দাবি পুলিশের
সৌম্যজিৎকে ‘চর’ সন্দেহে খুন, জেরায় বলছেন বিক্রম
‘পুলিশের চর’ মনে করেই মাওবাদীরা খুন করেছিল স্কুল শিক্ষক সৌম্যজিৎ বসুকে, ধৃত মাওবাদী শীর্ষ নেতা বিক্রমকে জেরা করে এই তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ। পাশাপাশি, তাঁকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, মাওবাদীরা চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে ‘স্পেশাল অ্যাকশন টিম’ (স্যাট) গড়েছে।
২০১০ সালের অক্টোবরে অযোধ্যা পাহাড়ে পুলিশ কর্মী পার্থ বিশ্বাসের সঙ্গে সৌম্যজিৎবাবুকে মাওবাদীরা অপহরণ করে খুন করেছিল। সেই সময় মাওবাদীদের রাজ্য কমিটির সদস্য বিক্রমও সেখানে ছিলেন বলে পুলিশ আগেই বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছিল। এ বার বিক্রমকে জেরা করে পুলিশ সে ব্যাপারে নিশ্চিত হল। সৌম্যজিৎকে কেন খুন করা হল, এত দিন এ নিয়ে তাঁর পরিবারের মতোই অনেকের প্রশ্ন ছিল। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বুধবার বলেন, “জেরায় বিক্রম জানিয়েছেন, সৌম্যজিৎকে তাঁদের পুলিশের চর বলে মনে হয়েছিল। সে কারণেই পার্থ বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে তাঁকেও মারার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”

বিক্রম
বিক্রম ওরফে অর্ণব দামকে জেরা করে পুলিশ এ-ও জানতে পেরেছে, ‘স্যাট’-এর সদস্যেরা এই মুর্হূতে ঘাটশিলায় রয়েছে। লিঙ্কম্যানদের কাছে নির্দিষ্ট খবর পেয়ে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে পালানোই তাদের কাজ। ‘স্যাট’-কে দিয়ে পুরুলিয়ায় পাল্টা আঘাত হানার ছক কষতে বিক্রম এক সময়ে মাওবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে এসেছিলেন। সেই সঙ্গে তাঁরই মস্তিক-প্রসূত ‘আদিবাসী মূলবাসী জনগণের কমিটি’কে ফের চাঙ্গা করে প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করার পরিকল্পনা ছিল।
কিন্তু মাঝের এই সময়ে পুলিশ যে তাদের অভিযানের পদ্ধতি বদলে ফেলেছে, তা সম্ভবত আঁচ করতে পারেননি এই মাওবাদী নেতা। পুলিশের দাবি, জেরায় বিক্রম তাদের জানিয়েছেন, মাওবাদীদের অযোধ্যা স্কোয়াড ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ায় কয়েক মাস ধরে অযোধ্যা পাহাড়ে যৌথবাহিনীর অভিযান অনেক কমে গিয়েছে বলে তাঁর কাছে খবর ছিল। সেই সুযোগেই শহিদ সপ্তাহের আগে (২৮ জুলাই-৩ অগস্ট) তিনি সংগঠন গোছাতে ও নাশকতার ছক তৈরি করতে পাহাড়ে এসেছিলেন। পুলিশকর্তারা বলছেন, আসলে যৌথবাহিনীর অভিযানে ‘ঢিল’ দেওয়াটা ছিল মাওবাদী নেতাদের ধরার ‘ফাঁদ’। সেই ‘ফাঁদেই’ পা দিয়েছেন বিক্রম। প্রকাশ্যে অভিযান কমানো হলেও বিভিন্ন ‘সোর্স’ মারফত মাওবাদীদের নেতাদের গতিবিধির খবরও নিচ্ছিল পুলিশ। সেই সূত্রেই তারা মঙ্গলবার বলরামপুরের বিরামডি স্টেশন থেকে বিক্রমকে ধরে।
রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহের দাবি, “মাওবাদীরাও যেমন কৌশল বদলাচ্ছে, আমরাও বদলাচ্ছি।” পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এন সুধীর কুমার বলেন, “বিক্রমকে জেরা করতে ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার পুলিশ কর্তারা আসছেন। ইতিমধ্যেই স্পেশাল টাস্ক ফোর্স এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা বিক্রমকে জেরা করতে পুরুলিয়ায় চলে এসেছেন।” কলকাতা, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশায় কারা মাওবাদীদের সাহায্য করেনবিক্রমকে জেরা করে পুলিশ সেটা জানারও চেষ্টা করছে।
বুধবার দুপুরেই রাজ্যের মাওবাদী প্রভাবিত তিন জেলার পুলিশ সুপার, সিআরপি এবং ঝাড়খণ্ড পুলিশের এক জরুরি বৈঠক হয়েছে মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে। বৈঠক শেষে ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা বলেন, “যৌথ অভিযান-সহ বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সমন্বয় রেখেই কাজ চলছে।” মাওবাদীরা কি নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে? তাঁর জবাব, “আমাদের কাছে কিছু খবর আসছে।” পুলিশ সূত্রে খবর, মূলত দু’টি বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। প্রথমত, মাওবাদী মোকাবিলায় আন্তঃরাজ্য যৌথ অভিযান কী ভাবে এগোবে এবং পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী এলাকায় অভিযানের ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ করা হবে। দ্বিতীয়ত, এই দুই রাজ্যের সীমানায় কী ধরনের অপরাধ বাড়ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.