গুড়াপ কাণ্ডে উদয়চাঁদের ‘ডান হাত’ শ্যামল গ্রেফতার
গুড়াপ-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত শ্যামল ঘোষকে বুধবার গভীর রাতে গ্রেফতার করল সিআইডি ও হুগলি জেলা পুলিশের একটি দল।
গুড়াপের ‘দুলাল স্মৃতি সংসদ’ নামে ওই বেসরকারি হোমের সম্পাদক উদয়চাঁদ কুমার ইতিপূর্বেই ধরা পড়েছেন। তাঁরই ‘ডান হাত’ হিসাবে শ্যামল ওই হোমে নানা অনৈতিক কাজে যুক্ত ছিলেন বলে তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। ওই হোমেরই আবাসিক গুড়িয়াকে ধর্ষণ করে খুনের যে অভিযোগ উঠেছে, তাতেও এই ব্যক্তি জড়িত বলে পুলিশের অনুমান। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বুধবার রাতে তদন্তকারী দলটি গুড়াপেরই খাজুরদহের ভবাণীপুর গ্রামে শ্যামলের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। সেখান থেকেই ধরা পড়েন শ্যামল। তাঁকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, রাতে সামান্য কিছু সময়ের জন্য বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার ভোরেই ভিনরাজ্যে পালানোর ছক কষেছিলেন।
এ দিকে, গুড়িয়ার ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ লিখে নিজেই সই করেছিলেন হোমের সম্পাদক উদয়চাঁদ বুধবার তিনি সে কথা কবুল করেছেন বলে দাবি করেছে সিআইডি। শুধু গুড়িয়া নন, এর আগেও ওই হোমের অনেক আবাসিকের ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ উদয়চাঁদের লেখা বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। তাঁদের দাবি, জেরায় উদয়চাঁদ জানিয়েছেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে চিকিৎসক কাঞ্চন মণ্ডলের নামাঙ্কিত প্যাডে লেখা সার্টিফিকেটগুলিতে ইচ্ছেমতো ‘রেজিস্ট্রেশন নম্বর’ বসিয়ে লিখে দিতেন তিনি। অনুমান করা হচ্ছে, কাঞ্চনবাবুকে অন্ধকারে রেখেই তাঁর নামে ওই প্যাড ছাপান উদয়চাঁদ।
১১ জুলাই গুড়িয়ার দেহ উদ্ধারের পরে কাঞ্চনবাবুকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ওই চিকিৎসক জানান, গুড়িয়ার ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ তিনি লেখেননি। তাঁর প্যাড চুরি এবং সই জাল হয়েছে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করেন কাঞ্চনবাবু।
হোমের আবাসিকেরা আগেই পুলিশকে জানিয়েছিলেন, অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করাতেন না হোম কর্তৃপক্ষ। সিআইডি-র দাবি, উদয়চাঁদকে জেরা করে তারা এক রকম নিশ্চিত, যে সব আবাসিক অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন, তাঁদেরও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি। সিআইডি-র অনুমান, অপুষ্টিজনিত কারণে কিছু আবাসিক মারা গিয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে অপুষ্টির বিষয়টি ধরা পড়ে গেলে হোম চালাতে অসুবিধায় পড়ার আশঙ্কায় অসুস্থ আবাসিকদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হত না।
মঙ্গলবার বর্ধমানের জামালপুরের তেলকুপি শ্মশানে খোঁড়াখুঁড়ি করে কিছু দেহাবশেষ পায় সিআইডি। এই মামলায় ধৃত হোমের অ্যাম্বুল্যান্স চালক সোমনাথ রায় এবং উদয়চাঁদের ‘ঘনিষ্ঠ’ কলমিস্ত্রি সন্দীপ দাসকে জেরা করে ওই হোমে ঠিক ক’জনের মৃত্যু হয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে। সিআইডি সূত্রের দাবি, ধৃতেরা তাদের জানিয়েছেন, প্রতিবার মৃতদেহ হোম থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় উদয়চাঁদ তাদের ‘আশ্বাস’ দিতেন, মৃতদেহ বৈধ ভাবেই পোঁতা হচ্ছে। মৃতদেহ পোঁতার পারিশ্রমিক বাবদ তাঁদের মাথাপিছু ১৫০ টাকা করে দিতেন উদয়চাঁদ।
তবে মঙ্গলবার উদ্ধার হওয়া দেহাবশেষগুলি শনাক্তকরণ এক প্রকার অসম্ভব বলে মনে করছেন সিআইডি-কর্তারা। সিআইডি-র এক কর্তা বলেন, “শনাক্তকরণের একমাত্র পথ ডিএনএ-পরীক্ষা। মৃতের কোনও আত্মীয়ের হদিস পাওয়া না গেলে ডিএনএ-পরীক্ষা করা অসম্ভব। ওই হোমে মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলারাই বেশি থাকতেন। তাঁদের আত্মীয়দের খোঁজ পাওয়ারও সম্ভাবনা কম।”
গুড়াপ-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে এ দিন আচমকা দক্ষিণ শহরতলির বারুইপুরের এক সরকারি বৃদ্ধাবাস পরিদর্শন করেন নারী ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। সেখানে খাবারের মান এবং চিকিৎসা-পরিষেবা নিয়ে মন্ত্রীর কাছে নানা অভিযোগ করেন আবাসিকেরা। মন্ত্রী পরে বলেন, “আবাসিকেরা নানা সমস্যা জানিয়েছেন। হোমের সুপারের সঙ্গে সব নিয়ে আলোচনা করব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.