গত চোদ্দো বছর ধরে আদালত তাঁদের বার বার ডেকে পাঠাচ্ছে। কিন্তু ২১ জুলাইয়ের শহিদদের সেই প্রায় ৩০ জন ‘সঙ্গী’র কোনও খোঁজ নেই! অতএব চার্জশিট জমা পড়ার ১৪ বছর গড়িয়ে গেলেও মামলার শুনানি শুরু হল না!
১৯৯৩-এর ২১ জুলাইয়ের ঘটনায় ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যুর পরে পুলিশ মোট ৪৩ জনের নামে অস্ত্র-আইনে এবং সরকারি সম্পত্তি বিনষ্টের অভিযোগে মামলা রুজু করেছিল, পার্ক স্ট্রিট ও হেস্টিংস থানায়। পাঁচ বছর পরে, ১৯৯৮-এ চার্জশিট পেশ হয়। তখনও সকলে হাজির ছিলেন। ব্যাঙ্কশাল কোর্টের ৬ ও ১৭ নম্বর কক্ষে মামলা নথিভুক্ত হয়। কিন্তু ২০১১-র ৩০ নভেম্বর, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১২-র ১৩ জানুয়ারি ও ১৬ জুন চার দিন ওই ৪৩ জনের একসঙ্গে হাজির হওয়ার কথা থাকলেও প্রতি বার হাজিরা দিয়েছেন সাকুল্যে জনা ১৩-১৪ অভিযুক্ত।
ফলে সব অভিযুক্তের হাতে চার্জশিটের কপি তুলে দেওয়া যায়নি। তাই মামলাও শুরু হতে পারেনি। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর ১৭ নম্বর এবং ১৪ ডিসেম্বর ৬ নম্বর আদালতকক্ষে আবার হাজিরার দিন ধার্য হয়েছে। গরহাজির ওই প্রায় ৩০ জনের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে আদালত। কিন্তু বাম জমানায় তাঁরা যেমন বেপাত্তা ছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পরেও তাঁদের দেখা নেই! এঁদের অধিকাংশ এখন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। কয়েক জন কংগ্রেসে রয়ে গিয়েছেন। হাতে গোনা ক’জন রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছেন।
ওঁদের খোঁজ না-মিললে মামলার কী হবে?
রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক বৃহস্পতিবার বলেন, “এক সঙ্গে ৪৩ জনকে হাজির করাতে সত্যিই অসুবিধে হচ্ছে। আমি এ বার প্রত্যেকের নাম-ঠিকানা চেয়ে পাঠিয়েছি। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের হাজির করানোর চেষ্টা হচ্ছে।” সাধারণত অভিযুক্তেরাই আইনজীবীর থেকে দিনক্ষণ জেনে নিজেদের তাগিদে শুনানিতে হাজির হন।
কী বলছেন এই মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী তথা তৃণমূলকর্মী অলোককুমার দাস?
অলোকবাবুর বক্তব্য: সেই সময়ে পুলিশ যখন অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে ঠিকানা চেয়েছিল, তখন বেশির ভাগই ভয়ে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন। পুলিশকে দিয়ে খবর পাঠাতে গিয়েও দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশের ঠিকানা ভুল। সুতরাং যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। উপরন্তু ওঁদের মধ্যে কলকাতা ছাড়াও হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, নদিয়ার লোকজন রয়েছেন। এমনকী, মুর্শিদাবাদের লালগোলার এক যুবকও অন্যতম অভিযুক্ত। “আমার অবস্থাটা বুঝতে পারছেন? ঊনিশ বছর ধরে মামলা লড়ছি। কিন্তু মক্কেলদের অনেককে বহু বছর দেখিইনি। টাকা-পয়সা পাওয়া তো দূর।” মন্তব্য অলোকবাবুর।
এ দিকে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে অলোকবাবু এখন সরকারপক্ষের আইনজীবী। বিভিন্ন মামলায় তিনি সরকারপক্ষের হয়ে সওয়াল করেন। অথচ এই বিশেষ মামলায় বাদিপক্ষ সরকার হলেও তিনি যুঝছেন বিবাদিপক্ষের হয়ে। লড়তে হচ্ছে আর এক সরকারি কৌঁসুলির বিরুদ্ধে। যত দিন মামলাটি চলবে, তত দিন তাঁকে দুই পরিচয়ই বহন করতে হবে। অলোকবাবুর কথায়, “কোনও পরোয়া নেই! ১৯৯৬-এ আমার কালো গাউন পরে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মামলায় সওয়াল করে গিয়েছেন। গাউনটা আমার বাড়িতে সযত্নে রাখা আছে। আর ব্যবহার করিনি। এক জন তৃণমূলকর্মী হিসেবে এর চেয়ে বড় পাওনা আর কী হতে পারে?” |