টানা মুষলধারে বৃষ্টি। দিনের কখনও কড়া রোদ। আবার রাতের আকাশ। নিমেষে আবার বদলে যাচ্ছে আবহাওয়া। রোদবৃষ্টির এই খেলায় রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে শিলিগুড়িতে। গত ১৬ জুলাই শিলিগুড়িতে প্রায় ২৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। কার্যত ভেসে যায় গোটা শহর। যা গত ৯ বছরের রেকর্ড বলেই কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়ে দিলেন। এর আগে ২০১১ সালের জুলাই মাসে শিলিগুড়িতে একদিন ২৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড ছিল। উত্তরবঙ্গের অন্যত্র অবশ্য এরথেকে অনেক বেশি বৃষ্টির রেকর্ড রয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “তথ্য পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে গত ১৬ জুলাই শিলিগুড়ির ২৪ ঘন্টার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ গত নয় বছরের রেকর্ড। প্রতিবার বর্ষার মরশুমে এই অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি হয়। কয়েকটি অত্যাধিক বৃষ্টিপ্রবণ এলাকাগুড়িতে আমরা নজর রাখি। কিন্তু শিলিগুড়িতে দীর্ঘদিন এত বৃষ্টি হয়নি।” |
দার্জিলিঙের তিনধারিয়ায় ধস। |
আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, ১৬ জুলাই শিলিগুড়িতে যে ২৪১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়, তার ১৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি সন্ধ্যার পর থেকে রাতভর হয়। মৌসুমী অক্ষরেখা এবং ঘূর্ণাবর্তের জেরেই দার্জিলিং জেলার হিমালয়ের পাদদেশে থাকা শিলিগুড়িতে এত বেশি পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। দার্জিলিং পাহাড়ে অবশ্য বৃষ্টির পরিমাণ কম। স্বাভাবিক বৃষ্টিই হচ্ছে পাহাড়ে। ইতিমধ্যে সিকিমে বৃষ্টিপাতের পরিমান স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ১২ শতাংশেরও বেশি ছাড়িয়ে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গে তা ১৫-২০ শতাংশ ছাড়াবে বলে মনে করচেন আবহাওয়াবিদেরা। সরকারি তথ্য অনুসারে, রেকর্ড বৃষ্টির নজির উত্তরবঙ্গে বরাবর হয়েছে। বারভিসা লাগোয়া চেকোতে গত ২০০৪ সালে ৮ সেপ্টেম্বর ৪৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ২০১০ সালের ২১ জুলাই হাসিমারায় ৩৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ২০০৭ সালের ১৫ অগস্ট জলপাইগুড়িতে ৩৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এ ছাড়া সেবকে ২০০৯ সালের ৩ জুলাই ৩৩২ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড রয়েছে। আবহাওয়া দফতরের কয়েকজন আধিকারিক জানিয়েছেন, স্বাভাবিক নিয়মে শিলিগুড়িতে ১৫০ থেকে ২০০ মিলিমিটারের মত বৃষ্টি হয়। তবে ২৫০ মিলিমিটারের কাছাকাছি শিলিগুড়ি শহরে বৃষ্টি সত্যিই ভাবা যায় না। মূলতা গজলডোবা, সেবক, দোমহনি এবং নেওড়া এলাকাই বেশি বৃষ্টি হয়। |
প্রায়ই এলাকাগুলিতে বৃষ্টিপাত ২৫০ মিলিমিটার ছাড়ায়। এর মধ্যে গত সপ্তাহেই মিলেছিল স্বস্তির খবর। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল, মৌসুমী অক্ষরেখা উত্তরের আকাশ থেকে ধীরে ধীরে দক্ষিণের দিকে সরে যাচ্ছে। কিন্তু আচমকা ২৪ ঘন্টা ফের বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। দক্ষিণ থেকে ফের উত্তরের আকাশে ফেরৎ এসেছে মৌসুমী অক্ষরেখা। আর তাই হিমালয়ের গায়ে আছড়ে পড়ে বৃষ্টিতে ভাসাচ্ছে গোটা পাহাড়, সমতল। এমনটাই জানাচ্ছেন কেন্দ্রীয় আবহওয়া দফতরের আধিকারিকেরা। খারাপ খবর, আগামী ২৪ ঘন্টা আবহাওয়ার খুব একটা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের আধিকারিক গোপীনাথবাবু এই দিন বলেছেন, “দক্ষিণ থেকে উত্তরে মৌসুমী অক্ষরেখা ফিরে এসেছে। বিশেষ করে উত্তর পূর্বে এর প্রভাব বেশি পড়েছে। এর জেরেই বৃষ্টিতে ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর:
গত ২৪ ঘণ্টায় দার্জিলিঙে ১৫২ মিলিমিটার, সুখিয়াপোখরিতে ১০০ মিলিমিটার, সেবকে ১৭৩ মিলিমিটার, গজলডোবায় ২৬৬ মিলিমিটার, দোমহনীতে ১৩২, বাগরাকোটে ১৩২ মিলিটার, হাসিমারায় ১৮৬ মিলিমিটার, বারভিসায় ১৪৩ মিলিমিটার, আলিপুরদুয়ারে ১২৬ মিলিমিটার, কুমারগ্রামে ১৮০ মিলিমিটার এবং শিলিগুড়িতে ১৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। |