খন্না মোড়ের দিকে যাওয়ার সময়ে অরবিন্দ সেতু থেকে নেমে আচমকাই ব্রেক কষল অটোটি। পিছনে আসা মোটরবাইক আরোহী পড়তে পড়তে বাঁচলেন। দাঁড়িয়ে গেল অন্য গাড়ি। কিন্তু, এ সব থোড়াই তোয়াক্কা করলেন ওই অটোচালক। দূর থেকে তিনি দেখেছেন, এক তরুণী আসছেন অটো ধরতে।
পার্ক সার্কাস থেকে নিউ মার্কেটের অটো ধরেছিলেন অর্চনা রায়। পুরো রাস্তাই উচ্চগ্রামে গান বাজিয়ে বেপরোয়া ভাবে চালালেন চালক। বারবার আস্তে অটো চালাতে অনুরোধ করেন অর্চনাদেবী। চালক উল্টে বলেন, “না পোষালে নেমে যান।”
অটো নিয়ে নিত্য দিনের এমন হাজারো ‘অভিজ্ঞতা’ শহরবাসীর নিয়ম ভেঙে চালানো, রুট ভেঙে বাড়তি ভাড়া আদায় থেকে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা। যাত্রীরাও বুঝে গিয়েছেন, অটোচালক যতই যাত্রী তুলুন না কেন, মুখ বুজে থাকতে হবে। যেমন, বেপরোয়া অটোর পিছনে লাগানো লোহার পাতের ধাক্কায় তুবড়ে যাওয়া গাড়ির মালিকও জানেন, এ নিয়ে পুলিশে অভিযোগ করে লাভ নেই। প্রতিবাদ করতে গেলে জুটবে অপমান বা মারধর। যেমন ঘটেছে বৃহস্পতিবার, ভবানীপুরের দম্পতির কপালে।
বাম জমানায় মূলত সিটু-নিয়ন্ত্রিত ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অটোরিকশা অপারেটর্স ইউনিয়ন’-এর হাত ধরেই জন্ম হয়েছিল এই ‘অটো-রাজের’। প্রথমে রুটের অনুমোদন না-থাকলেও পরে সিটু-র ‘দাপটের’ কাছে নতিস্বীকার করে প্রায় ৭৫টি রুটকে বৈধতা দেয় রাজ্য পরিবহণ দফতর ও পুলিশ। এখন শহরে অনুমোদিত রুটের সংখ্যা ১২৫। এ ছাড়াও রয়েছে শহরতলির অসংখ্য রুট। কোন রুটে ক’টি অটো চলবে বা কোথায় কত টাকা ভাড়া হবে, তা ঠিক করার দায়িত্ব থেকে যায় সিটুর হাতেই।
রাজ্যে ‘পরিবর্তন’-এর আগে থেকেই বেশির ভাগ অটোয় লাগানো লাল ঝান্ডা বদলে যায় তৃণমূলের পতাকায়। অটো-নৈরাজ্য রুখতে আশ্বাস দিয়েছে বর্তমান সরকার। পরিবহনমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে অটোচালকদের ‘দাদাগিরি’র প্রসঙ্গে মদন মিত্র বলেছিলেন, ‘এ সবের সুরাহা করা হবে।’ ৮ এপ্রিল অটো ইউনিয়নগুলির সঙ্গে বৈঠকের পরে তিনি সরকারের অটো-নীতি ঠিক করতে এক কমিটি গড়ার কথা বলেন। ১৬ জুন সেই কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়।
কিন্তু শহরে ‘অটোর রমরমা’ চলছে একই ভাবে। নির্দিষ্ট রুটের বাইরে অটো চালানোর বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদ করে পার্ক সার্কাস ও যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডে পথ অবরোধও করেছেন চালকেরা।
অটোর এই দৌরাত্ম্য বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন? পুলিশের দাবি, পারমিটবিহীন অটোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ওই ‘দাদা’রাই অটোর ‘ত্রাতা’ হয়ে যান। ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপকুমার আদক বলেন, “পারমিটহীন অটোর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলে। শুধু তা-ই নয়, সিগন্যাল না মানা ও অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে অটো চালানোর অভিযোগেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” |