সৌমিত্র কুণ্ডু • শিলিগুড়ি |
শিলিগুড়ি পুরসভার ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের লিম্বু বস্তির নুর আলম, রোশন রায়দের ঘরের ভিতর এক কোমর জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। উনুন জ্বালানো দূরের কথা। ইট পেতে খাট উঁচু করে কোনরও রকমে জিনিসপত্র জল থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
নিকাশির বেহাল পরিস্থিতির জন্য ঘরের মধ্যে জল ঢুকে পড়ায় বৃহস্পতিবার বেলা ১০টা নাগাদ ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের জ্যোতিনগর, সারদা শিশু রোডের বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। এলাকার কাউন্সিলর অতুল দাস গেলে বাসিন্দারা ঘিরে ধরেন। সমস্যা জানিয়ে তিনি মেয়র পারিষদ দুলাল দত্তকে ফোন করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান। পরে পূর্ত বিভাগের মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পাল, বরো চেয়ারম্যান শর্মিলা শর্মা পুরসভার বাস্তুকারদের নিয়ে গিয়ে সেবক রোডের ধারে নর্দমার উপর কালভার্টের একাংশ ভেঙে, রাস্তা কেটে জল বার করলে অবরোধ ওঠে।
৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে শিবনগর হাতিডোবা এলাকায় পঞ্চনই নদীর পাড় ভাঙছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নদীর পাড়ে থাকা অন্তত ১০টি বাড়ি। পরিস্থিতি দেখে কৃষ্ণবাবু দ্রুত বালির বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের আশ্বাস দেন। ত্রাণের দাবিতে পুরসভায় গিয়ে এ দিন বিক্ষোভ দেখান পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জলমগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “পুর এলাকায় ১ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকর ঘরেই জল ঢুকে পড়েছে। রান্নার জায়গা নেই। তাদের অনেকের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক জায়গায় পুরসভার দল গিয়ে নালা কেটে জমা জল বার করে দিয়েছে।” পুর কর্তৃপক্ষ জানান প্রায় ১০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে তাঁরা মনে করছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সমীক্ষা করে রাজ্য এবং কেন্দ্রের কাছেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া হবে বলে মেয়র জানিয়েছেন। বেহাল নিকাশির জন্য বুধবার মহানন্দার ধারে থাকা ১-৫, ৩১, ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডগুলিতে ভোর রাতের দিকে জল ঢুকে পড়ায় বাসিন্দারা জলবন্দি হয়ে পড়েন। একই জলচিত্র দেখা দিয়েছে ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের জ্যোতিনগর, গণেশ ঘোষ কলোনি, উৎপল নগর, রাজীবনগর এলাকায়। জলে ডুবে উৎপল নগরে একটি শিশু মারাও গিয়েছে। নদীর জল দেখতে গিয়ে এক যুবক নদীতে পড়ে মারা যান ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে বাঘাযতীন কলোনি এলাকায়। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের মিলনপল্লি এবং জলপাইমোড় লাগোয়া এসএফরোডের ধারে এলাকাগুলিতে জল জমে যায়। জলমগ্ন হয়ে পড়ে শক্তিগড়, অশোকনগর এলাকা। রাজীবনগরের জলবন্দি এলাকার বাসিন্দা দীপেন শর্মা, সঞ্জয় ছেত্রীরা জানান, এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল বলেই জল জমছে। একই কথা জানিয়েছেন চয়নপাড়ার দিলীপ রায়, দীপক রায়রা। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের সুমিত্রা লামা, মাধব তালুকদার সঞ্জয় প্রধানরা জানান, ব্যবস্থা নিতে কেউ না আসায় বাধ্য হয়েই রাস্তা অবরোধ করতে হয়েছে। প্রশাসনের দেওয়া চিড়ে, গুড় পুরসভার তরফে জলবন্দি এলাকাগুলিতে পাঠানো হলেও অনেক জায়গায় বাসিন্দাদের দুপুরের খাবার ব্যবস্থা ছিল না। পুরসভার অনুরোধে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের তরফে ২ হাজার জনের খিচুড়ি রান্না করে বিকালে ১ এবং ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিলি করা হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করতে এ দিন বিকালে শহরের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে নিয়ে বৈঠক করেন পুর কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “বিপর্যয় মোকাবিলায় আগাম ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল পুর কর্তৃপক্ষের। জল উঠলে কোথায় বাসিন্দারা আশ্রয় নেবেন তা আগাম ঠিক করে রাখা দরকার। যাদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুরসভার তরফে তা তৈরি করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। |