দাবি মতো মুক্তিপণ পাওয়ার পরে অপহৃত শিশুকে ফিরিয়ে দিতে গিয়ে আরপিএফ এবং স্থানীয় লোকজনের হাতে ধরা পড়ল অপহরণকারী। তাকে জেরা করে হদিস মিলল মুক্তিপণের লক্ষাধিক টাকারও। ঘটনাটি পুরুলিয়ার সাঁওতালডিহি স্টেশনের। বুধবার সকালে সেখানে ধরা পড়ে পঙ্কজ রাজোয়াড় নামে ঝাড়খণ্ডের কাতরাস থানার লাকরা গ্রামের বাসিন্দা ওই দুষ্কৃতী। পরে আরপিএফ তাকে তুলে দেয় কাতরাস থানার পুলিশের হাতে। নিরাপদেই বাড়ি ফিরেছে অপহৃত পাঁচ বছরের পীযূষ পাসোয়ান। ধরা পড়েছে পঙ্কজের দুই আত্মীয়ও।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৪ জুলাই স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয় কাতরাস থানার মালখেরার বাসিন্দা রাজকমল পাসোয়ানের ছেলে পীযূষ। পরে অপহরণকারী ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের রেলকর্মী রাজকমলবাবুর কাছে। পরের দিনই কাতরাস থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন ওই রেলকর্মী। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও অপহরণকারীর দাবী মতো মুক্তিপণের টাকা দিতে সম্মত হন রাজকমলবাবু। আরপিএফ সূত্রের খবর, অপহরণের তিন দিনের মাথায় ওই দুষ্কৃতীকে কোনও একটি জায়গায় ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেন পীযূষের বাবা। |
ধৃত পঙ্কজ রাজোয়াড়। |
পীযূষ পাসোয়ান। |
|
আরপিএফের আদ্রা ডিভিশনের সিনিয়র সিকিউরিটি কমান্ডান্ট জ্যোতিকুমার সতিজা এ দিন জানান, মুক্তিপণের টাকা পাওয়ার পরেই পীযূষকে তার পরিবারের হাতে ফিরিয়ে দিতে রাজি হয় পঙ্কজ নামের ওই দুষ্কৃতী। স্থির হয়েছিল, আদ্রা-গোমো শাখার লয়াবাদ স্টেশনে পীযূষকে ফিরিয়ে দেবে পঙ্কজ। এ দিন আদ্রা থেকে পীযূষকে নিয়ে আদ্রা-খানুডি প্যাসেঞ্জার ট্রেনে চেপেছিল ওই দুষ্কৃতী। সিনিয়র সিকিউরিটি কমান্ডান্ট বলেন, “সাঁওতালডিহি স্টেশনে ওই কামরায় থাকা কয়েক জন রেলকর্মীর শিশুটিকে দেখে সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা পঙ্কজকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। হঠাৎই বাচ্চাটিকে ফেলে ট্রেন থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করে পঙ্কজ। স্টেশনে কর্তব্যরত আরপিএফ কর্মীরা তাকে ধাওয়া করে ধরে ফেলেন।” ওই রেলকর্মীরাই পীযূষকে তুলে দেন তার পরিবারের কাছে।
ওই দুষ্কৃতীকে ধরার খবর পাওয়ার পরেই এ দিন সাঁওতালডিহিতে পৌঁছন আরপিএফের ভোজুডি থানার ওসি অমিতাভ আনন্দ বর্ধন। তিনি বলেন, “জেরা শুরুর করার পরেই অপহরণের বিষয়ে সব কিছু স্বীকার করে নেয় পঙ্কজ। পরে তাকে নিয়ে গিয়ে সাঁওতালডিহি কদমদা সেতুর মাঝে রেললাইনের পাশে ঝোপ থেকে টাকার ব্যাগ উদ্ধার করা হয়।” অমিতাভ আনন্দের দাবি, “জেরায় ওই দুষ্কৃতী জানিয়েছে, মঙ্গলবার সাঁওতালডিহির অদূরে গোয়াই নদীর সেতুর কাছে রাজকমলবাবু তাকে মুক্তিপণের টাকা দিয়েছেন। অপহরণের পরে ওই শিশুটিকে সে রেখেছিল আদ্রার পাশে কাশীপুরে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে।” ধৃত পঙ্কজের কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকার মধ্যে ২ লক্ষ ১৮ হাজার ৮০০ টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছে আরপিএফ।
এ দিন দুপুরে কাতরাস থানার পুলিশ সাঁওতালডিহিতে এসে পঙ্কজকে তাদের হেফাজতে নেয়। পরে তাকে নিয়ে পুলিশ নিয়ে যায় কাশীপুরের রাজোয়াড় পাড়ায় তার সেই আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখান থেকে পঙ্কজের দুই আত্মীয় শান্তি রাজোয়াড় ও পবন রাজোয়াড়কে গ্রেফতার করে কাতরাস থানার পুলিশ। শান্তিদেবীর মেয়ে পারুল রাজোয়াড় অবশ্য এ দিন দাবি করেন, “রবিবার সকালে পঙ্কজ ওই শিশুটিকে নিয়ে এসে বলেছিল, তার বন্ধুর ছেলে। কয়েক দিন এখানে থাকবে। বাচ্চাটিকে যে ও অপহরণ করে এনেছে, সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানতাম না।” |