সরকার নির্ধারিত মজুরি দিতে হবে, এই দাবিতে দিন কয়েক ধরেই কালনা মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় চাষের কাজ বন্ধ রেখেছেন খেতমজুরেরা। অভিযোগ, অন্য এলাকা থেকে খেতমজুর নিয়ে এসে কাজ করাতে গেলেও বাধা দিচ্ছেন তাঁরা। বিপাকে পড়ছেন চাষিরা। বৃহস্পতিবার বিডিও-র তরফে কালনা থানায় একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সিপিএমের দুই প্রতিনিধি আলোচনা চলাকালীন বৈঠক বয়কট করলে তা ভেস্তে যায়। আগামী ২৩ জুলাই ফের একটি সর্বদলীয় বৈঠক হবে বলে জানান মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি।
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার সকালে। এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ কালনা ২ ব্লকের সাবিতপুর, রামনগর, ওসমানপুর, সিঙা ও বড়বহরকুলি গ্রামের শ’তিনেক চাষি ব্লক অফিস ঘেরাও করেন। তাঁদের অভিযোগ, সম্প্রতি সিপিএম প্রভাবিত কৃষকসভার তরফে বিডিও গৌরাঙ্গ ঘোষের কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়ে দাবি করা হয়েছিল, খেতমজুরদের সরকার নির্ধারিত দৈনিক ১৬৭ টাকা মজুরি দিতে হবে। এর পর থেকেই খেতমজুরেরা কাজ বয়কট করছেন। অন্য এলাকা থেকে খেতমজুর এনে চাষের কাজ করানোর চেষ্টা করা হলেও তাতে বাধা দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের দাবি, গত এক বছরে সার, কীটনাশক-সহ বিভিন্ন চাষের উপকরণের দাম প্রায় তিন গুণ বাড়লেও সেই অনুপাতে ফসলের দাম বাড়েনি। মাস সাতেক আগে আলুর মরসুমে খেতমজুরদের মজুরি বেড়েছিল। কিন্তু বর্তমানে খেতমজুরদের দৈনিক ১১০ থেকে ১১৫ টাকাই মজুরি দেওয়া হচ্ছে। বিক্ষোভ চলাকালীন চাষিদের একাংশ আবার দাবি করেন, সরকারি নিয়ম মেনে সাড়ে ৮ ঘণ্টা (আধ ঘণ্টা বিশ্রাম-সহ) যদি খেতমজুররা মাঠে থাকেন তবেই তাঁরা দৈনিক ১৬৭ টাকা মজুরি দেবেন। ঘেরাও চলাকালীন চাষিদের একাংশ ব্লক অফিস সংলগ্ন পঞ্চায়েত সমিতির কার্যালয়েও ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। বিডিও এ ব্যাপারে কালনা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার ব্লক অফিসে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে বিষয়টির নিষ্পত্তি করা হবে আশ্বাস দিলে ঘেরাও ওঠে।
তবে বৃহস্পতিবার এলাকায় উত্তেজনা থাকায় কালনা থানায় বৈঠকটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বৈঠক চলাকালীন সিপিএমের দুই প্রতিনিধি বৈঠক বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের অভিযোগ, বৈঠক চলাকালীন তৃণমূলের তরফে তাঁদের ‘গুণ্ডা’ বলা হয়েছে যা অশালীন ও অসাংবিধানিক। সিপিএমের কালনা জোনাল কমিটির সম্পাদক করুণা ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “পুলিশের উপস্থিতিতে তৃণমূল আমাদের গুণ্ডা বলায় আমরা বৈঠক বয়কট করেছি।” তাঁর কথায়, “সরকার নির্ধারিত মজুরির জন্য খেতমজুরদের আন্দোলন আমরা সমর্থন করছি।” যদিও জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি দেবু টুডুর দাবি, “আমরা ব্যক্তিগতভাবে কাউকে গুণ্ডা বলিনি। যারা ঝান্ডা নিয়ে ইচ্ছুক খেতমজুরদের মাঠে নেমে ভয় দেখাচ্ছে তাদেরই গুণ্ডা বলেছি। আমরা আলোচনার মাধ্যমে চাষি ও খেতমজুর, উভয়েরই স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করছি। কিন্তু সিপিএম রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার কথা ভাবছে।”
এ দিকে, কালনা থানায় বৈঠক চলাকালীন ব্লক অফিসের সামনে জমায়েত হন চাষিরা। ব্লক অফিসের পরিবর্তে থানায় বৈঠক হওয়ায় তাঁরা ব্লক অফিসের দরজা-জানলা বন্ধ করে সিঙ্গেরকোণ মোড়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে অবরোধ শুরু করেন। খবর পেয়ে কালনা থানার ওসি অমিতকুমার মিত্রের নেতৃত্বে একটি পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধ তোলে।
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে খবর, শুধু কালনা ২ নয়, কালনা ১ ব্লক ও মন্তেশ্বরের দু’টি জায়গায় খেতমজুররা সরকার নির্ধারিত মজুরির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। কালনা ১ ব্লকের খেতমজুর অনিল হেমব্রমের দাবি, “জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও মজুর বাড়েনি। এই অবস্থায় সরকার নির্ধারিত মজুরিই আমরা চাই।”
মহকুমা জুড়ে পরিস্থিতি ‘অশান্ত’ হওয়ার জন্য সিপিএমকে দায়ী করেছে তৃণমূল। কালনা ২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি প্রণব রায়ের অভিযোগ, “সিপিএম মাঠে নেমে ইচ্ছুক খেতমজুরদের কাজ করতে দিেচ্ছে না।” যদিও করুণাবাবুর পাল্টা দাবি, “দলের তরফে খেতমজুরদের বোঝানো হয়েছে। কোথাও মাঠ থেকে তাদের তুলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।”
কালনার মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি বলেন, “সর্বদলীয় বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে ঐকমতে পৌঁছনোর চেষ্টা করা হবে।” |