দু’টি জেলার দু’টি হোম থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ৪০টি তরুণীকে খুঁজে বার করতে পারেনি সিআইডি। তাদের তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্ট ওই তরুণীদের সন্ধান ও তদন্তের দায়িত্ব দিল সিবিআই-কে। সেই সঙ্গেই রাজ্যে যে-সব হোম রয়েছে, তাদের সামগ্রিক সমস্যা খতিয়ে দেখে উচ্চ আদালতে রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে। গুড়াপের হোমে গুড়িয়া নামে এক আবাসিক মহিলার রহস্যমৃত্যু ঘিরে তোলপাড়ের মধ্যেই এল এই নির্দেশ।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুরের ‘সংলাপ’ এবং মেদিনীপুরের ‘বিদ্যাসাগর হোম’ থেকে বছর দুয়েক আগে মোট ৪০ জন তরুণী নিখোঁজ হয়ে যান। সেই সময় হোমে আবাসিকদের উপরে অত্যাচার ও নানা ধরনের অনিয়মের তদন্ত এবং নিখোঁজদের সন্ধানের আবেদন জানিয়ে দীপক প্রহ্লাদকর নামে এক ব্যক্তি হাইকোর্টে জনস্বার্থের মামলা করেন। হাইকোর্ট সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে নিখোঁজ মেয়েদের খুঁজে বার করার জন্য সিআইডি-কে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল ও বিচারপতি কনোয়ালজিৎ সিংহ অহলুওয়ালিয়ার ডিভিশন বেঞ্চে বৃহস্পতিবার মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে। সিআইডি আদালতে জানায়, অনেক চেষ্টা করেও নিখোঁজ মেয়েদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। সিআইডি-র জবাবে অসন্তুষ্ট ডিভিশন বেঞ্চ তাদের হাত থেকে তদন্তের দায়িত্ব সরিয়ে নিয়ে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়। প্রাথমিক তদন্তের পরে তিন সপ্তাহের মধ্যে সিবিআই-কে হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই মামলা সংক্রান্ত সব কাগজপত্র অবিলম্বে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে বলা হয়েছে সিআইডি-কে।
কয়েক দিন আগেই হুগলির গুড়াপে ‘দুলাল স্মৃতি সংসদ’ নামে একটি বেসরকারি হোমে গুড়িয়া নামে এক আবাসিক মহিলার রহস্যময় মৃত্যুর কথা জানাজানি হয়। সেই বিষয়ে একটি জনস্বার্থের মামলায় রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে হাইকোর্ট। ওই ঘটনারও তদন্ত করছে সিআইডি। এ দিন শুনানির সময় বিভিন্ন হোমে মহিলা আবাসিকদের উপরে অত্যাচার, অমানবিক ব্যবহার নিয়ে বারবার অভিযোগ ওঠে। নানা মন্তব্য করে বিচারপতিরা বুঝিয়ে দেন, তাঁরা এ সম্পর্কে অবহিত। হোম নিয়ে হাইকোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চে অনেক মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এই বিষয়টি নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। তার পরেই রাজ্যের সব হোমের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করে আদালতে পেশ করার জন্য রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে ঠিক কী কী তথ্য জানাতে হবে, ডিভিশন বেঞ্চ তা-ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। রাজ্যে হোমের সংখ্যা কত, সরকারি ও বেসরকারি হোমের অনুপাত কী, কোন হোমে কত আবাসিক থাকেন, হোমগুলির আয়-ব্যয়ের হিসেব-সহ সব তথ্য পেশ করতে হবে হাইকোর্টে। আবাসিকদের কে কোন পরিস্থিতিতে হোমে আসতে বাধ্য হয়েছেন, হোমে তাঁরা কী করেন, কী খান, তাঁদের জন্য কী কী প্রকল্প রয়েছে মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে সবই জানাতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন হোমে কী ধরনের অত্যচার হয়, হোমে অভিযোগ জানানোর কোনও ব্যবস্থা রয়েছে কি না, রাজ্য সরকারের তরফে নজরদারির কী ব্যবস্থা রয়েছে, কারা হোম পরিচালনা করেন তা-ও জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। বিভিন্ন বেসরকারি হোমের পরিচালন কমিটির সদস্যদের পরিচয়ও রিপোর্টে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে মানবাধিকার কমিশনকে। সর্বোপরি তদন্তের ক্ষেত্রে কমিশনকে গোপনতা রক্ষা করতে বলা হয়েছে। |