জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ উদ্বোধন নিয়ে ফের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি উত্তরবঙ্গে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, ১ সেপ্টেম্বর অস্থায়ী ভবনে জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ চালু হয়ে যাবে। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের ফুল বেঞ্চ মঙ্গলবার জানিয়ে দিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই সার্কিট বেঞ্চ চালু করা সম্ভব নয়। যথাযথ পরিকাঠামো গড়ে না-তোলা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও আলোচনারই অবকাশ নেই।
১২ জুলাই রাজ্যের আইন ও বিচার মন্ত্রী মলয় ঘটক কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানান, মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ চালু করতে চান। তাঁর অনুরোধ, এই বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সম্মতি আদায়ের জন্য কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী উদ্যোগী হোন। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ছাড়া সার্কিট বেঞ্চ চালু করা যায় না। সার্কিট বেঞ্চের পরিকাঠামোর কিছু কাজ বাকি। তবে অস্থায়ী সার্কিট বেঞ্চ চালু করার আগেই তা শেষ হয়ে যাবে। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে প্রথমে ১ সেপ্টেম্বর ওই সার্কিট বেঞ্চ চালু করা হবে বলে ঘোষণা করেন। স্থায়ী সার্কিট বেঞ্চ ভবনের শিলান্যাস ওই দিনই করা হবে বলেও প্রশাসনিক স্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীকে লেখা চিঠির প্রতিলিপি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছেও পাঠিয়েছিলেন মলয়বাবু। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই মঙ্গলবার ফুল বেঞ্চের বৈঠক হয়। প্রধান বিচারপতির সচিবালয় সূত্রের খবর, সার্কিট বেঞ্চ চালু করার দিন ধার্য করার নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য প্রথমে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রককে চিঠি লিখবে রাজ্য সরকার ও হাইকোর্ট। সার্কিট বেঞ্চের জন্য সর্বস্তরের পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে কি না, কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক তা খতিয়ে দেখবে। সন্তুষ্ট হলে তবেই আইন মন্ত্রক তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠাবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরেই অস্থায়ী ভবনে সার্কিট বেঞ্চের কাজ শুরুর দিনক্ষণ স্থির হবে।
হাইকোর্ট সূত্রের খবর, ২০১০ সালে জুলাইয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারতি এস এস নিজ্জর জলপাইগুড়ি পরিদর্শনে যান। প্রধান বিচারপতির মতামত জেনে ১০ জুলাই তৎকালীন ভূমিসচিব একটি রিপোর্ট দেন মুখ্যসচিবকে। সেই রিপোর্টে তিনি জানান, স্থায়ী হাইকোর্ট ভবন তৈরির জন্য ৪০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পরেই অস্থায়ী ভবনে সার্কিট বেঞ্চের কাজ শুরু করা যাবে। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জানান, ওই জমি জাতীয় সড়ক থেকে অনেক নিচু। তাই জমি উঁচু করে জাতীয় সড়কের সমতলে আনতে হবে। বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সার্কিট বেঞ্চের নকশা তৈরি করতে হবে কলকাতা হাইকোর্টের আদলে। তার পরে নির্মাণকাজের জন্য টাকার সংস্থান করতে হবে। প্রাচীর দিতে হবে জমির চার পাশে। এই সব শেষ করে নির্মাণকাজ শুরু হলে তবেই কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের কাছে অস্থায়ী ভবনে সার্কিট বেঞ্চ চালু করার জন্য আবেদন করা যাবে।
২০১০ সালের এই রিপোর্টের দু’বছর পরেও স্থায়ী ভবনের ৪০ একর জমির উন্নয়নের জন্য কিছুই করা হয়নি বলে হাইকোর্ট সূত্রের খবর। ওই সূত্রে বলা হয়, সার্কিট বেঞ্চের বাড়ির নকশা অনুমোদিত হয়নি। জমি উঁচু করা হয়নি। মাটি ফেলে উঁচু করার পরে সেখানে নির্মাণকাজ শুরু করতে হলে অন্তত দু’টি বর্ষা অপেক্ষা করতে হয়। মাটি না-বসলে নির্মাণকাজ শুরু করা যায় না।
হাইকোর্ট সূত্রে বলা হয়, আরও সমস্যা আছে। অস্থায়ী ভবনে সার্কিট বেঞ্চ চালু করতে হলে অন্তত ৭৫ জন কর্মীকে নিয়োগ করতে হবে। সেখানে এখনও পর্যন্ত মাত্র ১২ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট থেকে অনেককে বদলি করতে হবে। সেটা সময়সাপেক্ষ। উত্তরবঙ্গের ছ’টি জেলার যে-সব মামলা কলকাতা হাইকোর্টে জমে আছে, তা জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে পাঠাতে হবে। এ-সব কাজের কোনওটাই শুরু করা যায়নি। এই অবস্থায় স্থায়ী ভবনের শিলান্যাস করা সম্ভব হলেও নির্মাণকাজ শুরু করা যে অসম্ভব, ফুল বেঞ্চ তা প্রধান বিচারপতিকে জানিয়ে দিয়েছে। আর ওই নির্মাণকাজ শুরু না-হলে অস্থায়ী ভবনে সার্কিট বেঞ্চের কাজও শুরু করা যাবে না বলে হাইকোর্ট সূত্রে জানানো হয়েছে।
কলকাতা হাইকোর্টের ফুল বেঞ্চের বৈঠকের পরে জলপাইগুড়ির সার্কিট বেঞ্চের ভবিষ্যৎ কি অনিশ্চিত হয়ে গেল না?
আইন ও বিচার মন্ত্রী মলয়বাবু বলেন, “সার্কিট বেঞ্চের ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত ১৯টি বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল হাইকোর্ট। সেই ১৯টি বিষয়েই আমরা নজর দিয়েছি। কাজ চলছে। সর্বস্তরের পরিবর্তন সম্পন্ন হলে আমরা হাইকোর্টকে বিষয়টি জানিয়ে দেব।” |