ভূমি আইনের সঙ্গে ‘দ্বন্দ্বে’ ধন্দ প্রশাসনে
পিপিপি’র উপনগরীতে জমির সংস্থানই অনিশ্চিত
দায়িত্ব রয়েছে। অথচ তা পালন করার ‘এক্তিয়ার’ নেই! রাজ্যের নতুন পিপিপি-নীতি অনুযায়ী কোনও বেসরকারি সংস্থা যদি কোনও উপনগরী প্রকল্পে সামিল হয়, এবং তার উপরে যদি জমি সংগ্রহের দায়িত্ব বর্তায়, তা হলে সংস্থাটির এমন ‘ঢাল-তরোয়ালহীন নিধিরামের’ হালই হবে বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ।
এই সংশয়ের মূলে নতুন সরকারের জমানায় সংশোধিত ভূমিসংস্কার আইন। তারই বাধায় বেসরকারি উদ্যোগে উপনগরীর জন্য প্রয়োজনীয় বিপুল পরিমাণ জমি জোগাড় করা কার্যত অসম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। কেন?
কারণ, গত ২৯ মার্চ রাজ্যের ভূমিসংস্কার আইন (১৯৫৫) সংশোধন করে বিধানসভায় যে বিল পাশ হয়েছে, তাতে ঊর্ধ্বসীমা-বহির্ভূত জমি মঞ্জুরের ক্ষেত্র-তালিকা থেকে ‘উপনগরী’ (টাউনশিপ) বাদ পড়েছে। কিন্তু এর ‘পরিপন্থী’ কথা বলা হয়েছে রাজ্যের নতুন সরকারি-বেসরকারি যৌথ প্রকল্প (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ, সংক্ষেপে পিপিপি) সংক্রান্ত নীতিতে। গত ২১ জুন ঘোষিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ওই পিপিপি-নীতিতে যৌথ উদ্যোগে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য চিহ্নিত ক্ষেত্রগুলির মধ্যে ‘উপনগরী’ অন্যতম!
আর এতেই তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। যেখানে বেসরকারি প্রকল্প তো বটেই, যৌথ উদ্যোগের জন্যও জমি অধিগ্রহণ করতে রাজ্য সরকার নারাজ, সেখানে পিপিপি-উপনগরীর জমি সংগ্রহের দায় বেসরকারি অংশীদারের উপরে বর্তালে ঊর্ধ্বসীমার বেড়া ডিঙ্গিয়ে তারা তা করবে কী ভাবে, সেটা বুঝে উঠতে পারছেন না প্রশাসনের অনেক কর্তা। তাঁদের ধারণা, রাজ্যের জমি অধিগ্রহণ-নীতির পরিপ্রেক্ষিতে পিপিপি-উপনগরীর জমির সংস্থানও ঘোরতর অনিশ্চিত। এক জনের কথায়, “প্রস্তাবিত জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বিলের খসড়া অনুযায়ী বেসরকারি শিল্পের মতো পিপিপি প্রকল্পেও জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। সে ক্ষেত্রে উপনগরীর জন্য সরকারি জমি মজুত না-থাকলে কী হবে?”
সরকারের তরফে এর ব্যাখ্যা মেলেনি। শুধু এটাই নয়, সংশোধিত ভূমিসংস্কার আইন এবং নতুন পিপিপি-নীতিকে পাশাপাশি রেখে যাচাই করে এমন একাধিক ‘অসঙ্গতি’ নজরে এসেছে সরকারের একাধিক কর্তাব্যক্তির। যেমন প্রশ্ন উঠেছে, উপনগরী-প্রকল্পে যে ‘বেসরকারি প্রতিপত্তি’ ঠেকানোর লক্ষ্যে জমির ঊর্ধ্বসীমা ছাড়ের সুযোগ রদের সিদ্ধান্ত, পিপিপি-নীতিতে তাকে সেই বেসরকারি উদ্যোগের সামনেই ছেড়ে দেওয়া হল কোন যুক্তিতে?
সরকারের একাংশ অবশ্য এর মধ্যে নীতিগত কোনও ‘বিরোধ’ দেখছে না। এই মহলের দাবি: আইনের সুবিধা নিয়ে বাম আমলে অনেক প্রোমোটার উপনগরীর হাজার হাজার একর জমি নিজেদের হেফাজতে রেখেছেন, নিয়মের তোয়াক্কা না-করে তাতে ফ্ল্যাট-বাড়ির (রিয়েল এস্টেট) ব্যবসা হয়েছে। এই অনিয়মে দাঁড়ি টানতেই ঊর্ধ্বসীমা ছাড়ের (১৪ওয়াই) আওতা থেকে উপনগরীকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তটির সমর্থনে রাজ্যের নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বিশেষ ছাড়ের সুযোগে কোনও কোনও প্রোমোটার সিলিংয়ের বেশি জমি নিয়ে উপনগরী করেছেন। দেখা গিয়েছে, দ্রুত লাভের তাগিদে তাঁরা তড়িঘড়ি কাজ করতে গিয়ে বহু নিয়ম ভেঙেছেন।”
পিপিপি’তেও তো বেসরকারি সংস্থা থাকবে? নগরোন্নয়নমন্ত্রীর ব্যাখ্যা: বেসরকারি সংস্থা থাকলেও পিপিপি-উপনগরী প্রকল্পে সরকারের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ থাকবে। তাই নজরদারিও থাকবে। “ওখানে যৌথ উদ্যোগে স্যাটেলাইট টাউনশিপ হবে। সরকার পরিকাঠামো জোগাবে, প্রকল্প গড়বে বেসরকারি সংস্থা। অনিয়মের ভয় নেই,” মন্তব্য মন্ত্রীর। সরকারি সংস্থা হিডকো-র উদ্যোগে গড়ে ওঠা নিউটাউন, বা আসানসোল-দুর্গাপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা কেএমডিএ-র একাধিক প্রকল্পের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে কয়েকটি শিল্প হচ্ছে। সেখানেও পিপিপি মডেলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে।”
উপনগরীতে আবাসন থাকবে। অথচ রাজ্যের নীতিগত সিদ্ধান্ত, তারা আবাসন-প্রকল্প করবে না। “তা হলে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের তালিকায় উপনগরীকে রাখা কেন?” প্রশ্ন তুলছে প্রশাসনের অন্য অংশ। এদের মতে, ‘নীতি-বিরোধিতা’র এ-ও একটা বড় দৃষ্টান্ত।
বস্তুত ১৪ওয়াই তালিকা থেকে বাদ পড়ায় বেসরকারি উদ্যোগে উপনগরীর জমির সংস্থান যেমন অনিশ্চিত, তেমন যৌথ উদ্যোগের উপনগরীতে পরিকাঠামো গড়তে প্রয়োজনীয় বিপুল অর্থ জোগাড় আর্থিক সঙ্কটে জর্জরিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষে কতটা সম্ভব, সে প্রশ্নও বড় হয়ে উঠেছে। সরকারের এক কর্তার বক্তব্যে এই সংশয়ের ইঙ্গিত স্পষ্ট। যিনি বলছেন, “উপনগরী প্রকল্পে সরকারি সহযোগিতা জরুরি ঠিকই। কিন্তু পুরোপুরি বেসরকারি উদ্যোগে তা করা যাবে না, এটা কোনও নীতি হতে পারে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.