বাঁকুড়া জেলা হাসপাতালের লাশকাটা ঘরে এখনও শোয়ানো রয়েছে এক যুবকের মৃতদেহ। এক-দু’মাস নয়, ১৬ মাস ধরে।
আর-দশটা মরদেহ শনাক্ত না-হলে তা সরকারের পক্ষ থেকেই সৎকার করে দেওয়া হয়। এটাই দস্তুর। কিন্তু এটা এমনই স্পর্শকাতর বিষয় যে, দুম করে মৃতদেহটি সৎকার করে দেওয়ার মতো সাহস দেখাচ্ছেন না কেউই। না পুলিশ, না হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ। কারণ, পুলিশের মতে, এটি রাজ্য পুলিশের ইনস্পেক্টর পার্থ বিশ্বাসের দেহ।
২০১০ সালের ১৮ অক্টোবর পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে যান পার্থ এবং তাঁর বন্ধু সৌম্যজিৎ বসু। পরের বছর ১১ মার্চ অযোধ্যা পাহাড় থেকেই মাটি খুঁড়ে দু’টি মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পার্থের বাবা-মা এবং সৌম্যজিতের মায়ের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ পরীক্ষা করে পুলিশ জানায়, দেহ দু’টি পার্থ ও সৌম্যজিতের। বেড়াতে গিয়ে মাওবাদীদের হাতে অপহৃত হন তাঁরা। শেষে দু’টি মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে তোলপাড় শুরু হয়। সৌম্যজিতের পরিবার ২০১১ সালের ১৮ মে বাঁকুড়ায় সেই দেহ শনাক্ত করে। ব্যান্ডেলে নিয়ে এসে সৎকার করা হয় দেহটি।
কিন্তু পার্থের স্ত্রী বর্ণালী মানতে চাননি, বাঁকুড়ার মর্গে রাখা ওই যুবকের দেহ তাঁর স্বামীর। ফলে তাঁরা সেই দেহ শনাক্ত করতেও যাননি। এখানেই বিভ্রান্তির শুরু। দ্বিতীয় বার ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আবেদন করেন বর্ণালী। পুলিশি সূত্রের খবর, সরকারি আইনজীবী মাস দেড়েক আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, একই ঘটনায় এ ভাবে দু’বার ডিএনএ পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। সে-কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বিশ্বাস পরিবারকেও। তার পরে দেড় মাস কেটে গেলেও সৎকার করা হয়নি দেহটির। এই বিষয়ে কোনও কিছুই বলতে চাননি পার্থের পরিবারের লোকজন।
তা হলে কী হবে দেহটির?
বাঁকুড়া হাসপাতালের সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু এ দিন বলেন, “দেহটি পুলিশ মর্গে ভাল ভাবেই রয়েছে। পুলিশ না-বলা পর্যন্ত আমাদের পক্ষে এই দেহ সৎকার করা সম্ভব নয়।” সৎকারের ব্যাপারে পুলিশের কাছ থেকে সবুজ সঙ্কেত পেলেই এসডিও-র কাছে লিখিত অনুমতি চাইবেন হাসপাতালের সুপার।
সাধারণত কোনও ‘বেওয়ারিশ’ দেহ থাকলে ১৫ দিনের মধ্যেই সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়। পুলিশ এখনও দেহটি সৎকার করতে বলছে না কেন?
বিভিন্ন সময়ে এই মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত অফিসারদের বক্তব্য, সাধারণত যে-মৃতদেহ কেউ দাবি করে না, হাসপাতালের তরফেই তার সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু স্পর্শকাতর এই ঘটনার ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিচ্ছে না হাসপাতালই। পুলিশের ঘাড়ে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
পুলিশকর্তাদের মতে, বিশেষ করে এই ঘটনার ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ নিয়ে সৎকার করা উচিত। নইলে সৎকারের পরে কখনও যদি সেই দেহ দাবির প্রশ্ন ওঠে, তা হলে নতুন করে জটিলতার সৃষ্টি হবে। |