সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
ভাঙনের আশঙ্কায় আগাম সতর্কতা! বর্ষার নদীতে জলস্ফীতির আঁচ পেলে যেমন হয়ে থাকে!
একই পথে এখন হাঁটতে হচ্ছে সিপিএমকে!
দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ) ‘বিদ্রোহে’র পর সংগঠনের অন্দরে জরুরি সতর্ক-বার্তা পাঠিয়েছে দলের ছাত্র সংগঠন এসএফআই! যেখানে পরিষ্কার বলা হয়েছে, ‘বিভ্রান্তি বা বিশৃঙ্খলা’ নয়। মনে রাখতে হবে ছাত্র সংগঠনের ‘রাজনৈতিক ঐতিহ্য’।
সিপিএম পলিটব্যুরোর রাষ্ট্রপতি পদে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে এসএফআইয়ের জেএনইউ ইউনিট প্রায় ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করে। শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে সে ইউনিট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইউনিটের ‘বিদ্রোহে’র জেরে গোটা দেশে সিপিএমের মতো ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ’ দলের ছাত্র সংগঠনে সতর্কতা জারি করতে হচ্ছে! সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, জেএনইউ-এর ‘বিদ্রোহী’রা কয়েকটি রাজ্যের ছাত্র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা চালান। যার সূত্রপাত প্রসেনজিৎ বসুর ‘বিদ্রোহে’র সময় থেকে। প্রণববাবুকে সমর্থনের সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক লাইনের ‘বিচ্যুতি’ হিসাবে অভিযোগ করে সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করতে গিয়েছিলেন তরুণ তাত্ত্বিক নেতা প্রসেনজিৎ। তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। একই পরিণতি জেএনইউ ইউনিটের ৪ জনেরও। এসএফআই নেতৃত্বের আশঙ্কা, তরুণ ব্রিগেডে বিদ্রোহের আঁচ বেশি ছড়ালে সমস্যা ঘনীভূত হতে পারে। তাই আগাম ঘর সামলানোর উদ্যোগ।
এসএফআইয়ের কেন্দ্রীয় কমিটির হুঁশিয়ারি সংবলিত জরুরি ‘নোট’ বলছে, ‘প্রণব মুখোপাধ্যায়ের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার বিষয়টি অজুহাত মাত্র! এসএফআইয়ের পথে বিঘ্ন ঘটানোর বৃহত্তর পরিকল্পনা আগেই নির্মাণ হয়েছে। দেশে ইউনিটগুলিকে এই বিষয়ে সতর্ক এবং কড়া নজর রাখতে আহ্বান জানানো হচ্ছে। যাতে এই বিঘ্নসৃষ্টিকারী উপাদানগুলি সংগঠনে বিভ্রান্তি এবং অনৈক্য তৈরি করতে না-পারে’। সিপিএম সূত্রে খবর, শীর্ষ নেতৃত্বের ‘অনুমোদন’ নিয়ে সতর্ক-বার্তা জারি হয়েছে। যেখানে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘গঠনতন্ত্র ও ঐতিহ্য’।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ‘অভ্যন্তরীণ বার্তা’য় বলা হয়েছে, ছাত্রদের মধ্যে বৃহত্তর গণ-আন্দোলনের ঐক্য গড়া তোলা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে নব্য উদারনৈতিক নীতির আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই এসএফআইয়ের লক্ষ্য। মনে করানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ইউনিট কমিটির আছে। জাতীয়-আন্তর্জাতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী শুধু কেন্দ্রীয় কমিটি। ‘বার্তা’ স্পষ্ট প্রসেনজিতের ‘বিদ্রোহে’ উৎসাহিত হয়ে দিল্লির এসএফআইয়ের একাংশ যা করেছে, তা নিয়ম ও ঐতিহ্য, সমর্থনযোগ্য নয়।
কংগ্রেস-তৃণমূলের ‘বিভাজন’ উস্কে দিতে আলিমুদ্দিনের নেতাদের চাপেই মূলত প্রণববাবুকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেয় পলিটব্যুরো। এসএফআইয়ের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বার্তাতেও পশ্চিমবঙ্গের কথা এসেছে। বলা হয়েছে, ‘পরিবর্তনে’র বাংলায় গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। নির্বাচিত ছাত্র সংসদ জোর করে ‘দখল’ করা হচ্ছে। বোঝানো হয়েছে, কেরলে টি পি চন্দ্রশেখরন-হত্যার পরবর্তী সময়ে বামেদের বিরুদ্ধে ‘কুৎসা’র মধ্যেই কালিকট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ভোটে এসএফআইয়ের বিরাট জয় কতটা ‘গুরুত্বপূর্ণ’। অর্থাৎ এসএফআইয়ের চর্চার বিষয় হওয়া উচিত এইগুলিই। রাষ্ট্রপতি নন। সেই সূত্রেই নোটে বলা হয়েছে: ‘এই লড়াইয়ের সঙ্গে সহমর্মিতা জ্ঞাপনের পরিবর্তে অতি-বামেদের ভাবনাচিন্তা সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামেই পড়ে আছে! তারা তৃণমূলের সুরেই কথা বলছে এবং তাতে শাসক শ্রেণির হাতই শক্ত হচ্ছে’। বার্তা উদ্দেশ্য জেএনইউ ইউনিটে নকশালপন্থী ছাত্র সংগঠন ‘আইসা’র প্রভাব যে একটু বেশি রকমের ছিল, সর্ব স্তরের কর্মীদের কাছে স্পষ্ট করে দেওয়া। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিদ্রোহ’ সামাল দিতে গোটা দেশে ছাত্র সংগঠনে যে ভাবে সতর্কতা জারি করতে হল, সেই সূত্রেই এর পর কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রণব-প্রশ্নে ঝড় ওঠার আশঙ্কা করছে দলের একাংশ।
‘বিদ্রোহে’র ঢেউয়ে দলের ভাঙন রুখতে হবে সিপিএমকে। |