১২১ নম্বর লেনিন সরণির বাড়িটায় ‘সাবধান, বিপজ্জনক’ লেখা নোটিস পুরসভা ঝুলিয়েছিল বছর দশেক আগে। ফ্যাকাসে সেই নোটিসের কিছুই এখন পড়া যায় না। বাড়ির ভিতরে ঢুকতে ভয় হয়, এই বুঝি ভেঙে পড়ল।
তবে বাড়ির মালিক বা ভাড়াটে বা পুর-কর্তৃপক্ষের এত দিন বিশেষ হেলদোল ছিল না। হয়তো এখনও থাকত না, যদি না বুধবার ১১ নম্বর ক্রিক রোয়ের বিপজ্জনক বাড়ির একাংশ রাস্তায় ভেঙে পড়ত। ওই ঘটনার পরে বাসিন্দাদের মনে আতঙ্ক ঢুকেছে। পাশাপাশি কিছুটা হলেও টনক নড়েছে পুর-প্রশাসনের। হাত পড়েছে ‘বিপজ্জনক বাড়ি’র পুরনো ফাইলে। বিল্ডিং দফতরের ভার তো স্বয়ং মেয়রেরই হাতে! তিনি কী বলছেন?
সমস্যাটা যে গুরুতর, তা স্বীকার করে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় শুক্রবার বলেন, “আমরা চাই না, বিপজ্জনক বাড়িতে কেউ বাস করুক। বার বার আবেদনও করা হচ্ছে। কিন্তু সাড়া মিলছে না।” তাঁর দাবি, “কোথাও বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে বিবাদ, কোথাও বা মামলা-মোকদ্দমার জন্য বাড়ি সারাতে দেরি হচ্ছে।” যদিও কলকাতা পুর-বিধির ৪১১(৪) উপধারায় পরিষ্কার বলা আছে, বিপজ্জনক বাড়ি থেকে সাধারণ মানুষের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে পুর-প্রশাসন তা ভেঙে দিতে পারে। |
বিধি থাকলেও ডান বা বাম কোনও পুরবোর্ডই সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। ফলে যখন-তখন বড়সড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা। এমনকী ১২১, লেনিন সরণির গৌতম মেটেও বলছেন, “কোনও বাড়ি ভেঙে পড়লে তো বাসিন্দাদের সঙ্গে পথচলতি মানুষেরও আঘাত লাগতে পারে! সকলের নিরাপত্তার কথা পুরসভার ভাবা উচিত।” কী ভাবছে পুরসভা?
মেয়র বলেন, “বেশ কিছু বাড়ির যা হাল, তাতে বেশি দিন চুপ করে বসে থাকা যাবে না। আজ না হয় কাল, হস্তক্ষেপ করতে হতে পারে। রাজ্য সরকারের বিভাগীয় মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব। তার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।”
পুর-সূত্রের খবর: ক্রিক রো, বড়বাজার, পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিট, বিবেকানন্দ রোড, ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিট, স্ট্র্যান্ড রোড, লেনিন সরণি-সহ কলকাতায় বিপজ্জনক বাড়ি প্রায় আড়াই হাজার। ২০০০ সালে তৃণমূলশাসিত পুরবোর্ডের আমলে সেগুলোয় নোটিসবোডর্র্ লাগানো শুরু হয়। তাতে কাজ হল না কেন?
তদানীন্তন মেয়র পারিষদ (বিল্ডিং) স্বপন সমাদ্দারের ব্যাখ্যা, “ভাবা হয়েছিল, নোটিস দেখে চক্ষুলজ্জার খাতিরে অনেকে বাড়ি সারাবেন। বাস্তবে তা হয়নি।” এক পুর-কর্তার মন্তব্য, “এখনও বহু বাড়িতে অনেকে ৩০ টাকা ভাড়ায় আছেন। নিজেদের ফ্ল্যাট থাকতেও ভাড়াবাড়ি ছাড়েননি। বাড়িওয়ালারাও বাড়ি নিয়ে মাথা ঘামান না।” বিবেকানন্দ রোডের এক বিপজ্জনক বাড়ির মালিকের আক্ষেপ, “কুড়ি-তিরিশ ঘর ভাড়াটে থাকলেও ভাড়া নামমাত্র। সংসার চালানোর টাকাই জোটে না! বাড়ি সারাব কী করে?” মানিকতলা মোড়ের কাছে দেখা গেল, তিনতলা বাড়ির গাড়িবারান্দা ঝুলছে। যে কোনও সময়ে ধসে পড়তে পারে। তারই নীচে দোকানে বসা মহিলা বললেন, “প্রাণ হাতে করে রোজ দোকান খুলি।” এক পড়শি জানালেন, বাড়ির ‘বিপজ্জনক’ নোটিসবোর্ডটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
বিগত বাম পুরবোর্ডের বিল্ডিং বিভাগের মেয়র পারিষদ দীপঙ্কর দে’র মতে, ক্রিক রোয়ের ঘটনা নতুন সতর্কবার্তা। তাঁর দাওয়াই, “বাসিন্দাহীন বিপজ্জনক বাড়িগুলো অবিলম্বে ভেঙে ফেলা জরুরি। অন্যগুলোর বাসিন্দাদের সাময়িক ভাবে অন্যত্র সরিয়ে দিন পুর-কর্তৃপক্ষ। প্রয়োজনে আইনি পরামর্শ নিয়েই বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙা হোক।” |