শিল্পের জন্য জমি দিতে আপত্তি নেই। কিন্তু আগে সরকার পুনর্বাসন, জমির দাম-সহ প্যাকেজ ঘোষণা করুক। তার পরে অধিগ্রহণ। গ্রামবাসীদের এই দাবিতে বুধবার ভেস্তে গেল পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে শিল্প-পার্কের জন্য জমি অধিগ্রহণের শুনানি। গ্রামবাসীরা তাতে যোগ না দিয়ে তাঁদের দাবিগুলি লিখিত ভাবে জেলার জমি অধিগ্রহণ দফতরের আধিকারিকদের মাধ্যমে জেলাশাসককে জানান।
রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মৌতোড়-মঙ্গলদা পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ২৪০০ একর জমিতে শিল্প পার্ক (২) নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছিল বাম সরকার। ২০০৭-’০৮ সাল থেকে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইতিমধ্যেই ৭৫০ একরের কিছু বেশি জমি অধিগ্রহণ করে রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমকে দেওয়া হয়েছে। নিগম ওই জমি দেবে এলাকায় শিল্প স্থাপনে আগ্রহী সংস্থাগুলিকে। মূলত ওই এলাকায় ইস্পাত কারখানা গড়তে আধুনিক শিল্প গোষ্ঠী এবং তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়তে ডিসেরগড় পাওয়ার সাপ্লাই কর্পোরেশন সরকারের কাছে জমি চেয়েছে। রাজ্যের নতুন সরকার শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, রঘুনাথপুরের এই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি অনেক আগেই জারি হওয়ায় জমি নেওয়ায় অসুবিধা নেই বলেই শিল্পোন্নয়ন নিগম সূত্রে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, মোটামুটি ৬টি শ্রেণিতে জমিকে ভাগ করে আগের ৭৫০ একর জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। ডাঙা (চাষ করা যায় না) জমির জন্য ডেসিমেল পিছু ১,৭০০ টাকা (অর্থাৎ এক একরের জন্য ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা), বহাল বা উর্বর জমির জন্য ডেসিমেল পিছু ৪,০০০ টাকা এবং এক ফসলি বাইদ ও কানালি জমির ক্ষেত্রে ৩২০০ টাকা প্রতি ডেসিমেল হিসাবে প্রশাসন টাকা দিয়েছে জমিদাতাদের। পুকুর হলে ৮ হাজার টাকা প্রতি ডেসিমেল, খামারের ক্ষেত্রে ১০ হাজার প্রতি ডেসিমেল এবং বাস্তুজমির ক্ষেত্রে ১৪ হাজার টাকা প্রতি ডেসিমেল সেই সময় ধার্য হয়েছিল। বর্তমানে বাকি প্রায় ১,৬৫০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ দিন তারই অঙ্গ হিসাবে মৌতোড়-মঙ্গলদা পঞ্চায়েত অফিসে জনশুনানি ছিল। ছিলেন শিল্প উন্নয়ন নিগমের স্থানীয় আধিকারিক লক্ষীকান্ত বেরা, পুরুলিয়া জেলা ভূমি অধিগ্রহণ দফতরের অতিরিক্ত আধিকারিক বিশ্বজিৎ বিশ্বাস।
আগের সরকার নির্ধারিত দামে আপত্তি রয়েছে ধানাড়ার বাসিন্দাদের। অধিগ্রহণের পদ্ধতি নিয়েও তাঁরা অসন্তুষ্ট। জানতে চান, অধিগ্রহণের পরে কত দিনের মধ্যে এলাকায় শিল্প হবে বা কারখানায় কত জনের কর্মসংস্থান হবে। গ্রামবাসী নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়, চণ্ডীদাস মাহাতো, বলরাম মাহাতোরা বলেন, “জমি দিতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বা পুনর্বাসন প্যাকেজের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি আগে জানাতে হবে।” স্থানীয় বাসিন্দা স্বপনকান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রকাশ মাহাতোরা আবার বলছেন, “অনেক জমিরই চরিত্র আগের থেকে বদলেছে। রুক্ষ জমিতেও ফসল ফলিয়ে অনেকে তাকে আবাদি করে তুলেছেন। ফলে প্রশাসনকে সরেজমিনে শ্রেণিচরিত্রের সমীক্ষা করে সেই অনুযায়ী দাম দিতে হবে।”
গ্রামবাসীদের লিখিত আপত্তি এখনও হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ। তাঁর কথায়, “আপত্তি থাকতেই পারে। তবে গ্রামবাসীরা তা শুনানিতে যোগ দিয়ে প্রশাসনকে জানালে পারতেন। জনশুনানি মানেই জমি সংক্রান্ত সমস্যাগুলি প্রশাসনকে জানাবেন জমির মালিক ও গ্রামবাসীরা। সেই সমস্যার সমাধান হবে আলোচনার মাধ্যমে।” তিনি জানান, জমির দাম বাড়ানোর সুযোগ জেলা প্রশাসনের রয়েছে। প্রশাসনও চায় জমিদাতারা উপযুক্ত দাম পান। শিল্পোন্নয়ন নিগমের স্থানীয় আধিকারিক লক্ষ্মীকান্তবাবুর বক্তব্য, “এলাকায় জমির কেনাবেচার দামকে ভিত্তি করে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুযায়ী জমির মূল্য স্থির করা হয়। পরে জেলাশাসক সেই দাম বাড়াতেও পারেন। ফলে, ধানাড়া গ্রামের বাসিন্দারা জমির উপযুক্ত মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন না।” |