এক মহিলার দেহ উদ্ধারের ঘটনায় গুড়গাঁও থেকে এক ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেফতার করল বীরভূম জেলা পুলিশ। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম জিন্নাতুল আহসান। বাড়ি বীরভূমের পাড়ুই থানার কেন্দ্রডাঙাল গ্রামে। শুক্রবার ধৃতকে বোলপুর আদালতে হাজির করানো হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর পাড়ুইয়ের কেন্দ্রডাঙালে অজ্ঞাতপরিচয় মধ্যবয়স্ক এক মহিলার দেহ উদ্ধার হয়েছিল। দেহের পাশে মোবাইল ও একটি সুইসাইড নোটও পাওয়া গিয়েছিল। পরে পাড়ুই থানার পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে উদ্ধার হওয়া দেহটি সুপর্ণা সাউ-র (৪১)। তাঁর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর ২ ব্লকের গোছাতি গ্রামে। বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ময়না-তদন্ত রিপোর্টে দেখা যায়, মৃত্যুর সময় সুপর্ণাদেবী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
গত মার্চ মাসে সুপর্ণাদেবীর ভাই সুদীপ সাউ পাড়ুই থানায় তাঁর দিদির রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে পাড়ুই থানার ওসি কার্তিক ঘোষের নেতৃত্বে তদন্তে নামে পুলিশ। বীরভূমের পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেন, “সুপর্ণাদেবীর অস্বভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় গুড়গাঁও থেকে পাড়ুই থানার কেন্দ্রডাঙালের বাসিন্দা জিন্নাতুল আহসান নামে ওই ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে জেরা করা হবে। তদন্ত এখনও চলছে।”
প্রাথমিক ভাবে পুলিশের তদন্তে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে বিধাননগরের মাতৃসদনে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ধৃত জিন্নাতুল আহসানের স্ত্রী। তখন থেকেই সুপর্ণা ও জিন্নাতুলের মধ্যে আলাপ। সেই আলাপের সূত্রেই তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলে পুলিশের দাবি। সুপর্ণাদেবীর মৃত্যুর পরেই কলকাতার চাকরি ছেড়ে গা ঢাকা দেয় জিন্নাতুল। পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, সে হরিয়ানার গুড়গাঁওতে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করছে। সুপর্ণা-মৃত্যুতে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ১৬ জুলাই পাড়ুই থানার একটি তদন্তকারী দল গুড়গাঁও গিয়ে আটক করে জিন্নাতুল আহসানকে। বীরভূম জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, ওই মহিলার মৃত্যু রহস্য উদ্ধারের জন্যই জিন্নাতুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সুপর্ণার পরিবারের সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের বাড়ি থেকে ২০১১ সালের ১৬ নভেম্বর কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন সুপর্ণাদেবী। তার কয়েকদিন পরেই বীরভূমের পাড়ুই থানা থেকে সুপর্ণার মৃত্যুর খবর দিয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর দাসপুরের এই গ্রামের বাড়িতে ছেলেকে নিয়ে থাকতেন সুপর্ণাদেবী। পরে কাজের সূত্রে কলকাতায় চলে যান। তাঁর পরিবারের লোকজনের দাবি, সুপর্ণাদেবীকে খুন করা হয়েছে। ভাই সুদীপ সাউ জানালেন, বোনের দেহ উদ্ধারের খবর পাওয়ার পর ঘটনার তদন্ত করার জন্য বহুবার পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে দরবার করেছেন। এতদিন পর দিদির ‘খুনে’র ঘটনায় কেউ ধরা পড়ায় স্বভাবতই খুশি সুদীপবাবু। জিন্নাতুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এখনও প্রমাণিত না হলেও মা শিবানী সাউ ও বাবা কালীপদ সাউ বলেন, “যারা আমাদের মেয়েকে খুন করেছে তাদের কঠোর শাস্তি চাই। একজন ধরা পড়ায় আশা করছি সুবিচার মিলবে।” অন্য দিকে, ধৃতের পরিবারের সঙ্গে বহুবার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা যায়নি। |