়ে গিয়েছে। প্রকল্পের দ্রুত রূপায়ণে উদ্যোগী হয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভা এবং ‘রেল ইন্ডিয়া টেকনিক্যাল সার্ভিসেস’ (রাইট্স)-এর কর্তারা প্রকল্পের বিভিন্ন অংশে কাজের গতি খতিয়ে দেখেন।
পলতায় পরিস্রুত জল টালার জলাধারে আনতে বিভিন্ন মাপের যে সব পাইপ আছে, সেগুলির অধিকাংশই পুরনো। এই সংযোগপথের বিভিন্ন অংশ ফেটে যাওয়ায় শোধিত জল নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়াও, প্রস্তাবিত মেট্রো প্রকল্পের জন্য বি টি রোডে ডানলপ ব্রিজ সংলগ্ন পাইপের একাংশ তুলতে হবে। জলের নয়া লাইন দ্রুত না-বসালে মেট্রোর এই কাজটিও করা যাচ্ছে না।
পলতা-টালা জলের লাইন পাতার ৩০৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি ২০০৯ সালে জেএনএনইউআরএম মিশনে অনুমোদিত হয়। প্রকল্প-ব্যয়ের ৩৫ শতাংশ দিচ্ছে কেন্দ্র। বাকিটা কলকাতা পুরসভা এবং রাজ্য সরকার। কথা ছিল, তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। পলতায় দৈনিক প্রায় ১৭ কোটি ৩০ লক্ষ গ্যালন জল শোধনের পরে তা কলকাতা এবং বিধাননগরে সরবরাহ হয়। পুরসভার ডিজি (জল সরবরাহ) বিভাস মাইতি এই তথ্য জানিয়ে বলেন, “ভূগর্ভে এই পাইপলাইন পাতা হলে দৈনিক আরও প্রায় ৪ কোটি গ্যালন জল সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।”
পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ ইঞ্জিনিয়ারদের বলেন, যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করতে হবে। কাজে দেরির কারণ জানাতে গিয়ে প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাইট্স-এর ইঞ্জিনিয়ারেরা জানান, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অনুমতি না মেলায় ব্যারাকপুরের সেনা ছাউনির ভিতরে এই কাজ প্রায় এক বছর আটকে ছিল।
রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অনুমতির ব্যাপারে চিঠি দিয়েছিলেন কেন্দ্রকে।
এই প্রকল্পে টানা মাটি না খুঁড়ে আধুনিক ‘টানেল বোরিং’ পদ্ধতিতে ৬৪ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ ভূগর্ভে বসানো হয়েছে। রাইট্স-এর জেনারেল ম্যানেজার পল্লব পাল বলেন, “লাইন পাতার কাজ প্রায় শেষ। পাইপগুলির সংযোগস্থাপন এবং পরীক্ষার কাজ হয়ে গেলেই জল সরবরাহ শুরু করা যাবে।” বি টি রোডে পূর্ত দফতরের বিভিন্ন কাজের জন্যও এই পাইপ বসানোর কাজে নানা সময়ে দেরি হয়েছে বলে পুর-ইঞ্জিনিয়ারেরা জানিয়েছেন।
রৌরকেলায় ‘সেল’-এর কারখানায় তৈরি ইস্পাতের ‘স্পাইরালি ওয়েল্ডেড’ পাইপ ব্যবহার করা হয়েছে কলকাতার এই প্রকল্পে। মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পরে শোভন চট্টোপাধ্যায় প্রতিটি বৈঠকে এই প্রকল্পের রূপায়ণে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তিনি জানান, অতীতে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে যত সময় লেগেছে, সেগুলির যে কোনওটির চেয়ে পলতা-টালা সংযোগব্যবস্থা হচ্ছে অনেক দ্রুত। |