জন্মদিনে বাড়ি ফেরা হয়নি পিঙ্কুর। তবু তাঁকে মনে রেখেই বুধবার গেয়ে উঠল পিঙ্কুর শহর। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডের এক বৃদ্ধাবাসের আবাসিকেরা প্রার্থনা করলেন তাঁর জন্য। সবাই মিলে গাইলেন, ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ!’ নাইজিরিয়ায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহত সহকারী বিমান চালক মহেন্দ্রসিংহ রাঠৌর ওরফে পিঙ্কুর জন্মদিনে তাঁর পরিবারের তরফে ওই প্রবীণ নাগরিকদের জন্য নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছিল।
গত মে মাসে শেষ বার যখন কলকাতায় এসেছিলেন পিঙ্কু, মা-বাবাকে বলে যান, ‘জন্মদিনে আমি কিন্তু বাড়িতেই আসছি!’ লেকগার্ডেন্সের ফ্ল্যাটে মা-বাবার কাছে আসা দূরে থাক, পিঙ্কুর দেহটাই এখনও পৌঁছল না দেশে। পিঙ্কুর জন্মদিনে তবু নিজেদের শোকের মধ্যে মুড়ে রাখেননি পুত্রহারা রাঠৌর দম্পতি। কলকাতার বৃদ্ধাবাসের ‘বার্থ ডে’ পার্টির তত্ত্বাবধানে নিজে হাজির ছিলেন পিঙ্কুর বাবা ঈশ্বরসিংহ রাঠৌর। তাঁদের পিতৃপুরুষের ‘দেশ’ বিকানের। অনাথ আশ্রমের শিশুদের নিয়ে সেখানেও আয়োজন হয়েছিল অনুষ্ঠানের। বিকানেরের আয়োজন সামলাতে সেখানে চলে গিয়েছেন পিঙ্কুর মা পুষ্পাদেবী।
গত ৩ জুন নাইজিরিয়ার লাগোস শহরের জনবহুল এলাকায় ভেঙে পড়ে ডানা এয়ারলাইন্সের আবুজাগামী বিমান। মোট ১৫৩ জন আরোহীর কেউই প্রাণে বাঁচেননি। সহকারী চালক মহেন্দ্র ওরফে পিঙ্কু ছাড়া রিজো কে এল্ডহোস নামে আরও এক জন ভারতীয় ছিলেন ওই বিমানে। লাগোসে কর্মরত ওই ইঞ্জিনিয়ার রিজোর দেহও এখনও দেশে ফেরানো সম্ভব হয়নি।
পিঙ্কুর বাবা ঈশ্বরসিংহ রাঠৌর বলেন, নাইজিরিয়ায় ভারতীয় দূতাবাস মারফত জানানো হয়েছে ছেলের দেহ দেশে ফিরতে আরও দু’সপ্তাহ লাগবে। মৃতদের দেহ শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করানো হচ্ছে। নাইজিরিয়ায় ডিএনএ পরীক্ষার পরিকাঠামো নেই বলে দেহ এখন ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে। দিল্লি থেকে পাঠানো পিঙ্কুর পরিজনদের ডিএনএ-র নমুনা লন্ডনের পরীক্ষাগারে মেলানোর পরেই দেহ এ দেশে পাঠানো হবে। রিজোর দেহও একই ভাবে এ দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে।
ছেলের দেহ ফিরে আসা নিয়ে উৎকণ্ঠাতেও থেমে থাকেনি পিঙ্কুর জন্মদিনের উদ্যাপন। এ দিন সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার সেন্ট জোসেফ্স হোমের ১৭৫ জন প্রবীণ আবাসিক তাতে সামিল হয়েছেন। পিঙ্কুর স্মরণে বিশেষ প্রার্থনার পরে সবাই মিলে গাইলেন জন্মদিনের সেই চিরপরিচিত গান। আয়োজন ছিল ছিমছাম ভোজেরও। বৃদ্ধাবাস থেকে বেরিয়ে প্রবীণ ঈশ্বর সিংহের চোখে কিছুটা তৃপ্তির ঝিলিক। কাঁপা-কাঁপা স্বরে বললেন, “জীবন থেমে থাকে না!” |