ঐতিহ্যবাহী চালধোয়ানি পুকুরের সৌন্দর্যায়ন করতে গিয়ে ‘বাধা’ পেতে হল তৃণমূল পরিচালিত রামপুরহাট পুরসভাকে। সৌন্দর্যায়নের জন্য শুক্রবার ওই পুকুরপাড়ে অবৈধ নির্মাণ ভাঙার কাজ শুরু হয়। তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সেই কাজ বন্ধ রাখতে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরওয়ার্ড ব্লকের স্বপন দত্তের দাবি, “তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভাকে চায়ধোয়ানী পুকুরের সৌন্দর্যায়নের জন্য অবৈধ দখলদারদের হঠাতে গিয়ে পিছিয়ে আসতে হয়।” আশিসবাবু অবশ্য পাল্টা দাবি করেন, “আমি কোনও নির্দেশ দিইনি। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত নীতি অনুযায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে কাউকে উচ্ছেদ করা যাবে না। সেই বার্তাই দলীয় পুরপ্রধানের কাছে পৌঁছে দিয়েছি মাত্র।” তিনি বলেন, “পুরপ্রধানকে বলা হয়েছে, পুকুরপাড়ে যাঁদের বাড়ি আছে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে যাবতীয় কাজ করতে।”
পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি বলেন, “এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি মেনে ৯ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা খরচ করে চালধোয়ানি পুকুরের প্রথম পর্বে সংস্কারের কাজ করা হয়েছে। পুকুরপাড়ের সৌন্দর্যায়ন করা হবে। সেই জন্য রাজ্য সরকার ২৬ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা মঞ্জুর করেছে। ওই টাকায় পুকুরের দু’টি ঘাট বাঁধানো হচ্ছে।” তিনি জানান, পুকুরপাড়ে সৌন্দর্যায়নের জন্য আলোর ব্যবস্থা, বৃক্ষরোপণ করা হবে। এলাকাবাসী সম্প্রতি গণস্বাক্ষরিত স্মারকলিপি দিয়ে পুরসভায় আবেদন করেছিলেন, পুকুরপাড়ে অবৈধ ভাবে তৈরি হওয়া গোয়ালঘর ভেঙে ফেলার জন্য। পুরপ্রধান বলেন, “আমরাও দেখি পুকুরপাড়ে এক ব্যক্তির গোয়ালঘর আছে। এর ফলে পুকুরের জল দূষিত হচ্ছে। গোয়ালঘর সরিয়ে নেওয়ার জন্য পুরসভার তরফ থেকে নেটিস দেওয়া হয়। কিন্তু ওই ব্যক্তির কোনও পাত্তা পাওয়া যায়নি। তাই পুলিশ দিয়ে এ দিন গোয়ালঘর ভাঙা হয়েছে।” তিনিও দাবি করেন, “বিধায়কের ফোন পেয়ে ভাঙার কাজ বন্ধ করা হয়। এখন তিনি যদি চান, সৌন্দর্যায়ন করতে গিয়ে গোয়ালঘর ভাঙা বা অবৈধ ঘর ভাঙা হবে না, তা হলে হবে না। আমরা আলোচনায় বসব।”
এলাকার বাসিন্দা নিশীথ মণ্ডল, দীনবন্ধু দাসরা বলেন, “১১, ১৩, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড শুধু নয়। চালধোয়ানি পুুকুর এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী পুকুর। পুকুরের জল দূষিত হচ্ছিল। এলাকার বাসিন্দাদের আন্দোলনে পুরসভা পুকুর সংস্কারের কাজ শুরু করে।” তাঁদের ক্ষোভ, “সৌন্দর্যায়নের জন্য অবৈধ দখলদারদের সরাতে গিয়ে যদি কোনও রাজনৈতিক দলের বিধায়ক বাধা দেন তা হলে পুকুরপাড় দখলদারদের কব্জায় চলে যাবে।” এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুকুরের পূর্ব দিকে একটি বাড়ি, একটি গোয়ালঘর ও দোকানের চালাঘর ভাঙা হয়েছে। গোয়ালঘরের মালিক গিরিধারী মণ্ডলের দাবি, “আমি তৃণমূল করি বলে আমার গোয়ালঘর ভেঙে দিতে চাইছেন কাউন্সিলর।” দেখা যায়, দখলদারদের তুলতে গিয়ে বাধা পেয়ে পিছু হঠলে পুকুরপাড়ের চারদিক দড়ি, বাঁশ দিয়ে দখলদাররা নিজেদের মতো করে ঘিরে নিয়েছেন। তাঁদের দাবি, পুকুরপাড়ের সৌন্দর্যায়ন করতে যদি গোয়ালঘর ভাঙা না হয় তা হলে তাঁরাও ওই পুকুরপাড়ে জায়গা দখল করে ব্যবসা করবেন। এই জটিলতা কাটাতে এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি। |