কোথাও ভাঙচুর, কোথাও লাঠিচার্জ, কোথাও ঘেরাও। দিনভর অশান্তির সাক্ষী রইল রাজ্যের তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বুধবার সকালে টোকাটুকিতে বাধা পেয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ার দেভোগে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত সেন্ট্রাল প্লাস্টিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (সিপেট) কলেজে ভাঙচুর চালান এক দল পড়ুয়া। দুপুরে দূরশিক্ষায় খারাপ ফল করা ছাত্রদের বিক্ষোভ রুখতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে লাঠি চালাতে হয় পুলিশকে। বিএ পাস পাঠ্যক্রমে ভর্তির দাবিতে রাত পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখা হয় ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের।
দূরশিক্ষায় এমএ এবং এম কম পার্ট ১-এ অকৃতকার্য যে ছাত্রছাত্রীদের ফের পরীক্ষায় বসতে হবে, গত দু’দিন ধরেই তাঁরা পরীক্ষা পিছোনোর দাবিতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। তাঁদের বক্তব্য, বহু দেরি করে মাত্র কয়েক দিন আগে ফল বেরিয়েছে। এখনও তাঁরা মার্কশিট হাতে পাননি। কিন্তু ১৯ অগস্ট তাঁদের ফের পরীক্ষায় বসতে বলা হয়েছে। ফলে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় না মেলায় ফল খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ দিন দুপুরে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হাজারখানেক পরীক্ষার্থী দূরশিক্ষা দফতরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। কয়েক জন কর্মী ও আধিকারিক নিগৃহীত হন, এক জনকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। এর পরেই পুলিশ ও র্যাফ ঢুকে পড়ে। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, লাঠিচার্জে কয়েক জন ছাত্র আহত হয়েছেন। তা অস্বীকার করেও এসপি সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেছেন, “পুলিশকে বাধ্য হয়েই কিছুটা কড়া পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। না হলে বড় ধরনের গোলমাল বাধত।” তৃণমূল সমর্থিত বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাবন্ধু সমিতিও পুলিশের ভূমিকাকে সমর্থন করেছে। তবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দাবি, পুলিশ ‘বর্বর আচরণ’ করেছে। আলোচনাতে সমস্যা মেটানো যেত।
হলদিয়ার কলেজে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু হয়েছে শুক্রবার। প্রথমার্ধে পরীক্ষা চলাকালীন ‘কড়া নজরদারি’র অভিযোগ তুলে বেরিয়ে আসেন ছাত্রেরা। প্রশাসনিক ভবন, ক্যান্টিন, প্রেক্ষাগৃহে ভাঙচুর চলে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ছাত্রদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ঠিকঠাক ক্লাস হয় না। উল্টে পরীক্ষার সময়ে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে।
কলেজের প্রশাসনিক আধিকারিক মনোজ দাঁ অবশ্য তা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “ছাত্রেরাই ক্লাস ফাঁকি দিয়েছে। পরীক্ষায় নকল করতে বাধা পেয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের সঙ্গে মিলে তাণ্ডব চালিয়েছে।” কারও নামে অভিযোগ দায়ের করা না হলেও পরীক্ষার দিনগুলিতে কলেজে পুলিশ মোতায়েন হচ্ছে। বিএ পাস পাঠ্যক্রমে প্রথম বর্ষে সমস্ত আবেদনকারীকে ভর্তি নেওয়ার দাবিতে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে ঘেরাও বিক্ষোভ শুরু হয় দুপুর ৩টে থেকে। অধ্যক্ষ, শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী-সহ ৩৮ জনকে আটকে রাখেন টিএমসিপি সমর্থকেরা। গত বার ওই পাঠ্যক্রমে ৪৪০টি আসন ছিল, এ বার বেড়ে হয়েছে ৪৮৫।
কলেজের টিএমসিপি নেতাদের অভিযোগ, গত অক্টোবরে মুখ্যমন্ত্রী আসন বাড়ানোর আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। শ’তিনেক আবেদনকারী এখনও ভর্তি হতে পারেননি। তবে টিএমসিপি-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি লোকেশ কর বলেন, “এত ক্ষণ ঘেরাও করা ঠিক হয়নি। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আসন বাড়াতে অনুরোধ করেছি।” রাত ৯টা নাগাদ ঘেরাও ওঠে। |