তমলুক থেকে ফিরলেন যুবক
কমছে শিবির, রক্তদাতাও, মেডিক্যালে রক্তের সঙ্কট
বৃহস্পতিবার দুপুর। ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে হন্যে হয়ে ঘুরছিলেন এক যুবক। নাম প্রসেনজিৎ সাঁতরা। বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরে। তাঁর দিদি খুকুমণিদেবী অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছেন তমলুকের এক নার্সিংহোমে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে ৫ বোতল রক্ত লাগবে। গ্রুপ ‘ও’ পজিটিভ। কিন্তু মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে এই গ্রুপের এক বোতল রক্তও মজুত নেই। প্রসেনজিৎ বললেন, “তমলুক থেকে এখানে এসেছি। ভেবেছিলাম, মেদিনীপুরের মতো হাসপাতালে গেলে রক্ত মিলবে। এখন কী করব ভেবে পাচ্ছি না।”
শুধু পূর্ব মেদিনীপুরের এই যুবক নন, এমন সমস্যায় পড়েছেন অনেকেই। কেউ কেউ আবার পরিস্থিতি দেখে পরিজনদের কাছে রক্ত দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন সমীর সাউ। বাড়ি মেদিনীপুরে। তাঁর এক আত্মীয়ের জন্য বি পজিটিভ রক্ত লাগবে। তিনি বলেন, “মেডিক্যালে রক্ত নেই। তাই এক পরিচিতের কাছেই রক্তে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছি।” গত ক’দিন ধরে রক্তের চরম সঙ্কট চলছে মেদিনীপুর মেডিক্যালে। সমস্যায় পড়েছেন রোগীর পরিবারের লোকজন। অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে মাত্র ৮ বোতল রক্ত ছিল। তা-ও সব নেগেটিভ গ্রুপের। ‘এ’ নেগেটিভ ৩ বোতল, ‘বি’ নেগেটিভ ৩ বোতল, ‘ও’ নেগেটিভ ২ বোতল। এই সময় এমনিতেই জেলার হাসপাতালগুলিতে রক্ত-সঙ্কট থাকে। তবে এ বার সঙ্কট বেড়েছে। জেলার মধ্যে আবার সব থেকে বেশি ‘চাপ’ থাকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে। কারন, শুধু দুই মেদিনীপুর নয়, আশপাশের জেলা থেকেও অনেক রোগী এখানে ভর্তি হন।
মেদিনীপুর মেডিক্যালে ব্লাডব্যাঙ্কের সামনে খালি তালিকা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
কেন এই সমস্যা? বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে বছরের বিভিন্ন সময় রক্তদান শিবির হয়। এ ক্ষেত্রে ‘এগিয়ে’ থাকত যুব সংগঠন ডিওয়াইএফ, ছাত্র সংগঠন এসএফআই। এক সময় এদের উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ধারাবাহিক রক্তদান শিবির হয়েছে। তবে এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতি। জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা সিপিএমের ‘নিয়ন্ত্রণের’ বাইরে। ফলে এই সব এলাকায় শিবিরের মতো কর্মসূচি করতে পারছে না দলের ছাত্র-যুব সংগঠন। পরিস্থিতি মেনে ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদক কমল পলমল বলেন, “আমাদের ১৭৩ টি লোকাল কমিটি বছরের বিভিন্ন সময় রক্তদান শিবির করত। এই সব শিবির থেকে বছরে প্রায় ১৩ থেকে ১৫ হাজার বোতল রক্ত সংগ্রহ হত। এখন তা হচ্ছে না। ফলে সঙ্কট বেড়েছে।” কেন হচ্ছে না? জেলা সম্পাদকের বক্তব্য, “পরিস্থিতি নেই। শিবির করলে হামলাও হতে পারে। এমন ঘটনা ঘটেওছে।” অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। তবে যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী মানছেন, “রক্তের সমস্যা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শিবিরের সংখ্যা বাড়ানো উচিত।” তিনি বলেন, “সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিটি ব্লকে রক্তদান শিবির হচ্ছে। অনেক অঞ্চল স্তরেও শিবির হয়েছে।”
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, এখন শিবির প্রতি রক্তদাতার সংখ্যা কমেছে। ফলে, সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। ব্লাড ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক বলেন, “এ বছর শিবিরের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তবে শিবিরে রক্তদাতাদের সংখ্যা কমার জন্যই রক্ত সংগ্রহ কম হয়েছে।” ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, ২০১০ সালে শিবির প্রতি যেখানে গড়ে ৫৫ জন রক্ত দিয়েছেন, ২০১১ সালে সেখানে গড়ে ৪৯ জন রক্ত দেন। এ বার সংখ্যাটা আরও কমেছে। মেদিনীপুর মেডিক্যালের সুপার যুগল কর বলেন, “রক্তের অভাব রয়েছে। এই সময় শিবিরের সংখ্যা আরও বেশি হলে ভাল হয়।” এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্লাব- সংগঠনকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.