মিলন মোড়ে দেখা, হাত মেলালেন অশোক-গুরুঙ্গ
ন্যায় ভেসে দিয়েছে চরাচর। কিন্তু রাজনীতির দুই ভিন্ন স্রোত অভূতপূর্ব ভাবে কাছাকাছি চলে এল বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে মিলন মোড়ে। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ হাত জড়িয়ে ধরলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের। টিপটিপে বৃষ্টির মধ্যেই একে অপরকে বুকেও টেনে নিলেন তাঁরা। ছিলেন সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকারও।
দু’পক্ষই আলাদা আলাদা ভাবে গিয়েছিলেন বন্যা দুর্গতদের দেখতে। আচমকা দেখা হয়ে যায়। উভয়পক্ষই পরস্পরের সহযোগিতা চেয়ে আশ্বাস বিনিময়ও করছেন। প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর হাত ধরে বিমল গুরুঙ্গ বলেন, “অনেক ধন্যবাদ স্যর। আমরা প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিটিএ গঠন করতে চলেছি। আগামী দিনেও আপনাদের সহযোগিতা চাইছি।” উত্তরে খানিকটা যেন অভিভাবকের ঢঙেই অশোকবাবু, জীবেশবাবুরা, পাহাড়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে ভাল করে জিটিএ চালানোর পরামর্শ দিলেন গুরুঙ্গকে।
ত্রাণ শিবিরে যাওয়ার পথে অশোক ভট্টাচার্য ও বিমল গুরুঙ্গ।
বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির মিলন মোড়ে। —নিজস্ব চিত্র
মাত্র সাত দিন আগেই গুরুঙ্গের নেতৃত্বে সন্ত্রাস চলছে অভিযোগে জিটিএ ভোট থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করেছে সিপিএম। এ দিন কিন্তু দু-তরফ কাছাকাছি আসতেই গুরুঙ্গ এগিয়ে গিয়ে প্রাক্তন পুরমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরলে তিনিও সমান আন্তরিকতার সঙ্গে মোর্চা সভাপতির হাত ধরেন। তারপরে বড় জোর মিনিট তিনেক কথাবার্তা হয়েছে দু’পক্ষের।
সেখানে জিটিএ ভোট নিয়ে কোনও প্রসঙ্গ ওঠেনি। পরে অশোকবাবু বলেন, “সে সব কথা বলার মতো পরিস্থিতি এই দিন ছিল না।” বরং অশোকবাবু বলেন, “বন্যা দুর্গতদের পাশে আমরা দাঁড়িয়েছি। উনিও সেখানে পৌঁছেছেন। দেখা হয়েছে। সৌজন্য বিনিময় হয়েছে। আমরা যে বরাবর পাহাড়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফেরানোর পক্ষে সেটা গুরুঙ্গ উপলব্ধি করেছেন। আমাদের তা-ই মনে হল।”
দু’পক্ষের এ দিনের আচরণকে তাই ‘অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন পাহাড়-সমতলের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। তাঁদের মতে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিটিএ গঠনের অধিকার পেলেও আগামী দিনে প্রশাসক হিসেবে সকলকে নিয়েই যে তিনি চলতে চান, সেই বার্তাই গুরুঙ্গ দিতে চেয়েছেন। গুরুঙ্গ নিজেও বলেছেন, “অশোকবাবু, জীবেশবাবুরা প্রবীণ রাজনীতিক। সামনাসামনি দেখা হলে সৌজন্য বিনিময় করতেই হবে। আমিও রাজনীতিক। উন্নয়নের কাজে সকলের সহযোগিতা চাই। বন্যা কবলিত এলাকাতেও সকলকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। সে কথাই বলেছি। তাঁদের আশ্বাস পেয়ে আমি খুশি।”
দোমহনির ত্রাণশিবিরে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।
এই ঘটনা যে পাহাড়-সমতলের মেলবন্ধনের ক্ষেত্রে ‘বার্তাবহ’ তা প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর কথাতেও স্পষ্ট। তিনি বলেন, “গুরুঙ্গের সঙ্গে আমার এর আগে কবে কথা হয়েছে, মনে পড়ে না। দার্জিলিং পার্বত্য পরিষদের সময় হতে পারে। আজ উনিই এগিয়ে এসে আমার হাত জড়িয়ে ধরলেন। জিটিএ নিয়ে তাঁকে আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েছি।”
এদিন বেলা ১১টা নাগাদ মোর্চা সভাপতি মিলনমোড় এলাকায় গিয়ে ভাঙা বাঁধ পরিদর্শন করেন। পরে ত্রাণ শিবিরেও যান। সেখানে তিনি বলেন, “যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে সকলে মিলে কাজে নামতে হবে। ইতিমধ্যেই আমাদের স্বেচ্ছাসেবকেরা কাজে নেমেছেন। প্রশাসন, সেচ দফতর এবং সামরিক বাহিনীও কাজে নেমেছে। সকলে মিলেও পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীকেও সমস্ত ঘটনা জানাব।” জিটিএ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনিও প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, “আজ এই বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাই না।”
পাশাপাশি, বৃহস্পতিবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরে হরকা বাহাদুর ছেত্রী এ দিন বলেন, “জিটিএ গঠন হলে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা পাব বলেই আশা করছি। স্বাধীনতার পর থেকে দার্জিলিংয়ে পরিকাঠামোগত কোনও উন্নয়ন হয়নি। সাধারণ মানুষের সেই প্রত্যাশাকে আমাদের পূরণ করতে হবে।” হরকা জানান, এই কাজে সরকার যে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেই কথা তারা রাখবে বলেই আমরা মনে করি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.