নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
নিছক আত্মহত্যা নয়। বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে মহম্মদ অম্বর ওরফে ফৈজালকে। মঙ্গলবার রাতে পুলিশের কাছে এমনই অভিযোগ দায়ের করেছেন অম্বরের পরিজনেরা। গত রবিবার হাওড়ার বেলিলিয়াস পার্কের লেক থেকে উদ্ধার হয় অম্বরের দেহ। তাঁর পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, ঘটনার দিন অম্বরকে মোবাইলে ফোন করে ডেকেছিলেন ইয়াসমিন হাসান নামের এক মহিলা। এই অভিযোগ পাওয়ার পরে খুনের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত রবিবার দুপুর ২টো নাগাদ জোড়াসাঁকো থানার কলুটোলার জাকারিয়া স্ট্রিট থেকে ছ’জনের একটি দল বেলিলিয়াস পার্কে বেড়াতে যায়। ওই দলে অম্বর ছাড়াও ইয়াসমিন হাসান নামে ওই মহিলা, তাঁর দুই মেয়ে সাবেয়া ও রাবেয়া, সাবেয়ার বন্ধু নাসিম খান এবং সায়রা বেগম নামে এক মহিলা ছিলেন। পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ খবর আসে এক যুবক লেকে তলিয়ে গিয়েছে। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ ওই যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছিল, ওই পার্কের এক নিরাপত্তারক্ষী অম্বরকে জলে ঝাঁপ দিতে দেখেছিলেন। তাই প্রথম থেকেই ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ মনে করে তদন্ত করছিল পুলিশ। অম্বরের ভাই মহম্মদ সাহাবাজের দাবি, “অম্বর নিয়মিত কলেজ স্কোয়ারের একটা ক্লাবের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটত। তার পক্ষে জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করা সম্ভব নয়।”
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, অম্বরের বাড়ির পাশেই থাকেন ঘটনার মূল অভিযুক্ত ইয়াসমিন হাসান। তিনি বিবাহিত। তাঁর তিন মেয়ে ও দুই ছেলে আছে। অবিবাহিত অম্বরের সঙ্গে ওই মহিলার ঘনিষ্ঠতা দীর্ঘ দিনের। পুলিশ জানায়, আটক করার পরে ইয়াসমিন হাসান ও তাঁর সঙ্গী নাসিম খান অম্বরকে চিনতে অস্বীকার করেন। পরে জেরার মুখে তাঁরা জানান, তাঁরা অম্বরকে চেনেন। এখন অম্বরের পরিবারের প্রশ্ন, ইয়াসমিন ও নাসিম দু’বার দু’রকম কথা বলার পরেও পুলিশ তাঁদের ছেড়ে দিল কেন এবং ঘটনার দিন থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ার পরেই ওই মহিলা ও তাঁর সঙ্গীরা বেপাত্তা হয়ে গেলেন কেন?
মৃতদেহ উদ্ধারের পরে পুলিশ মৃতের পরিবারকে জানিয়েছিল, অম্বরের পকেট থেকে ১০ টাকা ছাড়া কিছুই মেলেনি। কিন্তু তা হলে অম্বরের মানিব্যাগ ও মোবাইল কোথায় গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অম্বরের পরিজনেরা। অম্বরের ভাই মহম্মদ সাহাবাজ পুলিশের কাছে অভিযোগে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন ইয়াসমিনই অম্বরকে মোবাইলে ফোন করে ক্যানিং স্ট্রিটে ডেকেছিলেন। বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে অম্বর মাকে সে কথা জানিয়েছিলেন।
কিন্তু কেন খুন করা হল অম্বরকে?
সাহাবাজের অভিযোগ, “ভাইকে দীর্ঘ দিন ধরে ব্ল্যাকমেল করছিলেন ইয়াসমিন। শেষে পরিকল্পিত ভাবে হাওড়ায় নিয়ে গিয়ে খুন করেন।” হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সদর) নিশাদ পারভেজ বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরে খুনের তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্ত মহিলার খোঁজে তল্লাশি চলছে।” |