কেন্দ্রের শিক্ষার অধিকার আইনের ধাক্কায় এক লপ্তে কর্মচ্যুত হয়ে পড়েছেন প্রায় ১,৩০০ মানুষ। তাঁদের মধ্যে ৬৩৯ শিক্ষক। যাঁদের পোশাকি নাম সেবক বা সেবিকা। বাকিরা অশিক্ষক কর্মী।
১৯৯৯ সালে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর কলকাতায় ১ লক্ষ ৪০ হাজারের কিছু বেশি স্কুলছুট গরিব শিশুর খোঁজ পায়। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই পথশিশু বা বস্তিশশু। ওই শিশুদের ফের স্কুলে ফিরিয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে ২০০১ সালে সর্বশিক্ষা অভিযানের আওতায় ‘শিক্ষালয়’ প্রকল্প শুরু হয়। ওই প্রকল্পে শিক্ষক ওরফে সেবক বা সেবিকা নিয়োগের দায়িত্ব পায় বিভিন্ন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সেবক-সেবিকারা এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার স্কুলছুট গরিব শিশুকে পড়িয়ে সরকারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছেন। বিনিময়ে পেয়েছেন ১০০০ টাকা করে মাসোহারা। যা পরে বেড়ে ২৫০০ টাকা হয়েছিল। কিন্তু সর্বশিক্ষা মিশন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গত ৩১ মার্চ ‘শিক্ষালয়’ প্রকল্প বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কর্মচ্যুত প্রায় ১,৩০০ মানুষ।
সর্বশিক্ষা মিশন কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা, কেন্দ্রের শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী এখন ৬ থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের প্রথাগত (ফরমাল) স্কুলে ভর্তি নেওয়া বাধ্যতামূলক। অন্য কোনও ধরনের স্কুলে আর ওই শিশুদের পড়ানো যাবে না। সুতরাং, শিক্ষালয় প্রকল্পের আওতায় যে স্কুলছুট শিশুরা সরকারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিত, তারা এখন চাইলেই প্রথাগত স্কুলে ভর্তি হতে পারছে। তাই নির্দেশিকা জারি করে ‘শিক্ষালয়’ প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সর্বশিক্ষা মিশনের এ রাজ্যের প্রকল্প আধিকারিক ছোটেন থেনধুপ লামা বলেন, “কেন্দ্রের শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী ওই শিশুরা এখন এমনিই ফরমাল স্কুলে ভর্তি হতে পারছে। তা ছাড়া তাদের ইনফরমাল স্কুলে পড়ানোও যাবে না। সে কথাও ওই আইনেই বলা আছে। তা হলে আর শিক্ষালয় প্রকল্প রেখে লাভ কী?” যাঁরা কর্মচ্যুত হলেন, তাঁদের স্বার্থে সর্বশিক্ষা মিশন কি ব্যবস্থা নেবে? ছোটেন বলেন, “এটা আমি বলতে পারব না। তবে তাঁদের মধ্যে যাঁদের যোগ্যতা আছে, তাঁরা স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় বসতে পারেন।”
ওই প্রকল্প চালানোর জন্য সর্বশিক্ষা মিশন টাকা দিত কলকাতা পুরসভার ‘সিটি লেভেল প্রোগ্রাম অফ অ্যাকশন’ (সিএলপিওএ)-কে। সিএলপিওএ ওই টাকা নির্দিষ্ট কিছু বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে ভাগ করে দিত। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি টাকা দিত সেবক-সেবিকাদের। এখন কর্মচ্যুত সেবক-সেবিকারা ‘কলকাতা শিক্ষালয় টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ গড়ে আন্দোলন করেছেন। তাঁদের নেতা প্রদ্যোৎ নাথ বলেন, “একে অত অল্প টাকায় কাজ করতাম। তার উপর বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি আমাদের টাকা দেওয়া নিয়ে গড়িমসি করত। এখন ওই আয়টুকুও বন্ধ!” ভবিষ্যতে অন্য প্রকল্পে কি ওই সেবক-সেবিকাদের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা আছে? সিএলপিওএ-র সম্পাদক নন্দিনী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে ভবিষ্যতে তেমন প্রকল্প হলে নিশ্চয় ওঁদের কথাই আগে ভাবব। কারণ ওঁরা প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ। শিক্ষালয় প্রকল্পে যাতে ওঁরা ঠিক ভাবে পড়াতে পারেন, তাঁর জন্য ওঁদের লোরেটো ডে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। তার পর এত বছর কাজটাও করেছেন।” |