খোলা বাজারে এক কেজি কাঁচা লঙ্কা বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। অথচ কেজি প্রতি লঙ্কা বেচে চাষিরা দাম পাচ্ছেন মাত্র ২৮ টাকা। দক্ষিণ দিনাজপুরের লঙ্কার বাজারে ফড়েদের রমরমা দেখে প্রশাসন নড়ে বসতেই পাইকারি বাজারে দাম বাড়ল কাঁচা লঙ্কার। বৃহস্পতিবার চাষিরা কেজি প্রতি কাঁচা লঙ্কার দাম পেলেন ২৮ টাকা। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর ব্লকের ফুলবাড়ি এলাকার লঙ্কা মান্ডির ঘটনা। খোলা বাজারে লঙ্কা সেই চড়া দামেই সাধারণ মানুষকে কিনতে হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রথম এক-দু’দিন এনফোর্সমেন্ট শাখার কর্মীদের নিয়ে কৃষি দফতর সবজি বাজারে হানা দিয়ে হাত গুটিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। ফলে নজরদারি একটু ঢিলে হতেই লঙ্কার বাজার টালমাটাল হয়ে পড়ে। সক্রিয় হয়ে ওঠে ফড়েরা। দাম না পেয়ে মাথায় হাত পড়ে লঙ্কা চাষিদের। অন্যদিকে, লঙ্কার দামচাষিরা পেলেন কি না সেটা দেখা তাঁদের কাজ নয় বলে সাফ জানিয়ে দেন কৃষি আধিকারিকেরা। তাদের বক্তব্য, বিষয়টি দেখে উদ্যান পালন দফতর। জেলা উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিক জয়দীপ বর্মন দাবি করেন, খোলা বাজারের সঙ্গে পাইকারি বাজারের এতটা ফারাক থাকার অভিযোগ ঠিক নয়। চাষিরা কেজি প্রতি ৬০-৭০ টাকা দাম পাচ্ছেন বলেও দাবি করেন উদ্যান পালন আধিকারিক। বুধবার রাতে সব শুনে জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী নিজেই খোঁজখবর নিতে শুরু করলে এদিন সকালে ফুলবাড়ির লঙ্কা মান্ডিতে দাম বেড়ে যায় কেজি প্রতি ২৮ টাকা। এদিন ফুলবাড়ির মান্ডিতে লঙ্কা বিক্রি করতে গিয়ে দাম না পেয়ে হতাশ লঙ্কা চাষি জিল্লুর মোল্লা, বিপ্লব টিগ্গা, সাদিক আলিরা বলেন, “গতবারের তুলনায় এ বছর একটানা দাবদাহের জেরে লঙ্কার ফলন খুবই কম হয়েছে। অথচ দাম পাচ্ছি না।” চাষিদের বক্তব্য, গত বছর এক বিঘা জমিতে ফলন হয় ১২ থেকে ১৪ কুইন্টাল। বিঘা প্রতি লঙ্কা চাষের খরচ হয়েছিল ১৮-২০ হাজার টাকা। এ বছর সার-সহ সব জিনিসের দাম বৃদ্ধির ফলে চাষের খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। ফলন হয়েছে বিঘা প্রতি মাত্র ৩-৪ কুইন্টাল। প্রথম দিকে দাম কিছুটা মিললেও কয়েকদিন ধরে কেজি প্রতি ৮-১৪ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। জেলার গঙ্গারামপুরের ফুলবাড়ি-সহ বানিহারি, মালঞ্চা, হজরতপুর, আউশা, পুলিন্দা, গোচিহার চালসা এলাকায় ফি বছর প্রচুর পরিমাণে লঙ্কা চাষ হয়। উদ্যান পালন দফতর সূত্রের খবর, প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে লঙ্কা চাষ করে গড়ে ফলন মেলে ২০ হাজার টনের বেশি। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে সমস্ত লঙ্কা ১০ নম্বর রাজ্য সড়কের উপর গড়ে ওঠা ফুলবাড়ি বাজারে বিক্রির জন্য ভিড় করেন চাষিরা। ফুলবাড়ি থেকে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির পাশাপাশি অসম, বিহার, ঝাড়খন্ড এমনকী ওড়িশাতেও লঙ্কা রফতানি হয়। অথচ জেলা সদর বালুরঘাট এবং মহকুমা শহর গঙ্গারামপুরের খোলা বাজারে এদিনও প্রতি কেজি লঙ্কা ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বালুরঘাটের প্রধান তহবাজারের সবজি মার্কেটে লঙ্কার দাম ছিল কেজি প্রতি ৭০ টাকা এবং সাহেবকাছারি বাজারে দাম ছিল ৮০ টাকা। বিজেপির জেলা সম্পাদক মানস সরকার অভিযোগ করেন, সঠিক পরিকল্পনা ও পরিকাঠামো তৈরি না করে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে চাষিদের ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে। |