মাঝ রাতে হাসপাতালের বিছানা থেকে কাঁপতে কাঁপতে মেঝেয় পড়ে গিয়েছিলেন এক বৃদ্ধ। অভিযোগ, অন্য রোগীরা বারবার অনুরোধ করলেও নার্স বা অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁকে বিছানায় তোলেননি। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। সারা রাত ওয়ার্ডের মেঝেয় দেহটি পড়ে থাকে।
বুধবার গভীর রাতে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে ক্ষোভ ছড়ায়। মৃত মধুসূদন শীটের (৬৯) বাড়ি বাঁকুড়া থানার পুড়ামৌলি গ্রামে। তাঁর আত্মীয়েরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘অমানবিকতা’র অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান। হাসপাতাল সুপারকে লিখিত অভিযোগও করেন। সুপার পঞ্চানন কুণ্ডুর অবশ্য দাবি, “ওই বৃদ্ধ বিছানা থেকে পড়ে যাওয়ার পরেই মারা যান।” রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “সারা রাত কেন দেহটি পড়ে ছিল, তা খোঁজ নিয়ে দেখব।”
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মধুসূদনবাবুর পেটে টিউমার থাকায় কয়েক সপ্তাহ আগে অস্ত্রোপচার করা হয়। রক্তক্ষরণ হওয়ায় শনিবার ফের তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁর জামাই স্বরূপ নন্দী সুপারের কাছে অভিযোগ করেন, বুধবার রাতে শ্বশুরমশাই খুব কাঁপছিলেন। তাঁর কাছে শাশুড়ি ছিলেন। রাত প্রায় আড়াইটায় এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী এসে শাশুড়িকে ওয়ার্ড থেকে প্রায় জোর করে বের করে দেন। ওয়ার্ডের অন্য রোগীদের কাছে তিনি জানতে পারেন, এর পরেই তাঁর শ্বশুরমশাই কাঁপতে কাঁপতে বিছানা থেকে নীচে পড়ে যান। ওয়ার্ডের অন্য রোগীরা নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ডাকলেও তাঁরা সময়ে আসেননি। তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার সময় ওয়ার্ডে ঢুকে দেখি বিছানার পাশে মেঝের উপর শ্বশুরমশাইয়ের দেহ পড়ে রয়েছে।” সারা রাত ওয়ার্ডেই দেহটি ফেলে রাখায় রোগীদের একাংশও অস্বস্তির মধ্যে রাত কাটান বলে জানিয়েছেন।
তবে হাসপাতাল সুপারের দাবি, “রাতে পুরুষদের ওয়ার্ডে মহিলাদের রাখা যায় না বলেই ওই বৃদ্ধের স্ত্রীকে বাইরে যেতে বলা হয়েছিল। ঘটনাটি ‘পুলিশ কেস’ হওয়ায় তদন্তের স্বার্থেই দেহটি আর বিছানায় তোলা হয়নি।” হাসপাতালের নার্সিং সুপারিন্টেডেন্ট দীপালি নাগের দাবি, “ওই সময় ওয়ার্ডে মাত্র দু’জন নার্স ছিলেন। কোনও পুরুষ কর্মী না থাকায় তাঁরা দেহটি বিছানায় তুলতে পারেননি।” তদন্তের স্বার্থেই যদি দেহটি মাটিতে ফেলে রাখা হয়, তা হলে পুলিশকে রাতেই কেন খবর দেওয়া হল না? সুপার বলেন, “পুলিশকর্মীরা সাধারণত দিনের বেলায় হাসপাতালে অস্বাভাবিক মৃত্যু হওয়া দেহগুলি উদ্ধার করতে আসেন। তা ছাড়া মৃত্যুর তিন ঘণ্টা পর্যন্ত দেহ পর্যবেক্ষণে রাখা নিয়ম। তাই দেহটি অন্যত্র সরানো যায়নি।” |