বিয়ে করতে আসা ছেলে-মেয়ে দু’টিকে দেখে সন্দেহ হয় পুরোহিতের। সাদা পোশাকের পুলিশকে ইশারায় ডেকে পাঠান তিনি। পুলিশ জেরায় জানতে পারে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই বিয়ে করতে এসেছে তারা। রয়েছেন দুই ‘অভিভাবক’ও। এর পরেই স্থানীয় থানার হস্তক্ষেপে আটকে যায় বিয়ে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কালীঘাট মন্দির চত্বরের এই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন এক মহিলা-সহ দু’জন। কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ) দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ জানান, ধৃতদের নাম তারা দাস ও শিবশঙ্কর হরিদাস। বুধবার তাঁদের আলিপুর আদালতে হাজির করানো হলে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। |
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ কালীঘাট মন্দির এলাকায় টহলরত দুই পুলিশকর্মীকে ইশারায় ডাকেন এক পুরোহিত। একটু দূরে দাঁড়ানো বিয়ে করতে আসা দু’টি ছেলে-মেয়েকে দেখিয়ে বলেন, “দেখে মনে হচ্ছে, দু’জনেই নাবালক।” পুলিশকর্মীরা ওই তরুণ-তরুণী ও তাদের সঙ্গে আসা এক মহিলা ও এক পুরুষ সঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। জানা যায়, কিশোরীর বয়স ১৫ বছর, কিশোরের ১৭। এর পরেই ওই দুই ‘অভিভাবক’কে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই কিশোর-কিশোরীকে তুলে দেওয়া হয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে। পুলিশ জানায়, তারা দাস নামে ওই মহিলা কিশোরীর পিসি। শিবশঙ্কর প্রথমে নিজেকে ওই কিশোরের পড়শি বলে পরিচয় দিলেও কিশোরের পরিবারের কেউ তাঁকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতেই ওই কিশোর-কিশোরীর বাড়িতে খবর পাঠায় পুলিশ। তাদের পরিবারের লোকেরা বিয়ের বিষয়ে কিছু জানতেন না বলে জানায় পুলিশ। পুলিশ জেনেছে, ওই কিশোর-কিশোরী পরস্পরকে চিনত। কিশোরী প্রাথমিক স্কুলের পরে আর পড়াশোনা করেনি। কিশোরটি পড়েছে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। তাদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জেনেছে, বিয়েতে তাদেরও মত ছিল। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ওই কিশোর-কিশোরী প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় তাদের মত গ্রাহ্য হবে না। তাই বিয়েতে মদত দেওয়ার অভিযোগে অভিভাবকদের গ্রেফতার করা হয়েছে।”
বুধবার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে শিশুকল্যাণ সমিতির অফিসে ওই কিশোর-কিশোরীকে হাজির করানো হলে সমিতির সদস্যেরা তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের পৃথক দু’টি হোমে পাঠানো হয়। তাদের পরিজনেরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ওই কিশোরীর মা বলেন, “এটি আমার বড় মেয়ে। আমরা বারাসতে থাকি। মেয়ে নারকেলডাঙায় পিসির কাছে মানুষ হয়েছে। বিয়ের কথা ঘুণাক্ষরেও জানতাম না।” বেলেঘাটা এলাকার বাসিন্দা ওই কিশোরের পরিবারের লোকজনও বিয়ের কিছু জানতেন না বলে পুলিশকে জানিয়েছেন তাঁরা। কিশোরের বাবা বলেন, “শিবশঙ্করের সঙ্গে ছেলের কী ভাবে আলাপ, জানি না। মঙ্গলবার রাতে পুলিশের কাছে ঘটনাটি জানতে পারি।” |