অক্লান্ত পরিশ্রম দুই কুনকির
সূর্য, ফুলমতিকে পুরস্কারের চিন্তা
ন্ত্রী ওদের জন্য গর্বিত। জেলা শাসক ওদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বন্যায় বিচ্ছিন্ন নাগরাকাটার খয়েরকাটা গ্রামের ছাত্র ছাত্রীদের পরীক্ষা থাকায় ওরাই সকলকে পিঠে চাপিয়ে প্লাবিত কুচি ডায়না নদী পার করে মঙ্গলবার স্কুলে পৌঁছে দিয়েছিল। বুধবার ওদের পিঠে চড়েই সদ্যোজাত কন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছান এতোয়ার ওঁরাও। এতোয়ারের কথায়, “মঙ্গলবার রাতে বাড়িতেই স্ত্রীর প্রসব হয়। বন্যায় গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। মেয়ে ও স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাব তা ভেবেই কুলকিনারা পাচ্ছিলাম না। তবে সকাল হতেই প্রশাসনের কর্তারা স্ত্রী কন্যা সমেত ওর পিঠে চাপিয়ে দিল। খুব সাবধানে নদী পার হল। নামার পর আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখলও।”
সূর্য ও ফুলমতি। বন দফতরের দুই কুনকি হাতিই এখন নাগরাকাটার বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার।’ শুধু ছাত্রছাত্রী বা অসুস্থদের পারাপারই নয়, কখনও দুর্গত মানুষদের গ্রাম থেকে উদ্ধার করে আনছে, কখনও ওষুধ, খাবার, চিকিৎসকদের পিঠে চাপিয়ে গ্রামে নিয়ে গিয়েছে। গত সোমবার বিকাল থেকে বুধবার পর্যন্ত অন্তত ২০ বার নদী পার হয়ে যাতায়াত করেছে হাতি দুটি।
গত সোমবার হঠাৎ তলব পড়ে সূর্য ও ফুলমতির। গরুমারা জাতীয় উদ্যান থেকে ট্রাকে চেপে নাগরাকাটা। সেখান থেকে পিঠে ওষুধ, শুকনো খাবারের প্যাকেট নিয়ে হেলেদুলে খরস্রোতা কুচি ডায়না নদী পার হয়ে বন্যা বিচ্ছিন্ন খয়েরকাটা গ্রামে পৌঁছায় ওরা। তারপর থেকে পারাপার চলছেই। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “কুনকি হাতি দুটি অসম্ভব পরিশ্রম করছে। বারবার ওদের নদী পাড় হয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অবাক বিষয় হল ওদের শরীরিভাবে কোনও ক্লান্তি দেখা যাচ্ছে না। ওরা দিব্যি আনন্দেই কাজ করছে। ওদের না পেলে খয়েরকাটায় ত্রাণের কাজে সমস্যা হত।”
বনমন্ত্রী হীতেন বর্মন আরও একধাপ এগিয়ে ওদের জন্য বিশেষ পুরস্কারের কথা ভাবছেন। বহু বছরের প্রথা ভেঙে চলতি বছরের বন্যপ্রানী সপ্তাহে সূর্য ও ফুলমতিকে বিশেষ পুরষ্কার দেওয়া যায় কি না তার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে বন দফতর। সাধারণত বন্যপ্রানী সপ্তাহে রাজ্যের সেরা বনকর্মীদের পুরষ্কার ও সন্মান দেওয়া হয়। এবারে বনকর্মীদের তালিকায় জুড়তে পারে সূর্য ও ফুলমতির নাম। আর খাতায় কলমে ওরা বন দফতরের কর্মী বলেই নথিবদ্ধ।
বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন মঙ্গলবার খয়েরকাটায় গিয়ে হাতি দুটিকে দেখে এসেছেন। তিনি বলেন, “ওদের জন্য গর্ব হচ্ছে। খুবই পরিশ্রম করছে হাতি দুটি। শুধু তাই নয়, পিচ্ছিল পাথর, খরস্রোতা নদী পাড় হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু ওদের দেখলাম খুব ধীরে ধীরে সাবধানে সবাইকে নিয়ে নদী পার হচ্ছে। ওদের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ আগামী বন্যপ্রানী উৎসবে ওদের জন্য বিশেষ পুরস্কারের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।”
১৯৯৫ সালে মেদিনীপুরে বুনো হাতিদের পালে ধরা পড়ে এক ছোট্ট হস্তিশাবক। তামিলনাড়ু থেকে মাহুত এনে হস্তিশাবকটিকে মানুষের ইঙ্গিত বোঝার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারপরেই পাঠিয়ে দেওয়া হয় গরুমারায়। সেই থেকে সূর্য গরুমারাতেই রয়েছে। আর ২০০৪ সালে অসম থেকে গরুমারা নিয়ে আসা হয় আরও একটি হস্তিশাবককে। নাম রাখা হয় ফুলমতিকে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.