ভরা বর্ষায় কাঠ পাচার
যেন কারও সর্বনাশ। কারও পৌষ মাস। বর্ষার মরসুমের শুরুতেই নদী ফুঁসে ওঠায় ইতিমধ্যে তিন দফায় বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্ভোগে পড়েছেন কোচবিহারের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। নদী ফুঁসে উঠতেই জলে কাঠ ভাসিয়ে পাচারের চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়। যার পোশাকি নাম ‘চালি পদ্ধতি’। সড়ক ও রেলপথের বদলে ওই চালি পদ্ধতিতেই প্রায় এক মাস ধরে কাঠ পাচারের রমরমা কারবার চলছে। ঘটনার কথা জানার পর বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন বলেন, “ওই কাঠ পাচার বন্ধে প্রয়োজনমত বিভিন্ন নদীতে নজরদারি চালানোর জন্য দফতরের কর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বক্সার জঙ্গল লাগোয়া নদীতে ‘স্পিডবোটে’ বনকর্মীরা নজরদারি শুরু হয়েছে। পুলিশের সঙ্গেও কথা হয়েছে।” পরিবেশ প্রেমী সংগঠন ও এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, মূলত কোচবিহার ও ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকাকে ঘাঁটি করে নদীর স্রোতকে কাজে লাগিয়ে কাঠ পাচারক চলছে। বক্সা, জলদাপাড়া, চিলাপাতা, নিমতি, দমনপুর প্রভৃতি জঙ্গল থেকে ঢিলেঢালা নজরদারির সুযোগে গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে। পরে তা বেআইনি করাতকলে তা কেটে নদীতে ভাসিয়ে পাচার করা হচ্ছে। কালজানি, সংকোশ, রায়ডাক নদীতে ওই কাঠ পাচারের প্রবণতা বেশি। একাধিকবার পাচার চক্রের হাতবদলও হয়। পরে তা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বাজারের পাশাপাশি সুযোগ বুঝে বাংলাদেশেও পাঠানো হয়। একই ভাবে কাঠ পাচারের রমরমা চলছে তিস্তা, তোর্সা, বামনি, গদাধর, ডায়না, জলঢাকা, মূর্তি প্রভৃতি নদীতেও একই কায়দায় কাঠ পাচারের প্রবণতা রয়েছে।
তোর্সায় কাঠ পাচার।—নিজস্ব চিত্র।
পরিবেশ প্রেমী সংস্থা ন্যাসের সম্পাদক অরূপ গুহ বলেন, “বর্ষার মরসুম শুরু হতেই বিভিন্ন নদীপথে বেআইনি কাঠ পাচারের কারবার বেড়ে গিয়েছে। বন দফতরের কর্মী সংখ্যা না বাড়ানো হলে ওই কারবার বন্ধ করা মুশকিল।” একইভাবে আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের চেয়ারম্যান অমল দত্ত বলেন, “নদীতে জল যত বাড়ে তত চালি পদ্ধতিতে কাঠ পাচার বেড়ে যায়। এবারেও তাই হচ্ছে।” পরিবেশপ্রেমীরা জানান, তোর্সা, বামনি, কালজানি নদী দিয়ে চিলাপাতা ও বক্সা ওয়েস্ট ডিভিসনের কাঠ পাচার হচ্ছে। রায়ডাক, সংকোশ ও গদাধর নদীপথে পাচার হচ্ছে বক্সা ইস্ট ডিভিসনের জঙ্গলের কাঠ। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাচার হওয়া কাঠের মধ্যে শাল, সেগুন, সিধা, জারুল প্রভৃতি রয়েছে। গত একমাসে শুধুমাত্র কোচবিহারের বিভিন্ন নদী থেকে প্রায় সত্তর ঘন মিটার কাঠ উদ্ধার করা হয়েছে। যার বাজার দর প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার বেশি। বক্সিরহাটের শালডাঙ্গা, ঘোনাপাড়া, ফেরসাবাড়ি নদীঘাট, রায়ডাক নদী ও চিলাখানা ও আমবাড়ি এলাকায় কালজানি ঘাটে বেশিরভাগ কাঠ উদ্ধার হয়েছে। কোচবিহারের এডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিভিন্ন নদীপথে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি।” এক বন কর্তার কথায়, গাড়ির চাকার টিউবের ওপর ভেলা, বাঁশ বসিয়ে ওই কাঠ বেঁধে দেওয়া হয়। অনেক সময় নৌকা নিয়ে কিংবা সাঁতারে পাচারচক্রের সদস্যরা নিজেরাও থাকেন। বিভিন্ন ঘাটে মোবাইল নিয়ে চক্রের সদস্যরা থাকেন। বনকর্মীদের দেখলেই চারদিকে খবর করা হয়। কাঠ নদীর কোনও প্রান্তে আটকে রাখার চেষ্টা করা হয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.