গত বছর থেকে ‘পরিবর্তন’-এর যে ধারা চলছে, তার ব্যতিক্রম ঘটল দুর্গাপুর মহিলা সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদের নির্বাচনে। সেখানে সিটু-কে পর্যুদস্ত করা দূরস্থান, সব আসনে প্রার্থীই দিতে পারল না তৃণমূল।
কিছু দিন আগেই দুর্গাপুর স্টিল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদের নির্বাচনে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে সিটু। কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মহিলা সমবায় ব্যাঙ্কে মনোনয়নপত্র পরীক্ষা শেষে দেখা যায়, ৪৬টি আসনের মধ্যে মাত্র ৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠন। ৩৬টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন বাম সমর্থিত প্রার্থীরা। একটি আসনে বাম প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়ে গিয়েছে। সেই আসনে আর কেউ প্রার্থী না দেওয়ায় আগামী ৫ অগস্ট শুধু মাত্র ৯টি আসনেই ভোটগ্রহণ হবে।
মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি মহিলাদের স্বনির্ভর করে তোলায় সাহায্য করতে ১৯৯৭ সালে ওই মহিলা সমবায় ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বর্তমানে তাদের দু’টি শাখা, ৪৬০৬ জন অংশীদার। মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১০ কোটি টাকার উপরে। তৃণমূলের দাবি, সঠিক সময়ে খবরাখবর না পাওয়াতেই তারা সব আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। দলের শিল্পাঞ্চল সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই ব্যাঙ্কের নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়ার ব্যাপারে আমাদের ত্রুটি ছিল।”
কিন্তু বাস্তব বলছে অন্য কথা। কেননা নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য সমবায় দফতরের আধিকারিক নির্দিষ্ট সময়েই নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন। তা দেখে যথানিয়মে মনোনয়ন দাখিল করেন বাম প্রার্থীরা। ব্যাঙ্কের অধিকাংশ অংশীদার নির্বাচনের খুঁটিনাটি জানেন। সেখানে রাজ্যের প্রধান শাসকদল কিভাবে সঠিক সময়ে খবর পেল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অপূর্ববাবুর দাবি, “দুর্গাপুর স্টিল পিপলস কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের নির্বাচন নিয়ে দলের কর্মী-সমর্থকেরা ব্যস্ত ছিলেন। এরই মধ্যে মহিলা ব্যাঙ্কের নির্বাচন চলে আসায় প্রস্তুতির যথেষ্ট সময় মেলেনি।”
গত ২ জুলাই প্রায় ২১৫ কোটি টাকার সম্পত্তির অধিকারী দুর্গাপুর স্টিল পিপলস কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদের নির্বাচনে ব্যাপক অশান্তি হয়। আইএনটিটিইউসি-র বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তোলে সিটু। আইএনটিটিইউসি অবশ্য পাল্টা দাবি করে, এ বার আর গায়ের জোরে ব্যাঙ্কের দখল রাখতে পারবে না বুঝেই সিটু ‘সন্ত্রাসের ধুয়ো’ তুলছে। ফল বেরোলে দেখা যায়, গত বার পর্যন্ত যেখানে সব আসন সিটুর দখলে ছিল, এ বার তারা মাত্র ১৭টি আসন পেয়েছে। আইএনটিটিইউসি পেয়েছে ৪০টি আসন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতার ব্যাখ্যা, “দুর্গাপুর স্টিল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদ দখল করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাতে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে সংগঠন চালানোর কাজ সহজ হয়ে গিয়েছে। সেই তুলনায় মহিলা ব্যাঙ্কের নির্বাচন মোটেই দলের কাছে তত গুরুত্বপূর্ণ নয়।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদারের পাল্টা দাবি, “রিগিং করে ওরা পিপলস কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের দখল নিয়েছিল। বারবার তো আর তা হয় না। তাই মহিলা ব্যাঙ্কের নির্বাচনে ওরা আর ঝুঁকি নিতে চায়নি।” |