ঘরে কখন জল ঢুকেছে টেরই পাননি সুনীতা দেবী। ভোর সকালে উঠে তড়িঘড়ি জামাকাপড়, বাসনপত্র নিরাপদ জায়গায় সরানোর কাজ শুরু করেন তিনি। এর মধ্যেই ভেসে যায় ১৪ মণ ধান, রান্নার হাড়ি, কড়াই থেকে বাসনপত্র। সে সবের আশা ছেড়ে দিয়ে এবার ছোট্ট দুই ছেলেকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে উঁচু জায়গায় যাওয়ার জন্য ঘর থেরে বের হন তিনি। তখন রাস্তার উপর দিয়ে কোমর জলের স্রোত বইছে। সেই স্রোত দেখে পিছিয়ে যান তাঁরা। আতঙ্কে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায় সুনীতা ওঁরাওয়ের। সে খবর পৌঁছে যায় প্রশাসনের উদ্ধারকারী দলের কাছে। ‘লাইফ জ্যাকেট’ পড়ে দড়ি নিয়ে জলে নামেন তাঁরা। দড়ির সেতু তৈরি করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যান সুনীতা দেবীর পরিবারকে। শুধু তিনিই নন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মিলন মোড়ের পানবস্তি, কড়াইবাড়ি, বাবুভাসার অন্তত ৫০০ জন বাসিন্দাকে এভাবেই উদ্ধার করে নিরাপদ ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যান উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা। স্থানীয় যুবকরাও তাঁদের সঙ্গে উদ্ধার কাজে নামেন। দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “সাধারণ মানুষকে যাতে দ্রুত নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায় সে জন্য উদ্ধারকারী দল নামানো হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার একটি বিশেষ দল ছাড়াও সিভিল ডিফেন্স, ব্লক প্রশাসনের দলও কাজ করছে। এ ছাড়া স্থানীয় যুবকরাও সহযোগিতা করছেন।” এ দিন মিলন মোড়ের পানবস্তিতে গিয়ে দেখা যায় ‘লাইফ জ্যাকেট’ পড়ে স্রোত ঠেলে গ্রামের পথে ঢুকছেন উদ্ধারকারীরা। বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য রায়গঞ্জ থেকে ৩৫ জনের একটি বিশেষ দলকে নিয়ে এসেছে প্রশাসন। স্থানীয়রা রয়েছেন। সে সময় বাড়ির ছাদে, উঁচু জায়গায় প্রচুর মানুষ আটকে রয়েছেন। জলের গতি ক্রমশ বাড়তে থাকায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তাঁরা। সুনীতা দেবী বলেন, “আমরা সকালে ঘুম থেকে ওঠে দেখি জলে থইথই করছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি উঁচু জায়গায় রাখার জন্য সবাই মিলে চেষ্টা করি। এদিকে জল বেড়ে যায়। যা স্রোত তা পার হয়ে ছোট দুই ছেলেকে নিয়ে কিভাবে পাকা সড়কে উঠব ভেবে পাচ্ছিলাম না। শেষপর্যন্ত কয়েকজন গিয়ে দড়ি দিয়ে সেতু তৈরি করে আমাদের উদ্ধার করে।” সুনীতা জানান, স্বামীর সাইকেলের দোকান। তা দিয়ে সংসার চলে। বন্যায় ধান, বাসন সব ভেসে গিয়েছে। কি করে চলবে তা তিনি বুঝতে পারছেন না। |