বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার কড়া আইন রয়েছে পুরসভার হাতে। কিন্তু তা প্রয়োগ করার ‘বাস্তব’ পরিস্থিতি নেই। শহরের বিপজ্জনক বাড়িগুলি ভাঙার ক্ষেত্রে কার্যত এই কানাগলিতেই ঘুরপাক খাচ্ছে পুরসভা। এ বিষয়ে নতুন আইনের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও সরকারের কাছে দরবার করতে চান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়।
গত বুধবার ক্রিক রো-এর একটি বিপজ্জনক বাড়ি থেকে রাস্তায় চাঙড় খসে পড়ার প্রেক্ষিতেই ফের এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ওই ঘটনার পরে ক্রিক রো-এর বাড়িটির কিছুটা অংশ ভাঙা শুরু হয়েছে। কিন্তু আইন থাকা সত্ত্বেও কেন গোটা বাড়িটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, শহরে এমন বিপজ্জনক বাড়ির সংখ্যা প্রায় দু’হাজার। এখন প্রশ্ন উঠছে সেই সব বাড়ি নিয়েও। অভিযোগ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্য বাড়ির ছাদে উঠে লোহার পাইপে সাবধানে পা ফেলে ঢুকতে হয় সেই বাড়িতে। কোনও বাড়ি আবার এমন ভাবেই হেলে পড়েছে যে, আশপাশের বাসিন্দাদের সর্বক্ষণ আশঙ্কায় থাকতে হচ্ছে। পুরসভার তবু কোনও হেলদোল নেই।
মেয়রের বক্তব্য, “কোনও বিপজ্জনক বাড়িকে পুরসভা নোটিস দিতে পারে। তা ভেঙেও ফেলতে পারে। কিন্তু বাসিন্দাদের বাড়িছাড়া করার ‘ক্ষমতা’ পুরসভার নেই। কারণ, তাঁদের পুনর্বাসন দিতে পারবে না পুরসভা। এটাই বাস্তব পরিস্থিতি।” |
পুর-আইন মোতাবেক কোনও বাড়িকে ‘বিপজ্জনক’ ঘোষণা করে নোটিস দেওয়ার পরে সেটিকে ফাঁকা করে ঘিরে দেবে পুরসভা। তার পরে সেটি ভাঙা হবে। এ সবের খরচ মেটাতে হবে বাড়ির মালিককে। এক পুর-কর্তা বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে বাড়ির মালিক কে, তা জানা যায় না। কখনও শরিকদের গোলমালে আটকে যায় গোটা প্রক্রিয়া। সে ক্ষেত্রে বাড়ি খালি করা এবং ঘেরার খরচ কে দেবে, তা নির্ধারণ করা দুষ্কর হয়ে পড়ে।”
কিন্তু বিপজ্জনক বাড়ি না ভাঙলে যে কোনও দিন বড় বিপদ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের অফিসারদের একাংশই। তাঁরা জানিয়েছেন, বাড়িতে লোক থাকলে তা ভাঙা যাবে না বলে অলিখিত নির্দেশ জারি রয়েছে। সে ক্ষেত্রে পুরসভা শুধু নোটিস দিয়ে থাকে। ক্রিক রো-এর বাড়িটিতে দেড় বছর আগে নোটিস দেওয়া হয়েছিল। ভাঙার চেষ্টাই হয়নি।
কলকাতা পুর-আইনের ৪১১ ধারা এবং তার পাঁচটি উপধারায় বিপজ্জনক বাড়ির বিষয়ে পুরসভা কী করতে পারে, তার নির্দেশিকা আছে। ওই আইনের ৪(বি) ধারায় বলা আছে, প্রয়োজনে পুরসভার কমিশনার বাসিন্দাদের তৎক্ষণাৎ সরিয়ে বাড়িটি ভেঙে দিতে পারবেন।
বিল্ডিং বিভাগের এক কর্তা জানান, ৪(বি) ধারাটির সঠিক প্রয়োগই হচ্ছে না। বিপজ্জনক বাড়িগুলির অধিকাংশের ক্ষেত্রেই কোনও না কোনও মামলা আছে। সেই মামলার অজুহাত দিয়ে পুরসভা বাড়ির বিপজ্জনক অংশ ভাঙছে না। যদিও আইনে বলা আছে, মামলা থাকলেও নাগরিকদের সুরক্ষাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এমন ক্ষেত্রে মেয়রের অনুমোদন প্রয়োজন হয়।
কিন্তু পুরসভা কেন সেই আইন প্রয়োগ করছে না? বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের সমস্যাকেই মূল কারণ বলে চিহ্নিত করছেন মেয়র।
তবে ওই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনও চেষ্টা কি পুরসভা করেছে? মেয়র বলেন, “রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রয়োজনে আইন বদলাতে হবে।” অর্থাৎ, বিপজ্জনক সব বাড়ির বিপদ থেকে মুক্তি পেতে আপাতত সংশোধিত আইনের দিকেই তাকিয়ে থাকবে কলকাতাবাসী। |