রাজ্যের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বর্ধমান জেলা ভাগের প্রস্তাব অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু সত্যি করে জেলা ভাগ হওয়া এখনও অনেক দূর।
প্রশাসনিক জটিলতা তো আছেই, রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্কও। আগের প্রধান শাসকদল সিপিএম দীর্ঘদিন এই প্রস্তাব ঠান্ডা ঘরে ফেলে রেখেছিল। এখনও প্রস্তাবিত বিভাজন নিয়ে তাদের বেশ কিছু আপত্তি রয়েছে। সব মিলিয়ে ভাগাভাগি কার্যকর হতে হতে বছর গড়িয়ে যাবে বলেই জেলা প্রশাসনের ধারণা।
জেলা ভাগের সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই সমস্ত রাজনৈতিক দলকে নিয়ে অন্তত দু’দফায় বৈঠক করা হয়েছিল। তাতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়, গ্রামীণ বর্ধমান ও শিল্পাঞ্চল নিয়ে দু’টি পৃথক জেলা গড়া হবে। রাজ্যের আইনমন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক মলয় ঘটক অবশ্য আগাম জানিয়ে রেখেছেন, বর্ধমানকে প্রথমে দু’টি ও পরে তিনটি অংশে ভাগ করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে, কালনা ও কাটোয়া মহকুমার একাংশ নিয়ে গড়া হতে পারে তৃতীয় জেলা।
বৃহস্পতিবার জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা জানান, কোন কোন অংশ নিয়ে আসানসোল-দুর্গাপুর জেলা গড়া হবে, তার রূপরেখা প্রস্তুত করেছিল জেলা প্রশাসন। কাঁকসার কাছে দুই জেলার সীমানা নির্ধারিত হচ্ছে। এই ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে একটি রিপোর্ট পেশ করেছিল। সচিব পর্যায়ের বৈঠকে তা অনুমোদিত হয়েছে। ফলে, জেলা ভাগের জন্য প্রশাসনিক পর্ব চূড়ান্ত হয়েছে। তবে আপাতত থানাগুলি ভাগ হচ্ছে না।
জেলা ভাগের এই প্রস্তাব কার্যকর করতে এ বার হাইকোর্ট ও রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের অনুমোদন দরকার হবে । নতুন তৈরি হওয়া জেলায় নতুন জেলা আদালত গড়তে হবে। সেই জন্যও হাইকোর্টের অনুমোদন লাগবে। রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন। তার আগেই নতুন গঠিত জেলার গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের আসন পুনর্নিধারণ করতে হবে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরকে। নতুন জেলায় অতিরিক্ত জেলাশাসক এবং বিভিন্ন মহকুমা স্তরের পদও সৃষ্টি করতে হবে। এই সব মিটলে তবেই রাজ্য সরকারের তরফে গেজেট নোটিফিকেশন দিয়ে ভাগ করা হবে বর্ধমানকে। এতে অন্তত তিন থেকে চার মাস সময় লেগে যাবে বলেই জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।
নিজেদের দীর্ঘদিনের ‘শক্ত ঘাঁটি’ বর্ধমানকে ভাগ করার ব্যাপারে গোড়া থেকেই অনাগ্রহী ছিল সিপিএম। সর্বদল বৈঠকে সায় দিলেও সরকারি প্রস্তাবে এখনও তারা পুরো সহমত নয়। দলের জেলা সম্পাদক অমল হালদার বলেন, “কাঁকসার দিকে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত অন্য জেলায় চলে যাওয়া নিয়ে আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম। প্রশাসন তখন বলে, বিধানসভা কেন্দ্রের এলাকা ভাঙা যাবে না।” যুক্তি ছিল, ওই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের আওতায় পড়ে। তাই সে দু’টি ওই দিকেই থাকবে। অমলবাবুর বক্তব্য, “পরে মাদারিহাট বিধানসভার এলাকা ভেঙে কিন্তু জেলা ভাগ করা হয়েছে। তাই আমরা নতুন করে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি। বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ সাইদুল হক মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি লিখে ওই তিন পঞ্চায়েত বর্ধমান জেলায় রাখতে অনুরোধ করেছেন। এই প্রস্তাব মানা না হলে আমরা আন্দোলনে নামব।” |