পড়ুয়া নেই, বসেই কাটান তিন শিক্ষিকা
শিক্ষিকা আছে। পাকা ক্লাশঘর আছে। আলো ও ফ্যান থেকে শুরু করে চেয়ার টেবিল বেঞ্চ সবই আছে। কিন্তু নেই এক জন ছাত্রছাত্রী। এভাবেই দুইবছরের বেশি সময় ধরে চলছে মালদহ শহরের কুতুবপুর নয়াগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছাত্র না-পড়িয়েই বেতন পাচ্ছেন ওই স্কুলের তিন শিক্ষিকা। ইতিমধ্যেই তিন শিক্ষিকা অন্য স্কুলে বদলির আবেদন করেছেন। মালদহ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিদর্শক তৃপ্তি গুহ বলেন, “আমি শুনেছি শহরের ২-১টি স্কুলে নাকি কোন ছাত্র নেই। ওই সব স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উচিত এলাকায় ঘুরে ঘুরে ছাত্রছাত্রী জোগাড় করা। সেই সঙ্গে কেন ও কোন কোন স্কুলের ছাত্র কমে সেই তালিকা তৈরির জন্য ইংরেজবাজার সাকের্লের সহ পরিদর্শককে একটা রিপোর্ট তৈরি করে জমা দিতে বলেছি।” স্কুলে একজনও ছাত্র নেই অথচ সেই স্কুলে তিনজন শিক্ষিকা কেন পাঠানো হল? এই ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান রামপ্রবেশ মন্ডল বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি কলকাতায় আছি। যদি দেখা যায় ছাত্র নেই তা হলে শিক্ষিকাদের অন্য স্কুলে বদলি করে দেওয়া হবে। সংসদের বৈঠকে ঠিক করব ওই স্কুলটি তুলে দেওয়া হবে কি না?” সোমবার বেলা সওয়া ১১ টায় কুতুবপুর নয়াগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল একজন শিক্ষিকা তনুশ্রী ঘোষ বসে রয়েছেন।
ছবি তুলেছেন মনোজ মুখোপাধ্যায়।
কিছুক্ষণের মধ্যে স্কুলের টিচার-ইন-চার্জ কল্যাণী দাস ও শিক্ষিকা সবিতা সোরেন স্কুলে ঢোকেন। তিন শিক্ষিকা স্কুলে হাজির হলেও একজন ছাত্রছাত্রীর দেখা পাওয়া গেল না। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রছাত্রী না আসায় স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বসার বেঞ্চগুলির উপর পুরু ধূলো জমে গিয়েছে। টেবিলের উপর রাখা রয়েছে চেয়ার। স্কুলের টিচার-ইন-চার্জ কল্যাণী দাস বলেন, “আমি গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে বদলি হয়ে এই স্কুলে যোগ দিয়েছি। যোগ দেওয়ার পর থেকে একজন ছাত্রছাত্রীর দেখা পাইনি। খাতায় কলমে ১৭ জন ছাত্রছাত্রীর নাম লেখা ছিল। তালিকা ধরে তাদের অভিভাবকদের খুঁজে পাই। তবে ছাত্রছাত্রীদের খুঁজে পাইনিয়। ওই ছাত্রছাত্রীদের অনেকদিন আগেই কারও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কেউ অনেকদিন আগেই এলাকা ছেড়ে কর্মসূত্রে জেলার বাইরে চলে গিয়েছে। এর পরে আমি সেই সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের নাম কেটে দিয়েছি। এখন খাতায় কলমে পাঁচজন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। কেউ আসে না।” ওই স্কুলের শিক্ষিকা তনুশ্রী ঘোষ জানান, তিনি আগে যেখানে পড়াতেন, সেই স্কুলে প্রায় ২০০ জন ছাত্রছাত্রী ছিল। তিনি বলেন, “এখানে বেলা ১১টায় আসি। ৪টে পর্যন্ত থেকে চলে যাই। কোনও কাজ নেই। আমরা লিখিতভাবে সংসদের চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি, আমাদের এই স্কুল থেকে আমাদের তুলে নিন। ছাত্র পড়াতে না পেরে বসে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছি।” পাশাপাশি, তনুশ্রীদেবী জানান, তাঁরা ছাত্র আনার জন্য এলাকায় বেরিয়ে বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু, সকলেই হাইস্কুল সংলগ্ন প্রাথমিক স্কুলে তাঁদের ছেলেমেয়েদের ভর্তি করেছেন। শিক্ষিকা সবিতা সোরেন বলেন, “স্কুলে এসে ছাত্র পড়াতে পারছি না। এটা আমাদের কাছে শাস্তি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.