বৃষ্টিরেখা ঘুরলেও আশা দেখছে না হাওয়া অফিস
কাশজোড়া মেঘ দেখে আশায় বুক বাঁধছে দক্ষিণবঙ্গ। কিন্তু ততটা আশাবাদী হওয়ার কিছু দেখছে না হাওয়া অফিস।
মরসুমের সূচনা থেকে নিজের খামখেয়ালের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই মৌসুমি অক্ষরেখা হঠাৎ পাহাড়মুখী হয়ে পড়ায় দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা আরও কমে গিয়েছিল। অবশেষে সেই অক্ষরেখা পাহাড় থেকে নেমে আসছে নীচের দিকে। কিন্তু তাতেও দক্ষিণবঙ্গের বিশেষ কোনও আশা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন আবহবিদেরা। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিলেও আবহবিদদের ধারণা, তা বেশি দিন স্থায়ী হবে না। তাই জুলাইয়ে দক্ষিণবঙ্গের বৃষ্টি-ঘাটতি যে মিটবে না, বুধবার তাঁরা সেটা মোটামুটি পরিষ্কার করে দিয়েছেন।
অথচ দক্ষিণবঙ্গের কৃষকেরা জুলাইয়ের বৃষ্টির অপেক্ষাতেই বসে ছিলেন। এ দিন পর্যন্ত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে যা বৃষ্টি হয়েছে, তা এই সময়ের স্বাভাবিকের থেকে ৩১ শতাংশ কম। আর বৃষ্টির এই ঘাটতিই আবহবিদ এবং কৃষি দফতরের কর্তাদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে। কৃষি দফতরের এক কর্তার মন্তব্য, “উত্তরবঙ্গে ফসল নষ্ট হল অতিবৃষ্টিতে। আর দক্ষিণবঙ্গে অনেক জমিতে এখনও ধানের চারা রোয়া যায়নি। চারা পুঁততে গেলে মাঠে অন্তত চার আঙুল জল থাকতে হয়। অনেক জায়গাতেই তা পাওয়া যাচ্ছে না।”
কোথায় কত ঘাটতি
(১ জুন থেকে ১৮ জুলাই)
জেলা ঘাটতি*
দক্ষিণ ২৪ পরগনা ৪৯
নদিয়া ৪৯
উত্তর ২৪ পরগনা ৪৬
কলকাতা ৪০
হুগলি ৩৬
পূর্ব মেদিনীপুর ৩৫
দক্ষিণবঙ্গ সামগ্রিক ৩১
* (শতাংশ)
জুন থেকে জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের দুই অন্যতম প্রধান শস্য উৎপাদক জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং নদিয়ায় স্বাভাবিকের অর্ধেক বৃষ্টি হয়েছে। ওই দুই জেলার সঙ্গে অনাবৃষ্টির পরিস্থিতি চলছে উত্তর ২৪ পরগনাতেও। হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুরেও বৃষ্টির হাল খুব খারাপ। বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলে বৃষ্টি হলেও কৃষিপ্রধান এলাকাগুলিতে বৃষ্টি না-হওয়ায় মার খাচ্ছে চাষ। কৃষিপ্রধান জেলাগুলির থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে পুরুলিয়া, বাঁকুড়ায়। আবহাওয়ার এই বৈষম্যে কৃষিকর্তারা বিস্মিত।
গত কয়েক দিন উত্তরবঙ্গে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে বিক্ষিপ্ত ভাবে যে-বৃষ্টি হয়েছে, তাতে চাষ-আবাদের কোনও সুরাহা হয়নি। বুধবার দুপুর থেকেই দক্ষিণবঙ্গে আবহাওয়ার পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। কলকাতার কয়েকটি অঞ্চলে আকাশ কালো করে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিও নামে। আষাঢ়ে দক্ষিণবঙ্গ এ বার বৃষ্টি প্রায় পায়নি বললেই চলে। এ দিনের মেঘ দেখে আশায় বুক বাঁধছেন কৃষকেরা। আষাঢ়ের বৃষ্টি-ঘাটতি শ্রাবণে মিটে যাবে তো? কিন্তু হাওয়া অফিস তাঁদের তেমন আশ্বাস দিতে পারছে না।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “গত কয়েক দিনে মৌসুমি অক্ষরেখার অভিমুখ ছিল পাহাড়ের দিকে। সেই অক্ষরেখা অবশেষে নীচের দিকে নামতে শুরু করেছে। এর ফলে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির তীব্রতা বাড়বে।” তবে এই বৃষ্টি বেশি দিন স্থায়ী হবে না বলে জানিয়ে দেন গোকুলবাবু। তিনি বলেন, “ঘাটতি মেটাতে হলে স্থায়ী ভাবে যত বৃষ্টি দরকার, এই দফাতেও ততটা হবে না বলেই মনে হচ্ছে।”
তা হলে চাষের কী হবে?
অগস্টে বৃষ্টি কতটা হয়, তার উপরে নির্ভর করতে হবে কৃষকদের। রাজ্যের কৃষি অধিকর্তা পরিতোষ ভট্টাচার্য বলেন, “জুলাইয়ে এখনও পর্যন্ত ১২ শতাংশ ধান রোয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যতটা হওয়া উচিত, তার থেকে কম। আমরা এখনও আশা করছি, জুলাইয়ের বাকি দিনগুলিতে এবং অগস্টে ভাল বৃষ্টি হবে। তা হলে আমন চাষের কোনও ক্ষতি হবে না।”
আর যদি তখনও ভাল বৃষ্টি না-হয়? তার জন্য রাজ্য সরকার কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করে রাখছে কি?
কৃষি অধিকর্তা বলেন, “এখনও তেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। পরিস্থিতি সে-রকম হলে তখন ভাবা যাবে।” তবে কৃষি দফতরের অন্দরের খবর, ইতিমধ্যেই ধান, পাটের বিকল্প চাষ কী হতে পারে, তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.