মাওবাদী যোগাযোগের সম্ভাবনা নিয়ে তদন্তে কেন্দ্র
মারুতির সংঘর্ষে পুড়ে মৃত্যু আধিকারিকের
মথম করছে মারুতির কারখানা। কাজকর্ম অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ। কারখানা চত্বরে থিকথিক করছে পুলিশ। বস্তুত গত কালের সংঘর্ষ মানেসরে মারুতি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের ইতিবৃত্তে নতুন মাত্রা জুড়েছে। গত বছরে তিন তিন বার আন্দোলন এবং উৎপাদন বন্ধ থাকলেও সংঘর্ষে সংস্থার কোনও আধিকারিকের মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম।
কারখানার পুড়ে যাওয়া অংশ থেকে গত কাল যে দেহটি উদ্ধার করা হয়েছিল, সেটা কার গোড়ায় তা শনাক্তই করা যায়নি। আজ জানা যায়, মারা গিয়েছেন সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার (মানবসম্পদ উন্নয়ন) অবনীশকুমার দেব।
নিহত কর্তা
অবনীশকুমার দেব।
তাঁর পরিবারের লোকজন দেহটি শনাক্ত করেন। এই মৃত্যু এবং সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ৯৯ জন কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দাঙ্গা, হত্যা, হত্যার চেষ্টা, বেআইনি জমায়েত ইত্যাদি অভিযোগ আনা হয়েছে। ধৃতদের ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
গুড়গাঁও শিল্পাঞ্চলে ক্রমশ বেড়ে চলা শ্রমিক অসন্তোষের পিছনে মাওবাদীদের হাত থাকতে পারে বলে এ দিন কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। মারুতির ঘটনার পিছনে মাওবাদীদের হাতের কথা স্পষ্ট করে বলা না হলেও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, গুড়গাঁও-সহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছে মাওবাদীরা। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা।
গত কালের ঘটনার দায় কার তা নিয়ে প্রথামাফিক চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে। শ্রমিকদের দায়ী করে কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পুরো ঘটনাটা পরিকল্পনা করেই ঘটানো হয়েছে। সমস্যাটি মোটেই মজুরি বা শিল্পসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নয়। কাল সকালে কারখানার সুপারভাইজারকে মারধর করেন এক শ্রমিক। তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়। এ নিয়ে বিকেলে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে আলোচনার সময় শ্রমিকরা রড-লাঠি নিয়ে চড়াও হয়। জোর করে কারখানার গেট বন্ধ করে পদস্থ কর্তাদের আটকে রাখে। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় কারখানার একাংশে। যাতে মারা যান অবনীশ। দুই জাপানি নাগরিক-সহ আহত হন প্রায় ১০০ আধিকারিক।
শ্রমিক অসন্তোষে পুড়ে যাওয়া মারুতি কারখানা।
কারখানার শ্রমিক ইউনিয়ন মারুতি সুজুকি ওয়ার্কাস ইউনিয়ন আবার ঘটনায় দায় চাপিয়েছে কর্তৃপক্ষের কাঁধেই। সংগঠনের সভাপতি রাম মেহেরের অভিযোগ, “নিরাপত্তারক্ষীরা কারখানার দরজা বন্ধ করে রেখেছিলেন। শ্রমিকরা ঢুকতে গেলে কর্তৃপক্ষের ভাড়া করা গুণ্ডা তাঁদের উপর হামলা চালায়। গুণ্ডারাই কারখানায় ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে পুলিশ এবং সংস্থার পদস্থ কর্তারাও শ্রমিকদের উপর চড়াও হন। আহত বেশ কিছু শ্রমিক হাসপাতালে।”
এই ঘটনার তদন্তের জন্য গুড়গাঁওয়ের এসিপি রবীন্দ্র টোমারের নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব পি কে চৌধুরি। শ্রমমন্ত্রী শিবচরণ লাল শর্মা বলেছেন, পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে মালিক এবং শ্রমিকপক্ষকে মুখোমুখি বসিয়ে সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা হবে।
সংঘর্ষের জেরে মারুতির মানেসর কারখানায় তো কাজ বন্ধই, এই ঘটনার প্রভাব এলাকার অন্যান্য শিল্প সংস্থার উপরেও পড়বে বলে আশঙ্কা শিল্প মহলের। রাজধানীর অদূরে গুড়গাঁওয়ের এই শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ দীর্ঘদিনের ব্যাধি। মারুতির কারখানাতেই গত বছরে তিন বার কাজ বন্ধ হয়েছে। বড় মাপের অশান্তি হয়েছে হোন্ডা মোটরসাইকেল এবং স্কুটার ইন্ডিয়ার কারখানাতেও।
মারুতি কারখানার ঘটনা নিয়ে আজ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাপান। নয়াদিল্লিতে জাপানের দূতাবাসের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হরিয়ানা সরকার আইনশৃঙ্খলা সুনিশ্চিত করুক, যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। রাজ্য সরকার দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলেও আশা প্রকাশ করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। তবে একের পরে এক এই ধরনের ঘটনা যে শিল্পের বাতাবরণে বিরূপ ছাপ ফেলতে চলেছে তার ইঙ্গিত দিয়ে মারুতি ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, চার হাজার কোটি টাকা লগ্নিতে গুজরাতে নতুন কারখানা গড়তে চলেছে তারা। যা গুড়গাঁওয়ের অবস্থার প্রতি অনাস্থা বলেই মত শিল্পমহলের।
কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার অবশ্য আশা, এই ঘটনার ফলে শিল্পমহলের বিশ্বাসে চিড় ধরবে না। এবং রাজ্য সরকার পরিস্থিতি সামাল দিয়ে শিল্প এবং লগ্নির বাতাবরণকে ধরে রাখতে পারবে।
মারুতি কারখানায় সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের শাসক এবং বিরোধী দলের মধ্যেও চাপানউতোর শুরু হয়েছে। শিল্পমন্ত্রী বলেন, “গুড়গাঁও-মানেসরে বেশ কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যারা রাজ্যের শিল্পোন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটাতে চায়।” বিরোধী ভারতীয় জাতীয় লোকদল (আইএনএলডি)-র অভিযোগ, গত বছরেও তিন বার এই কারখানায় ধর্মঘট হয়েছে। প্রত্যেক বারই শ্রমিক অসন্তোষ ঠেকাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হুডা সরকার।

ছবি: এএফপি


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.