মেয়েদের উপরে নজর রাখুন। তাদের পোশাক-আশাক, গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করুন।
আফগানিস্তান নয়। পঞ্জাব-হরিয়ানার খাপ পঞ্চায়েতও নয়। এই তালিবানি ফতোয়া ‘জারি’ করেছেন অসমের এক কংগ্রেস বিধায়ক। খাস বিধানসভায় দাঁড়িয়ে। প্রসঙ্গত, তিনিও এক জন মহিলা।
গুয়াহাটির রাজপথে তরুণীর শ্লীলতাহানির প্রসঙ্গটি দিন দু’য়েক আগে বিধানসভায় আলোচিত হচ্ছিল। তখন নিজেদের মধ্যে হাসি-মশকরা করে ঘটনাটি লঘু করে তুলেছিলেন কংগ্রেসের বিধায়কেরা। আজ ফের প্রসঙ্গটি উঠলে দুলিয়াজানের কংগ্রেস বিধায়ক অমিয়া গগৈ বলেন, “এই সব আজেবাজে ঘটনা নিয়ে আলোচনা করে বিধানসভার মূল্যবান সময় নষ্ট করার কোনও মানেই হয় না। যে সব মেয়ে সমাজের তোয়াক্কা না করে রাতবিরেতে মদ খেয়ে রাস্তায় ঘোরে বা সমাজ বহির্ভূত আচার-আচরণে গা ভাসায়, তাদের সঙ্গে এই সব ঘটতেই পারে।” তাঁর পরামর্শ, মেয়ে হয়েও পানশালায় যাওয়া, স্বল্পবাস পরা বা ওই ধরনের ‘অশালীন’ কাজকর্ম করতে হলে সাতটার মধ্যে মিটিয়ে ফেলাই ভাল। বাবা-মায়ের উদ্দেশে তিনি বলেন, “মেয়েদের উপরে নজর রাখুন। তাদের জামাকাপড়ে, গতিবিধিতে নিয়ন্ত্রণ আনুন।” অমিয়াদেবীর বক্তব্যে বহু বিধায়ক টেবিল চাপড়ে সম্মতি জানান। বিরোধীরাও কোনও প্রতিবাদ জানাননি।
তরুণীর শ্লীলতাহানি কাণ্ড প্রসঙ্গে আজ রাজ্য সরকারের পক্ষে মন্ত্রী রকিবুল হুসেন জানান, মেয়েটিকে দু’জন দেহরক্ষী দেওয়া হয়েছে। তার জন্য গুয়াহাটিতে বাড়ি, তার চাকরি ও তার নামে একটি বিউটি পার্লার খুলে দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছে সরকার। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১৯ জনকে শনাক্ত করে ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মন্ত্রী আরও জানান, রাজ্যে মেয়েদের উপরে বাড়তে থাকা অত্যাচার বন্ধে বিশিষ্ট জন, শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মীদের নিয়ে একটি বিশেষ কমিটি গড়ছে সিআইডি। কড়া আইন আনার কথা ভাবছে রাজ্য প্রশাসন। ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন যে সাংবাদিক, সেই গৌরবজ্যোতি নেওগ এ দিন আগাম জামিনের আবেদন করেন। হাইকোর্ট তা নাকচ করেছে।
ইতিমধ্যে, ঘটনার মূল অভিযুক্ত অমরজ্যোতি কলিতার খোঁজ না মিললেও, তাঁর মতোই দেখতে বিমল বৈশ্য নামে এক ব্যক্তি নাজেহাল হয়ে চলেছেন। তাঁর বাড়ি থেকে বেরোনোই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ঘটনার মূল অভিযুক্ত অমরজ্যোতিকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তাকে ধরে দিতে পারলে ১ লক্ষ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে। তাতেই চরম বিপাকে পড়েছেন বিমলবাবু। তিনি শিবসাগরের এক তেল সংস্থায় কাজ করেন। কর্মসূত্রে দিন কয়েক আগে তিনি গুয়াহাটি এসেছিলেন। আশপাশের লোক তাঁর সঙ্গে এমন ব্যবহার করেন যে সেই দিনই গুয়াহাটি থেকে পালাতে বাধ্য হন তিনি। এখনও যেখানেই যাচ্ছেন, কানে আসছে, তাঁকে ধরিয়ে দিয়ে এক লক্ষ টাকা কী ভাবে পাওয়া যেতে পারে সেই আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, “গুয়াহাটি থেকে ফেরার পরে আতঙ্কে রয়েছি। রাস্তায় বার হলেই মানুষ অন্য ভাবে তাকাচ্ছে। মনে হচ্ছে, যে কোনও সময় মার খেতে পারি। ভাবছি, গোঁফটা ছেঁটে ফেলব।” |