রাইসিনা রঙ্গ |
|
আর একটু হলেই... |
• প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ভোট দেবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন এক মাস আগে। অথচ আসল দিনেই মোক্ষম ভুল করে বসলেন মুলায়ম সিংহ। ব্যালট পেপারে প্রথম পছন্দের সূচক ‘১’ লিখে ফেললেন পূর্ণ অ্যাজিটক সাংমার নামের পাশে। এবং শেষমেশ তাঁর ভুল ধরিয়ে দিলেন কি না সাংমারই পোলিং এজেন্ট! তার পর পুরনো ব্যালট পেপার ছিঁড়ে ফেলে নতুন ব্যালটে ভোট দিলেন মুলায়ম। কিন্তু একই ভুল করে কংগ্রেসের এক সাংসদের টনক নড়ে ব্যালট বক্সে ব্যালট পেপারটি দেওয়ার পর। দলীয় নেতৃত্ব এবং প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে পরে সে ভুলের কথা স্বীকার করেন তিনি। কিন্তু যা হওয়ার তো হয়েই গিয়েছে। ওই সাংসদকে অস্বস্তিতে না ফেলতে প্রণববাবু তাঁর নাম গোপনই রাখতে চাইছেন।
|
ভোট ময়দানে...
ভোট দিচ্ছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। |
|
লাইন মেনে |
• বাকি সব মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়কের জন্য বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বরাদ্দ ছিল ইডেনের দিকের মূল ফটক। হাইকোর্টের দিকের ‘ভিআইপি গেট’ শুধু মুখ্যমন্ত্রীর জন্য। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নাম তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঢুকেই সটান দাঁড়িয়ে পড়লেন ভোটারদের লাইনে। সতীর্থেরা জায়গা ছেড়ে দিতে চাইলেও ‘ভোটার মুখ্যমন্ত্রী’ লাইন ভাঙতে নারাজ। বরং লাইনে নিজের জায়গা ‘রেখে’ দিয়ে লবিতে পায়চারি করে করে আলাপচারিতা চালিয়ে গেলেন। মাঝে এক বার করজোড়ে ‘সৌজন্য’ বিনিময় করে গেলেন মন্ত্রিসভার সহকর্মী মানস ভুঁইয়া। শেষ পর্যন্ত বেলা ১টা ১৮-এ তিনি ভোটদান কক্ষে। ভোট সেরেই দ্রুত পায়ে প্রস্থান! লাইন ভাঙতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রীর জন্য সংবাদমাধ্যমের ‘শৃঙ্খলা’ তত ক্ষণে ভেঙে খানখান!
|
এরিয়াল |
• গুঁড়ি গুঁড়ি চুল গোটা মাথায়। সামনে এক গাছি লম্বা হয়ে ঝুলছে! বিচিত্র কেশসজ্জা নিয়ে ভোট দিতে হাজির আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। ঢোকার সময় বললেন, “দলের নির্দেশে কংগ্রেসের প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ভোট দিতে এসেছি। আমার ভোটের মূল্য ১৫১। তবে আমার মূল্য শূন্য!” লাইনে দাঁড়ালেন যখন, চার দিকে ছেয়ে তৃণমূল বিধায়কেরাই। ঠিক পিছনেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস-তৃণমূলের সঙ্গে ভোট দিতে হল? রেজ্জাকের জবাব, “গ্রহের ফের! ওই রকম মাঝে মাঝে হয়। সূর্যের বুকে এই যেমন ক’দিন আগে কী একটা দানা চলে এসেছিল!” তা চুলে এই ছাঁট কেন? সিপিএমের প্রবীণ বিধায়ক হাজির-জবাব “এরিয়াল লাগিয়েছি! তাড়াতাড়ি খবর ধরা পড়বে। অনেক কিছু ঘটছে তো!”
|
ভোট ময়দানে...
ভোট দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। |
|
বাবা-ছেলের ভোট |
• রাজনৈতিক ‘ওজনে’ এখনও ভিআইপি নন। কিন্তু ‘ভাবী রাষ্ট্রপতি’র ছেলে বলে কথা! তাঁর দিকে তাই আলাদা নজর। প্রণব-পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় ভোট দিতে গেলেন হরকাবাহাদুর ছেত্রী এবং জোসেফ মুন্ডার সঙ্গে এক ব্যাচে। পরে বললেন, রাষ্ট্রপতি-পদে ‘সর্বসম্মত’ প্রার্থী থাকবেন, এটাই আশা করেছিলেন। তবে বিধানসভায় তাঁর সহকর্মীরা সবাই যে তাঁর বাবাকে ‘প্রথম পছন্দে’র ভোট দিচ্ছেন, এতে তিনি খুশি। সাংসদ হিসেবে বাবা নিজেই নিজেকে ভোট দিয়েছেন। আবার ছেলে বিধায়ক হিসাবে রাষ্ট্রপতি-পদপ্রার্থী বাবাকে। এমন ‘বিরল ঘটনা’তেও স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বসিত নলহাটির বিধায়ক।
|
ফার্স্ট বয় |
• পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জন্য প্রথম ভোটের ‘কৃতিত্ব’ কার? সুনীল মণ্ডলের। গলসির ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক। কী করে? সুনীলবাবু বলছেন, “সকাল ৭টায় চলে এসেছিলাম! বুধবার বাম বিধায়কদের বৈঠক ছিল বলে রাতে কলকাতাতেই ছিলাম।” অত সকালে ঢুকতে দিল? বিধায়কের সহাস্য জবাব, “হ্যাঁ! দিল!” সুনীলবাবুর পরেই দ্বিতীয় ভোটার কংগ্রেসের অসিত মাল। যিনি বাকি ভোট-পর্বে প্রণববাবুর মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে ভোট-কক্ষেই ছিলেন। অসিতবাবুর পরে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম যথাক্রমে ফব-র পরেশ অধিকারী, সিপিএমের আনিসুর রহমান এবং কংগ্রেসের জ্ঞানসিংহ সোহনপাল (চাচা)।
|
ভোট ময়দানে...
ভোট দিচ্ছেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। |
|
ভার লাঘব |
• ভোট দিয়ে তৃণমূল বিধায়করা বেরোচ্ছেন জোড়া কৌটো হাতে। একটায় বিরিয়ানি, অন্যটায় চিকেন চাপ। মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন সেরে রেখেছিলেন সরকারি মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। বিধানসভার কর্মীদেরও বাদ দেননি। ‘ভারাক্রান্ত হৃদয়ে’ প্রণববাবুকে ভোট দিয়ে ভোজ? প্রশ্ন শুনে তরুণ তৃণমূল বিধায়কের পাল্টা রসিকতা, “ভার লাঘবের ব্যবস্থাও দলই করে রেখেছে!” ও দিকে, কংগ্রেস ব্যবস্থা রেখেছিল রুটি আর কষা মাংসের। তাদের নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র আবার প্রণববাবুকে সমর্থনকারী সব বিধায়ককে (দল নির্বিশেষে) আগামী রবিবার ভোটগণনার দিন শহরের এক পাঁচতারায় ‘হাই টি’-র আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছেন। আর বামেরা? নিজেদের চাঁদায় আনিয়েছিলেন ফ্রায়েড রাইস-মাংস। প্যাকেট হাতে কেউ বেরোননি অবশ্য!
|
ছাপ্পা নাকি |
• সকাল দশটায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ তথা পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। সঙ্গে ছিলেন দীপা দাশমুন্সি, আবু হাসেম খান চৌধুরীর মতো বাংলার কংগ্রেস সাংসদরা। সওয়া দশটার মধ্যে তাঁদের ভোটও দেওয়া হয়ে যায়। কিন্তু দুপুরে ফের প্রদীপবাবুকে দেখা যায় ভোটদান কক্ষের সামনে। মজা করে তাঁকে এক সতীর্থ প্রশ্ন করেন, “এ বার কি ছাপ্পা ভোট দিতে নাকি!” হাসিতে ফেটে পড়েন প্রদীপবাবু। তার পর বলেন, “যা বলেছেন!”
|
ভোট ময়দানে...
ভোট দিচ্ছেন সনিয়া গাঁধী। |
|
প্রণবের পাশে ‘বিদ্রোহী’ |
• দিব্যি ভোটপর্ব এগোচ্ছিল গুজরাত বিধানসভায়। একে একে লাইন দিয়ে এনডিএ প্রার্থী পি এ সাংমার পক্ষে ভোট দিচ্ছিলেন বিজেপি বিধায়কেরা। হঠাৎই ছন্দপতন। অভিযোগ উঠল, রাজ্যের মাহুবা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক কানুভাই বালাভাই কালসারিয়া ভোট দিয়েছেন ইউপিএ প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে। বিজেপি প্রথমে দাবি করছিল, ভুল করেই প্রণববাবুকে ভোট দিয়ে ফেলেছেন ওই বিধায়ক। বিজেপি নেতৃত্ব তলায় তলায় তদন্তও শুরু করেছিলেন। শেষ অবধি বিদ্রোহী বিধায়ক নিজেই জানিয়ে দিলেন, নরেন্দ্র মোদীর কৃষক-বিরোধী নীতির প্রতিবাদ জানাতেই তাঁর এই বিপক্ষে ভোটের সিদ্ধান্ত। বিজেপি এখন কী ব্যবস্থা নেয় তা পরের কথা, কংগ্রেস শিবির কিন্তু বেজায় খুশি। তাদের আশা, এমন ‘ইচ্ছাকৃত’ ভুলের খবর আরও আসবে অন্যান্য রাজ্য থেকে।
|
আইনের গেরোয় |
• মাসখানেক আগে জামিনে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী
এ রাজা। ফলে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি ভোটে সংসদে উপস্থিত হতে তাঁর সমস্যা হয়নি। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সৌজন্য সাক্ষাৎও হয়েছে। জেল থেকে বেরিয়ে ভোট দিয়ে গেলেন দু’জন। অন্ধ্রপ্রদেশের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী রাজশেখর রেড্ডির পুত্র জগন্মোহন রেড্ডি এবং ঝাড়খণ্ডের নির্দল সাংসদ মধু কোড়া। গুজরাতে কিন্তু বিজেপির প্রাক্তন মন্ত্রী অমিত শাহ ভোট দিতে পারলেন না। সোহরাবুদ্দিন শেখ ভুয়ো সংঘর্ষ মামলার জেরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাঁর রাজ্যে ঢোকা নিষেধ।
|
ভোট ময়দানে...
ভোট দিচ্ছেন সূর্যকান্ত মিশ্র। |
|
ভোট দিল না টিআরএস |
• রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদানে বিরত থাকল তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস)। তাদের নেতাদের বক্তব্য, পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের দাবির ব্যাপারে কেন্দ্র ‘নির্বিকার’। তাই তাঁরা ইউপিএ প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করতে ইচ্ছুক নন। লোকসভায় টিআরএসের দু’জন সাংসদ এবং অন্ধ্র বিধানসভায় ১৭ জন বিধায়ক আছেন। |
ছবি: রাজীব বসু এবং পি টি আই |
|