দীর্ঘদিন স্থায়ী পোস্টমাস্টার নেই। যার ফলে ময়ূরেশ্বরের কুলিয়াড়া শাখা পোস্টঅফিস থেকে ঠিক মতো পরিষেবা পাচ্ছেন না এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় বিভিন্ন ডাকঘর থেকে পোস্টমাস্টার কিংবা ডাক পিয়নকে দিয়ে জোড়াতালি কোনও রকম কাজ চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। সম্প্রতি তাঁরা লিখিত ভাবে জেলা পোস্টাল সুপারিন্টেডেন্টের তাঁদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁরা স্থায়ী পোস্টমাস্টার নিয়োগের দাবিও জানিয়েছেন।
জেলা ডাকবিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ডাকঘরের উপরে ঢেকা পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ২০টি গ্রাম নির্ভরশীল। ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে অসুস্থতার কারণে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু হয় ওই ডাকঘরের পোস্টমাস্টার নিমাইচন্দ্র দাসের। তার পর থেকে বারবার আবেদন জানিয়েও স্থায়ী পোস্টমাস্টার নিয়োগের কোনও ব্যবস্থা হয়নি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। পরিবর্তে দাসপলশা, কুনুটিয়া কিংবা ব্রাহ্মণবহড়া ডাকঘর থেকে পিয়ন কিংবা পোস্টমাস্টার দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। এর ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এলাকার মানুষজনকে। কারণ ওই পোস্ট অফিসের উপরে ঢেকা পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ২০টি গ্রাম নির্ভরশীল। |
স্থানীয় বাসিন্দা তমরেশ ভট্টাচার্য, মিঠু গরাইদের ক্ষোভ, “সঞ্চয় প্রকল্প-সহ বিভিন্ন পরিষেবা স্থায়ী পোস্টমাস্টারের অভাবে বিঘ্নিত হয়ে পড়েছে। সব সময় খাম, পোস্টকার্ডও মেলে না। ‘মানিঅর্ডার’ও করা যায় না। অস্থায়ী ভাবে যাঁরা আসেন তাঁরা একে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যান। এই পরিস্থিতিতে সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছেন ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে জবকার্ডধারী এবং বার্ধক্য ও বিধবা ভাতা প্রাপকেরা।”
ঢেকা পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ডাকঘর থেকে ৬৬ জন বার্ধক্য এবং বিধবা ভাতা পান। ১৫টি গ্রামের ১৫২৫ জন জবকার্ডধারীর বেতনও ওঠে ডাকঘর থেকে। কিন্ত তাঁদের প্রাপ্য টাকা পেতে চরম হয়রানির শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাঁধগ্রামের বিধবা ভাতা প্রাপক লক্ষ্মীবালা দাস, গিধিলা গ্রামের বার্ধক্য ভাতা প্রাপক নির্মলা বায়েনরা বলেন, “ভাতার টাকা তুলতে গিয়ে শুনি পোস্টমাস্টার আসেননি। কিংবা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বৃদ্ধ বয়সে ৫-৭ কিলোমিটার দূরের ডাকঘরে গিয়ে হয়রান হয়ে ফিরতে হয়।” একই অভিযোগ জবকার্ডধারকীদেরও। রামকৃষ্ণপুরের গৌর বাগদি, বেলেড়া গ্রামের সনৎ পালদের কথায়, “কোনও দিন ডাকঘর চালান বাইরের ডাক-পিয়ন কিংবা অন্য কোনও পোস্টমাস্টার। এক জন অন্য জনের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে কাগজপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়ে দেন। এর ফলে আমাদের দিনের পর দিন ডাকঘরে এসে ছুটোছুটি করতে হয়।”
অন্য দিকে, ওই সব অস্থায়ী ডাক-পিয়ন কিংবা পোস্টমাস্টাররা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “দায়িত্ব বুঝে নিয়ে কাগজপত্র খুঁজে পেতে তিন চারদিন পেরিয়ে যায়। এর জন্য গ্রাহকদের কিছুটা হয়রানির শিকার হতে হয় ঠিকই। তবে নিজেদের ডাকঘর ছেড়ে এখানে কাজ করতে আসতেও সমস্যা হয়। ওই সব ডাকঘরের দায়িত্ব অন্যকে দিয়ে আসতে হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।” এ দিকে স্থানীয় বাসিন্দারা এই সমস্যা দূর করার জন্য কর্মরত অবস্থায় মৃত পোস্টমাস্টারের স্ত্রী অঞ্জলি দাসকে পোস্টমাস্টার হিসেবে নিয়োগের জন্য জেলা পোস্টাল সুপারিন্টেডেন্টের কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। জয়দেব বাগদি, বিক্রম গড়াইরা বলেন, “নিমাই দাসের অনুপস্থিতির সময় অঞ্জলিদেবী পোস্টমাস্টার হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ চালিয়েছেন। তাঁর অভিজ্ঞতাও রয়েছে। রয়েছে শিক্ষাগত যোগ্যতা। তাঁর বাড়িতেই চলছে ডাকঘর।” পেশায় আইসিডিএস কর্মী অঞ্জলিদেবী বলেন, “স্বামীর মৃত্যুর পরে আমাকে নিয়োগ করার জন্য ডাক বিভাগে আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও সদুত্তর পাইনি। তাই দোটানায় আছি।”
জেলা পোস্টাল সুপার আনসারুল হক বলেন, “শুধু ওই ডাকঘর নয়, জেলার আরও বেশ কিছু ডাকঘরে পিয়ন-সহ ডাককর্মীর পদ খালি আছে। ওই সব পদ পূরণের জন্য ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। কুলিয়াড়ার ক্ষেত্রে কী হয়েছে জানা নেই। বাইরে আছি। কাগজপত্র না দেখে সবিস্তারে কিছু বলতে পারব না।” |