বড়র পর এ বার নজর ছোটর দিকে।
বড় শিল্প গড়ার নামে জমি নিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে কিনা, তা দেখার নির্দেশ শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আগেই দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার ক্ষুদ্রশিল্পের ক্ষেত্রেও সরকারি জমি নিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে কিনা, তা দেখার নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন রাজ্যের ক্ষুদ্রশিল্প মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াকে। কোথাও কোনও জমি অব্যবহৃত থাকলে, এমনকী কারখানার জন্য শেড করে ফেলে রাখলেও সেই জমি সংশ্লিষ্ট শিল্পের মালিকের কাছ
থেকে নিয়ে নেওয়া হবে বলে মানসবাবু জানিয়েছেন। সেই জমি শিল্পসংস্থা গড়তে ‘ইচ্ছুক ও উদ্যোগী’ মালিকদের দেওয়া হবে।
রাজ্যের ক্ষুদ্রশিল্প দফতরের অধীন পশ্চিমবঙ্গ ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগমের (ডবলিউবিএসআইডিসি) ৩৮টি শিল্পতালুক এবং ১০টি বাণিজ্য কেন্দ্র (কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স) আছে। এই সমস্ত তালুকে বিভিন্ন সংস্থা সরকারের কাছ থেকে ভাড়ায় বা লিজে জমি-জায়গা পায়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পর নিগমের তরফে জমির ‘সদ্ব্যবহার’ নিয়ে সমীক্ষা শুরু করেছে।
নিগমের চেয়ারম্যান কর্নেল সব্যসাচী বাগচি জানিয়েছেন, জমির ‘সদ্ব্যবহার’ না-করার জন্য এখনও পর্যন্ত ১৯৭টি শিল্পসংস্থাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সব্যসাচীবাবু বলেন, “আমরা দু’টি ভাগে চিহ্নিতকরণের কাজ করেছি। প্রথম ভাগে যে সমস্ত সংস্থা জমি
নেওয়ার পর তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনও কাজ না-করে জমি ফেলে রেখেছে। এই ধরনের সংস্থা রয়েছে ৩৫টি। দ্বিতীয় ভাগে যে সমস্ত সংস্থা ছ’মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত জমি ফেলে রেখেছে। এমন সংস্থার
সংখ্যা ১৬২টি।”
চিহ্নিত সংস্থাগুলির অধিকাংশকেই ‘শো-কজ’ নোটিস পাঠানো হয়েছে। ‘সদুত্তর’ না-মেলায় ১৯৭টি সংস্থার
মধ্যে ৭১টিকে ইতিমধ্যেই জমি ছেড়ে দেওয়ার নোটিস পাঠানো হয়েছে বলে নিগম সূত্রে খবর। ‘যুক্তিসঙ্গত’ কারণ দেখানোয় সাতটি সংস্থাকে ছাড় দিয়েছে নিগম। আরও ১৩টি সংস্থাকে জমি ছেড়ে দেওয়ার নোটিস পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। সব্যসাচীবাবু জানিয়েছেন, বাকি সংস্থাগুলির জমি ফেলে রাখার বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা
নেওয়া হবে।
রাজ্যে শিল্পের প্রসারে, বিশেষত ক্ষুদ্রশিল্পের প্রসারে গুরুত্ব দিয়েছে মমতা-সরকার। মানসবাবুর কথায়, “আমাদের মূল লক্ষ্য ক্ষুদ্রশিল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং রাজ্যের আয় বাড়ানো। সেখানে দিনের পর দিন জমি ফেলে রাখা এবং ক্ষুদ্রশিল্প তালুকের জমি নিয়ে ফাটকাবাজি করা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন।” এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব অনুপ চন্দ, নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বরুণ রায়,চেয়ারম্যান সব্যসাচীবাবু ও ক্ষুদ্রশিল্প দফতরের অন্যান্য আধিকারিকদের নিয়ে একটি কমিটি গড়া হয়েছে বলেও মানসবাবু জানান। সম্প্রতি মহাকরণে মানসবাবুর ঘরে এক বৈঠকের পর অনুপবাবু জানান, জমি নিয়ে ফেলে রাখার ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত সমীক্ষায় শীর্ষে নদিয়ার কল্যাণী। কলকাতার কসবাতেও বেশ কয়েকটি সংস্থার সম্পর্কে জমি নিয়ে ‘অনিয়মের’ অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। উদাহরণ দিতে গিয়ে সব্যসাচীবাবু বলেন, “মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে একটি সংস্থা নিগমের কাছ থেকে ৫৮ কাঠা জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ফেলে রেখে দিয়েছে। বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরে কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সেও জায়গা নিয়ে শিল্প গড়ার বদলে গোডাউন করে রাখা হয়েছে। তার বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
রাজ্যে ক্ষুদ্রশিল্পের প্রসার ঘটাতে, বিশেষত, বাঁকুড়া-পুরুলিয়া-পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো পিছিয়ে-পড়া জেলাগুলিতে শিল্পের প্রসার ঘটাতে নিগম সরকারি খাসজমি অধিগ্রহণ ও বেসরকারি জমি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিগমের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে নিগমের প্রায় ১৭৩ একর এবং উত্তরবঙ্গের ফালাকাটা-আমবাড়িতে ১১৮ একরের মতো জমি পড়েরয়েছে। সরকার এই জমিগুলি দ্রুত কাজে লাগাতে চায়। পাশাপাশি শিল্পতালুকগুলিতে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজের পরিকল্পনাও করা হয়েছে বলে মানসবাবু জানিয়েছেন।
মানসবাবুর কথায়, “গত ৩৪ বছরে শিল্পতালুক বা বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সগুলির জমি-জায়গা নিয়ে কী হচ্ছে, সেদিকে নজরই দেওয়া হয়নি। শিল্পতালুকগুলির আধুনিকীকরণ এবং পরিকাঠামোর উন্নয়নের ব্যাপারেও অবহেলা করেছে পূর্বতন সরকার। আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চাই।” তাঁর কথার সূত্রেই সব্যসাচীবাবু বলেন, “জমি ভাড়া দেওয়ার এজেন্ট হিসাবে নয়, আমরা চাই আমাদের নিগম রাজ্যের শিল্প উন্নয়নের সহযোগী একটি সংস্থা হিসাবে পরিচিত হোক।” |