গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের বিরোধিতা করে ডাকা বাংলা বন্ধে আংশিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল শিলিগুড়িতে। বুধবারের ওই বন্ধে অন্য কোনও জেলাতে সেরকম প্রভাব পড়েনি। শিলিগুড়ি শহরে বেসরকারি বাস চলেনি। শহরের প্রধান দুই সড়ক হিলকার্ট রোড, সেবক রোড এবং বিধান মার্কেটের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। অন্যদিকে, শহর সংলগ্ন নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি, নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন সংলগ্ন এলাকা স্বাভাবিক ছিল। শহরে বেশ কিছু সরকারি বাস ও সিটি অটো চলাচল করেছে। পুরসভা, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর, এসজিডেএ, মহকুমাশাসকের দফতর সহ সমস্ত সরকারি অফিসে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। সকালের দিকে হাসমিচকে পিকেটিং করার অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে বিধান রোড থেকে বাংলা ভাষা ও ভাষা বাঁচাও কমিটির নেতা মুকুন্দ মজুমদার সহ আরও ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বাংলা ভাষা ও ভাষা বাঁচাও কমিটির নেতা মুকুন্দবাবু বন্ধ সফল বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “বাংলা ভাগের চক্রান্ত মানুষ মেনে নেবে না। এদিনের বন্ধে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন সাধারণ মানুষ।” এদিন তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাসে বাসের সংখ্যা কম ছিল। ফলে সাধারণ মানুষকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাস ধরতে হয়। এনজেপি স্টেশন থেকে অবশ্য শিলিগুড়ি যাতায়াতের সিটি অটো পাওয়া যাচ্ছিল। তবে সংখ্যাটা অন্য দিনের তুলনায় কম। সরকারি অফিসগুলির মতো স্কুল ও কলেজ খোলা ছিল শিলিগুড়িতে। শিলিগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “পুরসভায় অন্যদিনের মতো কাজকর্ম হয়েছে। কর্মীদের হাজিরা স্বাভাবিক ছিল। আমরা সমস্তরকম পরিষেবা দিয়েছি।” শিলিগুড়ি গার্লস হাইস্কুলের পরিচালন কমিটি সম্পাদক জয়ন্ত কর বলেন, “ছাত্রী সংখ্যা একটু কম ছিল। যানবাহন স্বাভাবিক না থাকায় হয়ত সমস্যা হয়েছে। তবে শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা সকলেই স্কুলে উপস্থিত ছিলেন।” কোচবিহার শহরের দোকানপাট, বাজার বনধ থাকলেও অফিস, আদালত স্বাভাবিক ছিল। অধিকাংশ স্কুল, কলেজ খোলা ছিল। সরকারি বাস চললেও বেসরকারি বাস রাস্তায় খুব কম দেখা গিয়েছে। তুফানগঞ্জ, দিনহাটা, মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জে অবশ্য দোকান খোলা ছিল। সরকারী বাস চলেছে। বেসরকারি বাসের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম ছিল। ট্রেন চলাচল সর্বত্র ছিল স্বাভাবিক। এনবিএসটিসির পরিচালন বোর্ডের সদস্য আবদুল জলিল আহমেদ বলেন, “বিভিন্ন রুটে ৫০টি অতিরিক্ত বাস চালানো হয়।” আলিপুরদুয়ার শহরে দোকানপাট বনধ থাকলেও যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। জলপাইগুড়িতে কিছু বেসরকারি বাস বন্ধ ছিল। দোকানপাট সহ অফিস, আদালত খোলা ছিল। ডুয়ার্সে বেসরকারি বাস কম চলাচল করেছে। মালবাজার শহরেই মহকুমাশাসকের দফতর গড়ে তোলার দাবিতে এদিন পুর এলাকায় ধর্মঘট পালিত হল। সংগঠনের সম্পাদক পুলিন গোলদার বলেন, “মহকুমাশাসক বাসিন্দাদের কথা গুরুত্ব না দিয়ে দফতর শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।” মালবাজারের পুরপ্রধান সুপ্রতিম সরকার ওই ধর্মঘটকে সমর্থন করেননি। তিনি বলেন, “আমরাও চাই পুর এলাকাতেই সমস্ত সরকারি দফতর গড়ে উঠুক। সে বিষয়ে আমরা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর কাছ থেকে স্পষ্ট আশ্বাসও পেয়ে গিয়েছি।” |