ভারী বৃষ্টি না-হওয়ায় কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিঙে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বিপদ বাড়ছে মালদহে। শিলিগুড়িতে মহানন্দার জল কমলেও মালদহে জল বাড়ছে। সব থেকে দ্রুত জল বাড়ছে ফুলহারে। ফুলহারের অসংরক্ষিত এলাকায় বুধবার লাল সঙ্কেত জারি করা হয়েছে। ওই এলাকায় জলবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা। জল বাড়ায় ভাঙনের সমস্যাও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা বাসিন্দাদের মধ্যে। ভাঙনের সমস্যায় জেরবার কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলার বাসিন্দারাও। তিস্তা থেকে সঙ্কোশ, সর্বত্র ভাঙন শুরু হয়েছে। তবে পাহাড়ে নতুন করে ধস নামার খবর মেলেনি। ৩১ (এ) জাতীয় সড়কে যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক।
উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, দেড় মাস ধরে বৃষ্টির জেরে মহানন্দা থেকে সঙ্কোশ পর্যন্ত বিভিন্ন নদীবাঁধের অন্তত দেড়শো জায়গায় ফাটল ধরা পড়েছে। উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের নির্বাহী সদস্য তথা অধীক্ষক বাস্তুকার গৌতম দত্ত বলেন, “বর্ষার শুরুতে এ বার পাহাড় ও সমতলের বৃষ্টি অতীতকে ছাপিয়ে গিয়েছে। ভাঙনও শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু হয়েছে। সেচ দফতরে ছুটি বাতিল করা হয়েছে।” |
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ফুলহারের সংরক্ষিত এলাকাতেও হলুদ সঙ্কেত জারি হয়েছে। ওই দফতর জানিয়েছে, এ দিন দুপুরে ফুলহারের জলস্তর দাঁড়িয়েছে ২৭.৮২ মিটার। যা অসংরক্ষিত এলাকার বিপদসীমা থেকে ও সংরক্ষিত এলাকার হলুদ সঙ্কেত সীমা থেকে ৩৯ সেন্টিমিটার বেশি। জেলা সেচ দফতরের মহানন্দা এমব্যাঙ্কমেন্টের নির্বাহী বাস্তুকার আশিস সাহু বলেছেন, “সমস্যা হচ্ছে। তবে জরুরি ভিত্তিতেই ভাঙন রোধের কাজ চলছে।”
ফুলহারের জল ঢুকে পড়ায় ইতিমধ্যেই হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ও রতুয়া-১ ব্লকের অসংরক্ষিত এলাকার ৮টি গ্রামের মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। রতুয়ার রামায়ণপুর থেকে ২০টি পরিবার অন্যত্র সরে গিয়েছেন। রতুয়ার দেবীপুর ও হরিশ্চন্দ্রপুরের মিহাহাটে বাঁধ ভাঙার আশঙ্কায় আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারাও। রতুয়ায় স্পার ভেঙে পড়ায় মঙ্গলবার বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় সেচ কর্তাদের। চাঁচলের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত বলেছেন, “মাটি নরম হওয়ায় রতুয়ায় স্পার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পুলিশ মোতায়েন রেখে জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলছে। দুই ব্লকের বিডিওকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।”
এদিকে, বিপদ আশঙ্কা করে এ দিন তিস্তার মতিয়ার চর, গুয়াবাড়ি চর এলাকা থেকে জলবন্দিদের উদ্ধারের কাজে নামে ময়নাগুড়ি ব্লক প্রশাসন। ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে ময়নাগুড়ির পদমতি এলাকা, বর্মনপাড়া, সরকারপাড়া, চাতরারপাড়, বেতগাড়া এবং রামসাই এলাকায়। ময়নাগুড়ির যুগ্ম বিডিও রাজীব দত্ত চৌধুরী বলেন, “অন্তত আটশো জন মানুষ ওই শিবিরগুলিতে আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়াও অনেকে নদী বাঁধে তাঁবুর তলায় আশ্রয় নিয়েছেন। মতিয়ারচর এলাকার বাসিন্দাদের উদ্ধারের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।” শনিবার রাত থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পরে এ দিন বিকেলে নাগরাকাটার খয়েরকাটা গ্রামের সঙ্গে নতুন সেতু তৈরি হয়।
ভাঙনে জেরবার ডুয়ার্সের কালচিনি ব্লকের মেন্দাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের। গত দু’দিন ধরে মেন্দাবাড়ির পশ্চিম সাতালি গ্রামে বানিয়ার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বানিয়াপাড়া এলাকাও। আলিপুরদুয়ারের মহকুমাশাসক অমলকান্তি রায় জানান, নদী ভাঙনে কালচিনি, আলিপুরদুয়ার ১ ব্লক ও কুমারগ্রাম এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুমারগ্রামের হলদিবাড়ি এলাকায় সঙ্কোশ নদীর ভাঙনেও বেশ কিছু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। |