প্রতারণার অভিযোগ
মাটিগাড়ার বাসিন্দা অনুপ সাহা। পেশায় ছোট গাড়ির ব্যবসায়ী। সাতসকালে ঘুম থেকে উঠে অচেনা নম্বর থেকে একটি ‘এসএমএস’ পেয়ে ভেবেছিলেন জীবনটা হয়ত বদলে গেল। অনুপবাবু জীবনটা অবশ্য বদলেছে ঠিকই। তিনি ওই এসএমএসের মাধ্যমে প্রতারণা চক্রের হাতে পড়ে ২০ হাজার টাকা খুইয়েছেন। অনুপবাবুর পাওয়া এসএমএসে লেখা ছিল, ‘আপনি মোবাইল লাকিড্র-তে ৫ লক্ষ পাউন্ড এবং একটি বিএমডব্লিউ’ গাড়ি জিতেছেন।’ ক্রিকেট পাগল সায়ন বসু। শিলিগুড়ির একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র। সন্ধ্যার পড়ার ফাঁকে মোবাইলের এসএমএস পেয়ে কার্যত পাগল হয়ে যায় সায়ন। তাতে লেখা ছিল, ‘আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দর্শক ড্রতে আপনি ৭ নম্বর বিজেতা। আপনি জিতেছেন সাড়ে ৭ লক্ষ পাউন্ড’। সায়ন খুইয়েছেন ১২ হাজার টাকা। দু’টি ক্ষেত্রে মোবাইল গ্রাহকদের নাম, টেলিফোন নম্বর, বয়স, ঠিকানা, ইমেল একটি নির্দিষ্ট ইমেলে জানাতে বলা হয়। সেখানে তা পাঠানোর কিছুদিন পর ট্যাক্স সংক্রান্ত নানা জটিলতা এবং টাকা হস্তান্তরের জন্য ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বর জানতে চাওয়া হয়। অনুপবাবুর ক্ষেত্রে প্রসেসিং ফি বলে ২০ হাজার টাকা একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করিয়ে এবং সায়নের ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং-এর পাসওয়ার্ড হাতিয়ে ১২ হাজার টাকা গায়েব করে দেয় প্রতারক চক্রটি। পুলিশকে অবশ্য অভিযোগ জানাননি তাঁরা। ঘনিষ্ঠ মহলে ঘটনাটি জানিয়ে বোকামির জন্য লজ্জা পেয়ে চুপচাপ হয়ে গিয়েছেন। শুধু সায়ন বা অনুপবাবু নয়, রোজ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দারা এই ধরণের এসএমএস চক্রের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন। অনেকে পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছেন, অনেকে ই মেল বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে এলাকা বার করে পুলিশকে অনুরোধ করছেন টাকা উদ্ধারের জন্য সঙ্গে যেতে। বেশিরভাগই অবশ্য নিজের বোকামির কথা ভেবে চুপচাপ হয়ে যাচ্ছেন। উত্তরবঙ্গের ধূপগুড়ি, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, বালুরঘাট, ইসলামপুর দার্জিলিং শহরে টাকা লুঠের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, বছর খানেক আগে উত্তরবঙ্গ জুড়ে এমন খবরের পর পুলিশ কর্তারা বিভিন্ন মোবাইল সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে এই ধরণের এসএমএস বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। রাজ্য পুলিশের সিআইডি-র অফিসারেরাও তদন্ত শুরু করেন। এতদিন চুপচাপ থাকার পর ফের এসএমএস প্রতারক চক্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। রাজ্য পুলিশের দার্জিলিং রেঞ্জের ডিআইজি আনন্দ কুমার বলেন, ‘এসএমএস চক্রের ফাঁদে পড়ে বহু মানুষ টাকা হারান। আমরা বছর খানেক আগে উদ্যোগী হয়ে মোবাইল সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক করি। তার পরে তা অনেকটাই বন্ধ হয়েছিল বলে জানি। নতুন করে চক্রটি সক্রিয় হওয়ায় বিষয়টি দেখা হচ্ছে। মোবাই সংস্থাগুলির সঙ্গেও কথা বলা হবে।” একটি বেসরকারি মোবাইল সংস্থার কয়েকজন উচ্চ পদস্থ আধিকারিক জানান, মূলত বিভিন্ন কলসেন্টার সংস্থার মাধ্যমে প্রতারক চক্রের সদস্যরা মোবাইল নম্বরের ‘ডেটাবেস’ সংগ্রহ করে। তার পরে বাছাই করে গ্রাহকদের ওই ধরণের টোপ দেওয়া হয়। দেশের অন্যপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে মোবাইলে বা ইন্টারনেটে এসএমএস পাঠিয়ে গ্রাহকদের প্রলোভন দেখানো হয়। তার পরে গ্রাহকদের কাছ থেকে সুকৌশলে ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং-এর পাসওয়ার্ড হাতিয়ে টাকা লুঠ হয়। পাশাপাশি, কিছু গ্রাহকের বোকামির সুযোগে সরাসরি টাকা বিভিন্ন ভুয়ো নামে খোলা অ্যাকাউন্টে জমা করিয়ে তা তুলে নেওয়া হয়। বিদেশের পাশাপাশি দিল্লি, মুম্বই, হায়দরবাদ থেকে চক্রের লোকজন গোটা প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করে। তার পরে অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে পালায়। সিআইডির কয়েকজন অফিসার জানান, এর মোবাইল সংস্থাগুলি এসএমএসের ‘ফিল্টারিং’ সিস্টেমের উপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি, গ্রাহকদের ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ অপশন মোবাইল সংস্থার মাধ্যমে এসএসএমের মাধ্যমে সক্রিয় করা। কারণ, তদন্তে দেখা গিয়েছে চক্রটি দেশে নয়, বিদেশেও সক্রিয়। সেখান থেকে ইমেল যোগাযোগ করা হয়। অনেকক্ষেত্রে টাকা বিদেশের অ্যাকাউন্টেও ‘ট্রান্সফার’ করা হয়। ইতিমধ্যে বেসরকারি এবং রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের কাছেও এই প্রতারক চক্রের খবর পৌঁছেছে। ইতিমধ্যে গ্রাহকদের এসএমএস করে তাঁরাও সচেতনতা বাড়ানোর কাজ শুরু করেছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.